মিলনমেলা ভাঙার সময় এসে গেছে। শেষ সপ্তাহে গড়িয়েছে মেলা। শেষ সময়ে মেলায় আসছেন সব বয়সের মানুষ। আসছে শিশু-কিশোররাও। কেউ আসছেন বাবা-মা-ভাই-বোনদেন সঙ্গে। কেউ বন্ধুদের সঙ্গে। কেউ আসছে শিক্ষকদের সঙ্গে। গতকাল সোমবার মেলায় দেখা গেছে এসব সব ছেলেমেয়েদের। যারা শিক্ষকদের সঙ্গে মেলায় ঘুরতে এসেছিল। দিনটিতে ছিল না শিক্ষকদের কোনো শাসন-বারণ। দিনজুড়ে হাসি আনন্দে মেতে ছিল কচিকাঁচারা।
গতকাল মেলা প্রাঙ্গণে দেখা যায়, ইউনিফর্মধারী কিছু শিশু-কিশোর বইমেলায় ঘুরছে। তাদের কলকাকলীতে সরব হয়ে উঠেছে বইমেলা। দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত এসব কচিকাঁচাদের দখলে ছিল বইমেলা প্রাঙ্গণ। কাছে গিয়ে কথা বলে জানা গেল, দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে চার শতাধিক শিক্ষার্থী বইমেলায় এসেছে ঘুরে দেখার জন্য। করোনাকালীন বিনোদনের জন্য এসব শিশুকে কোথাও নিয়ে যাওয়া হয়নি। তাই শিশুদের চিন্তা-চেতনা এবং বিনোদনের বিষয়টি মাথায় রেখে বইমেলায় ঘুরতে নিয়ে এসেছে এসব স্কুল কর্তৃপক্ষ।
সোমবার ছিল মেলার ২৮তম দিন। বাচ্চাদের বইলেমায় নিয়ে আসার ব্যাপারে সহজপাঠ বিদ্যালয়ের শিক্ষাকর্মী পৌলমী দাশ গুপ্তের সঙ্গে কথা হয় ভোরের আকাশের।
তিনি বলেন, আমাদের স্কুল থেকে প্রতি বছর একটি দিনের জন্য ছাত্রছাত্রীদের বইমেলায় নিয়ে আসি। তিন বছর থেকে শুরু করে দশম শেনী পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের দুই ভাগে করে বইমেলায় নিয়ে আসছি। এখানে নিয়ে আসার উদ্দেশ্য হচ্ছে- সবাই মিলে বইমেলা ঘুরে দেখা। পাশাপাশি নিজে দেখে বই কেনা। নিজের পছন্দ করে বই কেনা। লেখকদের সঙ্গে পরিচিতি। বন্ধুদের সঙ্গে বই শেয়ার করা। এসব কারণেই মূলত বইমেলায় বাচ্চাদের নিয়ে আসা। আমরা মূলত বাচ্চাদের বই পড়ার জন্য দুইভাবে উৎসাহিত করি। প্রথমত, আমরা বাচ্চাদের আগ্রহের ওপর ছেড়ে দিই। তারা যেসব বই পছন্দ করে, সেগুলো তারা নিচ্ছে। আর যেসব বাচ্চারা বই পছন্দ করতে পারে না, তাদের জন্য আমরা শিক্ষকরা নির্বাচন করে দিই। বই পড়ার মাধ্যমে যাতে বাচ্চাদের চিন্তাশক্তি আর প্রসারিত হয়, সেজন্যাই আমরা চেষ্টা করি তাদের বইয়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার।
শিক্ষকরাও চাচ্ছেন তাদের শিশুরা যেন নতুন নতুন বই পড়ে। পাঠ্যবইয়ের বাইরে শিশুদের যেন অন্য বই পড়ার আগ্রহ বাড়ে, সেজন্যই বাচ্চাদের বইমেলায় নিয়ে আসছেন তারা। কাদের লেখা ভালো লাগে এবং কোন ধরনের বই পড়তে পছন্দ করে, এ ব্যাপারে কথা হয় সহজপাঠ স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী রূপকথা সাহার সঙ্গে।
জানতে চাইলে রূপকথা বলে, ঠিক দুই বছর পর বইমেলায় এসেছি। স্কুল থেকে আমাদের প্রতি বছর আনা হয়। এবার অনেকদিন পর এসে অনেক নতুন বই দেখছি মেলায়। আমি আজকে প্রকৃতি প্রকাশনী থেকে ‘তিন নভচারী’ বইটি কিনেছি। আমরা বন্ধুরা এক সঙ্গে পড়ব এমন কিছু বই খুঁজছি। তবে আমাদের বন্ধুদের পছন্দের লেখক হচ্ছে জাফর ইকবাল, হুমায়ূন আহমেদ। এবার বেশকিছু নতুন লেখকদের বই দেখলাম এসব বইও পড়ার ইচ্ছা আছে।
এদিকে মেলায় লেখক এবং প্রকাশকদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, বর্তমানে বাচ্চারা ডিভাইসমুখী হয়ে যাচ্ছে। তরুণ প্রজন্মের প্রচুর বই পড়া দরকার। নতুন কোনো কিছু উদ্ভাবন করতে হলেও বই পড়ার অভ্যাস প্রয়োজন। বাচ্চাদের বইয়ের প্রতি আগ্র বাড়ানোর জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো তাদের মেলায় নিয়ে আসার জন্য যে উদ্যোগ নিয়েছে, এ ব্যাপারটাকে অনেক লেখক সাধুবাদ জানিয়েছেন।