রাজধানীর কাফরুলে সাত বছর আগে সামরিনা সুলতানা রুনা (৪০) নামে এক প্রতিবন্ধী নারীকে হত্যার দায়ে দুইজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন বিচারক।
সোমবার (১৪ মার্চ) ঢাকার ১ম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ফয়সল আতিক বিন কাদের এই রায় ঘোষণা করেন।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি হলেন-মো. জুলহাস এবং ডলি আক্তার। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি দুই আসামিকে ১০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন বিচারক। অনাদায়ে আরো দুই মাস কারাভোগ করতে হবে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে।
রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী মো.শাহাবুদ্দিন মিয়া রায়ের বিষয়টি ভোরের আকাশকে নিশ্চিত করেছেন।
উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে পলাতক রয়েছেন ডলি আক্তার। আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।
তবে রায় ঘোষণার আগে জুলহাসকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। পরে সাজা পরোয়ানা দিয়ে তাকে আবার কারাগারে পাঠানো হয়।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের ২০ ডিসেম্বর সামরিনা সুলতানা রুনাকে কাফরুল থানাধীন দক্ষিণ ইব্রাহিমপুরের বাসায় খুন করা হয়। এ ঘটনার পরদিন তার বড় বোন রোজিনা সুলতানা অজ্ঞাতনামা দুজনকে আসামি করে কাফরুল থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর প্রাথমিক তদন্ত করে জুলহাস ও ডলিকে গ্রেপ্তার করে কাফরুল থানার পুলিশ। তারা আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় মহানগর হাকিমের নিকট জবানবন্দি দেন।
মামলাটি তদন্ত করে ২০১৬ সালের ৪ নভেম্বর জুলহাস ও ডলিকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন ডিবি পল্লবী জোনাল টিমের উপপরিদর্শক মফিদুল ইসলাম আকন্দ। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ডলির ভাই জাকিরের (১৫) বিরুদ্ধে শিশু আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, জুলহাস ও ডলি গার্মেন্টসে চাকরি করত। সেখানে তাদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে তারা পরিবারের অনিচ্ছায় পালিয়ে যায়। ভাসানটেকে তারা স্বামী-স্ত্রী হিসেবে বসবাস শুরু করে। বিয়ের জন্য এক লাখ টাকা লাগবে। এ জন্য ডলিকে টাকার জন্য চাপ দেয় জুলহাস। টাকা দিতে না পারায় জুলহাস ডলিকে বলে তার কথা মতো চলতে হবে। ডলি তাতে রাজি হয়। পরে জুলহাস ডলিকে সামরিনা সুলতানা রুনার বাসায় নিয়ে যায়। দারোয়ান তাদের বাসায় ঢুকতে বাধা দেয়।
ডলি দারোয়ানকে বলে তার মা ৫ম তলায় কাজ করে। তারপরও দারোয়ান তাদের ঢুকতে দেয়নি। পরে সন্ধ্যার দিকে ডলি আবার বাসায় ঢোকার চেষ্টা করে। ডলি দারোয়ানের সাথে কথা বলার একপর্যায়ে জুলহাস বাসায় ঢুকে যায়। পরে তর্কাতর্কির একপর্যায়ে ডলি তার ভাই জাকিরকে নিয়ে ভিতরে চলে যায়। জাকির সিড়িতে দাঁড়ানো ছিল। প্রথমে রুনার বাসায় কাজের জন্য দরজা নক করে ডলি। রুনা না করে দেয়। পরে পানি খাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে ডলি। রুনা পানি আনতে গেলে তারা বাসায় ঢুকে পড়ে। এরপর রুনাকে ছুরি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে তারা।