টানা দুই ম্যাচে হার। অভিষেক ওয়ানডে বিশ্বকাপে মেয়েদের পথচলা ছিল ধূসর। তৃতীয় ম্যাচে এসে দেখা মিলল স্মরণীয় জয়ের। যে জয়ে ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশের মেয়েরা। ওয়ানডে বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারিয়ে প্রথমবারের জয়ের স্বাদ পেল নিগার সুলতানা ব্রিগেড।
মেয়েদের বিশ্বকাপের এই ম্যাচের আগে ওয়ানডেতে ১১ দেখায় পাকিস্তানের জয় ছিল ৬টি, বাংলাদেশের ৫টি। হ্যামিল্টনে ৯ রানের রোমাঞ্চকর জয়ে বাংলাদেশ এখন পরিসংখ্যানে সমানে-সমান। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টানা তৃতীয় জয়, তিনটিই দেশের বাইরে।
নিউজিল্যান্ডের সিডন পার্কে আগে ব্যাট করতে নেমে ৭ উইকেটে ২৩৪ রান করে বাংলাদেশ। যা মেয়েদের সর্বোচ্চ স্কোর। জবাবে শুরুটা ভালো করলেও শেষের দিকে বাংলার স্পিনারদের ঘূর্ণিতে দিশেহারা ছিল পাকিস্তানের ব্যাটাররা। নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২২৫ রান করে দলটি। বিশ্বকাপে চার ম্যাচেই হেরে পয়েন্ট তালিকায় সবার নিচে পাকিস্তান। তিন ম্যাচে দুই হার ও এক জয়ে তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে উঠে এসেছে বাংলাদেশ।
জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নেমে পাকিস্তানের শুরুটা ছিল বেশ। উদ্বোধনী জুটিতে ৯১ রান তোলেন নাহিদা ও সিদ্রা। ১৮৩ রানে নেই তিন উইকেট। জয়ের খুব কাছাকাছি যখন পাকিস্তান, তখনই বাংলাদেশের বোলারদের চমক। বুদ্ধিদীপ্ত অধিনায়কত্বে নিগার সুলতানা কাজে লাগান দুই লেগ স্পিনার রুমানা আহমেদ ও ফাহিমা খাতুনকে। ৫ রানের মধ্যে ৫ উইকেট নিয়ে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। সেই ধাক্কা আর সামাল দিতে পারেনি পাকিস্তান। পাকিস্তানের হয়ে সেঞ্চুরি করেন সিদ্রা রহমান।
বল হাতে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তিন উইকেট তুলে নেওয়া বাংলাদেশের ফাহিমা খাতুন জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে ফাহিমা বলেন, পাকিস্তানের বিপক্ষে বাড়তি তাড়না আর সব বিভাগে নিজেদের মেলে ধরার তাগিদের কথা।
তিনি বলেন, ‘আগেও বলেছি, এখনো বলছি পাকিস্তানের সঙ্গে শুধু আমার নয়, আমাদের দলের সব মেয়েদের খেলার জন্য এবং জেতার জন্য একটা ক্ষুধা থাকে। আমরা চেষ্টা করেছি। আমরা বলতাম যে, বোলাররাই আমাদের সব সময় জেতায়, ব্যাটাররা ওইভাবে অবদান রাখতে পারছে না। কিন্তু এবার বিশ্বকাপে ব্যাটাররা অবদান রাখছে, বোলাররা অনেক বেশি সাপোর্ট দিচ্ছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘পাকিস্তানের বিপক্ষে আজ আমাদের একটাই লক্ষ্য ছিল গত যে দুইটা ম্যাচ খেলেছি, অনেক ভালো খেলেছি। এই খেলাটাই, আমরা স্বাভাবিক ক্রিকেট খেলব। সাধারণ যে পরিকল্পনা আমাদের কোচিং স্টাফরা দিয়েছে, সেটা কেবল আমরা কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছি এবং আমরা সেটা করতে পেরেছি।’
ম্যাচের একপর্যায়ে ৮ উইকেট হাতে নিয়ে ৪৯ বলে স্রেফ ৫২ রান দরকার ছিল পাকিস্তানের। সেই সময় দ্রুত ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন ফাহিমা। কঠিন সময়ে বোলিংয়ে এলেও ভালো করার বিশ্বাস ফাহিমার।
তিনি বলেন, ‘আমার পরিকল্পনা ছিল ঠিক জায়গায় বল ফেলব। স্রেফ ডট বল নেব, উইকেট আসবে। রানের চাপ থাকলে ওরাই আমাদের উইকেট দেবে। কারণ ওভারপ্রতি প্রায় সাড়ে ৬ বা ৭ রান করে দরকার ছিল ওদের। আমার বিশ্বাস ছিল যে, আমার বলটা ওভার হিট করতে পারবে না। ব্লকহোলে করার চেষ্টা করেছি যাতে তুলে না মারে। কিছু বল বৈচিত্র্য আনতে ডাউন দ্য লেগ চলে গিয়েছিল। তবে তা কাটিয়ে উঠতে পেরেছি।’
প্রথম দুই ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকা ও নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে হেরে যায় বাংলাদেশ। আগামী ১৮ মার্চ নিজেদের চতুর্থ ম্যাচে বাংলাদেশের মেয়েরা মোকাবিলা করবে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে।