logo
আপডেট : ১৫ মার্চ, ২০২২ ২২:১৬
পূরণ হলো ব্যবসায়ীদের দাবি
ভ্যাট প্রত্যাহারের পর কত কমবে সয়াবিন তেলের দাম?
জুনায়েদ হোসাইন

ভ্যাট প্রত্যাহারের পর কত কমবে সয়াবিন তেলের দাম?

ভোজ্যতেল

ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার পরিশোধিত সয়াবিন তেল, অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেল আমদানি পর্যায়ের আরোপিত ১৫ শতাংশ ভ্যাট বা মূল্য সংযোজন কর (মূসক) থেকে ১০ শতাংশ কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। অর্থাৎ ভোজ্যতেল আমদানিতে এখন ৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হবে।

মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) অর্থমন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ দপ্তর জানিয়েছে, ‘পরিশোধিত সয়াবিন তেল, অপরিশোধিত সয়াবিন তেল, অপরিশোধিত পাম তেল ও পরিশোধিত পাম তেল -এর আমদানি পর্যায়ে ৫ (পাঁচ) শতাংশের অতিরিক্ত মূল্য সংযোজন কর হতে অব্যাহতি প্রদান কর হয়েছে। প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে এবং ইহা ৩০ জুন, ২০২২ পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।’

তথ্যমতে, ভোজ্যতেল আমদানি পর্যায়ে ১৫ শতাংশ ও ৫ শতাংশ আগাম কর (এটি), উৎপাদন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ ও ট্রেডিং বা ভোক্তা পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট রয়েছে।

গত সোমবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভোজ্যতেলের উৎপাদন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ এবং ভোক্তা পর্যায়ের ৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করেছিল। ফলে অস্থিতিশীল ভোজ্যতেলের বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যবসায়ীদের দাবির প্রায় ষোলকলা পূর্ণ হয়েছে। এবার দেখার বিষয় দাম কমবে কি না।

সম্প্রতি রাজধানীর নিত্যপণ্যের বাজারে একটি কথা প্রচার হয়েছিল, তেলের ভ্যাট প্রত্যাহার হলে প্রতি লিটারে দাম কমবে ৩০ টাকা পর্যন্ত।

এ বিষয়ে ভোজ্যতেল আমদানিকারক ও সরবরাহকারীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, বর্তমান আন্তর্জাতিক বাজারদর অনুযায়ী আমদানি পর্যায়ে ২২ টাকা ও স্থানীয় পর্যায়ে মূল্য সংযোজন (অ্যাডেড ভ্যালু) ওপর ৬ টাকাসহ মোট ২৮ টাকা ভ্যাট আসে প্রতি লিটারে। এখন ৫ শতাংশ ভ্যাট হিসেবে দেড় টাকার মতো কমে ২৭ টাকা হতে পারে।

এই মুহূর্তে সরকারের নির্ধারিত দাম অনুযায়ী, বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটারে সর্বোচ্চ মূল্য ১৬৮ টাকা, পাঁচ লিটারের বোতলের দাম ৭৯৫ টাকা। আর খোলা সয়াবিন লিটার প্রতি ১৪৩ টাকা।

সম্প্রতি বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের মূল্য বৃদ্ধি ও আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়া (৬ মার্চ থেকে) অভ্যন্তরীণ বাজারে হু-হু করে দাম বাড়তে থাকে। সরকার নির্ধারিত দামের বাইরে খোলা সয়াবিন তেলের লিটার কোথাও কোথাও ২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এতে অনেক দোকানি বোতলজাত সয়াবিন তেল ভেঙে খোলা তেল বিক্রি করেছে বলেও জানা গেছে।

আর বাজারে তৈরি হয় বোতলজাত সয়াবিনের সংকট। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের ভোক্তা অধিদপ্তর অভিযানে মাঠে নামে। জেল-জরিমানাসহ নানামুখী পদক্ষেপ নেয় সংস্থাটি। দফায় দফায় বৈঠক করে আমদানিকারক, প্রক্রিয়াজাতকারক, এসও (বিক্রয় আদেশ) ডিলার এবং পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে। এতে উঠে আসে আগামী তিন মাসের জন্য পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে ভোজ্যতেলের। বাজারে কৃত্রিমভাবে সংকট তৈরি করা হয়েছে। এর জন্য ব্যবসায়ীরা একে অপরকে দায়ী করে আসছে। আর এই অস্থিরতার সুযোগে বাজার থেকে হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি চক্র।

৯ মার্চ বাজার নিয়ন্ত্রণে ভোক্তা অধিদপ্তরে সব পক্ষের বৈঠক শেষে সরকারের অতিরিক্ত সচিব ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচএম সফিকুজ্জামান মিল মালিকদের ২৪ মার্চের মধ্যে সব বকেয়া (এসও) পরিশোধ করাসহ বাজারে তেল সরবরাহের নির্দেশ দেন। এছাড়া মিল গেট এলাকায় চাঁদাবাজি বন্ধে সংশ্লিষ্ট পুলিশ প্রশাসন ও জেলা প্রশাসনকে চিঠি দিয়ে অবহিত ও পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানান।

একইসঙ্গে দেশের বাইরে ভোজ্যতেল পাচার হওয়ার সত্যতা যাচাইয়ে বোর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) কে চিঠি দেয় সংস্থাটি। এ ছাড়া, মিল মালিকরা তেল সঠিকভাবে সরবরাহ করছে কিনা তা সরেজমিনে দেখার জন্য প্রতিনিধিদল পাঠান।

এর কয়েক দিন আগে চলমান পরিস্থিতির মধ্যে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের সব পক্ষ নিয়ে সভা করেন। সভায় সর্বসম্মতিতে ভোজ্যতেল আমদানির ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আগামী তিন মাস (জুন পর্যন্ত) প্রত্যাহারের প্রস্তাব করেন। যা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ এনবিআর এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে লিখিতভাবে জানায় এফবিসিসিআই।

পরবর্তীতে সরকারের ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে বিভিন্ন সিদ্ধান্তের পাশাপাশি ভোজ্যতেলের ওপর থেকে উৎপাদন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ ও ভোক্তা পর্যায়ে ৫ শতাংশসহ মোট ২০ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল। যা গত সোমবার এনবিআর প্রজ্ঞাপন জারি করে।

তবে ব্যবসায়ীদের দাবি পূরণ না হওয়ায় উৎপাদন ও ভোক্তা পর্যায়ের ২০ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার ভোজ্যতেলের বাজার স্থিতিশীল করতে তেমন প্রভাব ফেলবে না বলে জানান, এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। তিনি ভোরের আকাশকে বলেছিলেন, উৎপাদন পর্যায়ে যে ভ্যাট তা দিয়ে বাজারে তেমন প্রভাব পড়বে না। আমদানি পর্যায়ে প্রত্যাহার হলে তা বিশেষ ভূমিকা রাখবে।

এর একদিন পরই (গতকাল মঙ্গলবার) অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, আমদানি পর্যায়েও ভোজ্যতেলের ওপর থেকে ১০ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করা হবে। যা পরবর্তীতে প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করা হবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি ও এফবিসিসিআই-এর সাবেক সহ-সভাপতি হেলাল উদ্দিন ভোরের আকাশকে বলেন, ‘সবসময় বলে আসছি, অস্থিতিশীল বাজার নিয়ন্ত্রণে আন্তর্জাতিক বাজার বিবেচনায় আমদানি পর্যায়ে যে ভ্যাট রয়েছে, তা প্রত্যাহার করার জন্য। এজন্য এফবিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয়েছে। এখন তা বাস্তবায়ন হচ্ছে জেনে ভালো লাগছে। সরকারের এ সিদ্ধান্ত বাজার স্থিতিশীল রাখতে ভূমিকা রাখবে। আর একটি বিষয় বলবো, ব্যবসায়ীদের দুঃখ, কষ্ট একমাত্র প্রধানমন্ত্রী ভালো বোঝেন। তিনি উদ্যোগ নিয়েছেন বলেই, আমাদের দাবি পূরণ হয়েছে। এজন্য আমরা প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।