logo
আপডেট : ১৫ মার্চ, ২০২২ ১৮:৩২
‘কাজির গরু কেতাবে আছে, গোয়ালে নেই’
এইচ আর তুহিন, যশোর ব্যুরো




‘কাজির গরু কেতাবে আছে, গোয়ালে নেই’

জমিতে সেচ দেওয়া হচ্ছে

কথায় আছে ‘কাজির গরু কেতাবে আছে, গোয়ালে নেই’। ঠিক একইভাবে সরকার কর্তৃক মূল্য নির্ধারণ করা হলেও যশোরের ঝিকরগাছায় ইরি-বোরো চাষে কৃষকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছে সেচ ব্যবসায়ীরা।

জানা গেছে, উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় সেচের মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে কৃষি বিভাগ। অথচ কৃষকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছেন পাম্প মালিকরা। সরকার নির্ধারিত মূল্য কাগজে থাকলেও বাস্তবে তার প্রয়োগ নেই।

উপজেলা প্রশাসন বলছে, এ বিষয়ে প্রতিটি ইউনিয়নে মাইকিং করা হয়েছে। আর কৃষক ও পাম্প মালিকরা বলছেন- তারা কিছুই জানেন না।

ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় বিঘাপ্রতি সেচের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে গঙ্গানন্দপুর, শিমুলিয়া, গদখালী, পানিসারা ও নির্বাসখোলা ইউনিয়নে বৈদ্যুতিক অগভীর নলকূপে ১৫০০ থেকে ২১০০ টাকা, গভীর নলকূপের ক্ষেত্রে ১২০০-১৬০০ টাকা, মাগুরা, হাজিরবাগ, শংকরপুর ও পৌরসভায় অগভীর নলকূপে ১৬০০-২২০০ টাকা এবং গভীর নলকূপে ১৪০০-১৮০০ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।

আর ঝিকরগাছা সদর, বাঁকড়া ও নাভারণ ইউনিয়নে অগভীর নলকূপে ১৭০০-২৩০০ টাকা এবং গভীর নলকূপের ক্ষেত্রে ১৫০০-২০০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া এ মৌসুমে প্রতিবিঘায় ধান চাষে ডিজেলচালিত গভীর, অগভীর নলকূপ ও এলএলপি নলকূপের ক্ষেত্রেও সরকারিভাবে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। অথচ তা মানছেন না সেচ ব্যবসায়ীরা।

হাজিরবাগের সোনাকুর গ্রামের কৃষক লোকমান হুসাইন বলেন, ‘গভীর নলকূপ থেকে পানি নিয়ে এবারো প্রতিবিঘায় তিন হাজার টাকার বেশি দিতে হবে। সেচের মূল্য নির্ধারণের বিষয়ে কিছুই জানি না। বিষয়টির ব্যাপক প্রচার হওয়া উচিত।’

সেচ ব্যবসায়ী আব্দুল কুদ্দুস বিঘাপ্রতি তিন হাজার টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘উপজেলায় ট্রেনিং করে আসলাম, কিন্তু পানির দামের বিষয়ে তো কিছু বলল না। এ পর্যন্ত কোনো মাইকিংও শুনিনি।’

নাভারণ ইউনিয়নের কলাগাছি গ্রামের আব্দুল মালেক বলেন, ‘পানির দাম বিঘাপ্রতি সাড়ে চার হাজার টাকা দিতে হয়েছে।’
আবু তালেব বলেন, ‘ডিজেলচালিত অগভীর নলকূপের পানি নিয়ে বিঘায় ছয় হাজার টাকা দিতে হচ্ছে।’
উত্তর দেউলী গ্রামের উজ্জ্বল হোসেন বলেন, ‘আমি বিঘায় চার হাজার টাকা দিয়েছি।’

অগভীর মোটর মালিক আব্দুর রহিম বলেন, ‘সরকারিভাবে পানির মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়ার বিষয়টি জানা নেই। যেহেতু সরকার ভর্তুকি দেয়, আমিও চাই নির্ধারিত মূল্যে সবাই পানির দাম আদায় করুক।’

উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সেচ কমিটির সভাপতি মাহবুবুল হক বলেন, ‘সরকারিভাবে পানির দাম নির্ধারণ করা আছে। ইতোমধ্যে প্রতি ইউনিয়নে মাইকিং করা হয়েছে। অতিরিক্ত পানির দাম নেওয়ার অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

এদিকে সরকার নির্ধারিত সেচের মূল্য নিশ্চিত করতে গত সোমবার আবেদন করেছেন বেশি দামে পানি কেনা ভুক্তভোগী কৃষকরা। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সেচ কমিটির সভাপতি বরাবর কৃষকদের পক্ষে আবেদন করেন কলাগাছি গ্রামের আব্দুস সামাদ। আবেদনে কৃষকদের গণস্বাক্ষরও রয়েছে।