logo
আপডেট : ১৬ মার্চ, ২০২২ ১০:০৩
স্বাধীনতা পুরস্কার পাচ্ছেন প্রয়াত ছহিউদ্দিন
বেন ইয়ামিন মুক্ত, মেহেরপুর

স্বাধীনতা পুরস্কার পাচ্ছেন প্রয়াত ছহিউদ্দিন

১৯৭১ সালে বহরমপুরের বেতাই ক্যাম্পে প্রশিক্ষণার্থী মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশে ভাষণ দিচ্ছেন মোহাম্মদ ছহিউদ্দিন বিশ্বাস।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদান রেখেছিলেন মেহেরপুরের প্রয়াত মোহাম্মদ ছহিউদ্দিন বিশ্বাস। আর এই গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ স্বাধীনতা পুরস্কার পাচ্ছেন তিনি।

গত মঙ্গলবার(১৫ মার্চ) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। একই সঙ্গে বিজ্ঞপ্তিতে স্বাধীনতা পুরস্কার ক্যাটাগরিতে ছয়জনসহ মোট ১১টি পুরস্কারের তথ্য জানানো হয়।

এদিকে মেহেরপুর জেলা থেকে এ-ই প্রথম কোনো ব্যক্তি স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হলেন। এমন প্রাপ্তিতে খুশি জেলাবাসী। ১৯২৬ সালে তৎকালীন নদীয়া জেলার মেহেরপুর মহকুমার লালবাজার গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ছহিউদ্দিন বিশ্বাস। তার বাবার নাম ইয়াকুব হোসেন বিশ্বাস এবং মায়ের নাম মোছাম্মৎ ছামসুন নেসা।

১৯৬৬ সালে ছয় দফা আন্দোলনে ভূমিকা রাখেন ছহিউদ্দিন বিশ্বাস। ১৯৭০ সালের পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে জাতীয় পরিষদ সদস্য (এমএনএ) নির্বাচিত হন।

প্রয়াত মোহাম্মদ ছহিউদ্দিন বিশ্বাস

তিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। একই সঙ্গে ৮ নম্বর সেক্টরে ৩ নম্বর কোম্পানির রাজনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন। তিনি মুজিবনগরে গেরিলা শিবির ও অভ্যর্থনা শিবির প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করেন।

১৯৭৫ সালের সরকারে মেহেরপুরের গভর্নর ছিলেন ছহিউদ্দিন বিশ্বাস। ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তৎকালীন কুষ্টিয়া-৫ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।

পরে ১৯৮৬ সালের তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সম্মিলিত বিরোধী দলের হয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মেহেরপুর-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। মোহাম্মদ ছহিউদ্দিন বিশ্বাস ১৯৯০ সালের ২১ মার্চ প্রয়াত হন।

জানা গেছে, ছহিউদ্দিন বিশ্বাস মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা। ১৯৫১ সালে মেহেরপুর আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।

ব্যক্তিগত জীবনে চার ছেলে ও চার মেয়ের বাবা ছহিউদ্দিন বিশ্বাস। তিনি স্বাধীনতা পুরস্কার পাওয়ায় আনন্দিত তার পরিবারের সদস্যরা।

পরিবারের সদস্যদের প্রতিক্রিয়া

ছহিউদ্দিনের ছেলে জনপ্রসাশন প্রতিমন্ত্রী এবং মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফরহাদ হোসেন দোদুল বলেন, ‘বাবার স্বাধীনতা পুরস্কার প্রাপ্তি মেহেরপুরবাসীর বড় অর্জন। ফলে মেহেরপুর মুক্তিযুদ্ধের স্বীকৃতি পেল। বর্তমান সরকার ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কৃতজ্ঞতা জানাই।’

ছহিউদ্দিনের মেয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শামীম আরা হীরা বলেন, ‘বাবার এই প্রাপ্তিতে পরিবারের মধ্যে খুশির বন্যা বইছে। বাবার মতো আমরা সবাই বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সঙ্গে আছি। আজ বাবা তার সঠিক মূল্যায়ন পেয়েছেন। বর্তমান সরকারকে ধন্যবাদ জানাই।’

মরহুম ছহিউদ্দিন বিশ্বাসের কনিষ্ঠ সন্তান ও জেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সরফরাজ হোসেম মৃদুল বলেন, ‘এমন প্রাপ্তিতে আমরা পরিবারের সদস্যরা আনন্দে আপ্লুত।’

প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এ গর্ব শুধু আমাদের পরিবারের নয়- এ গর্ব মেহেরপুরবাসীর। তার রাজনৈতিক মতাদর্শে আমরা চলছি এবং চলব।’

কী বলছেন জেলার সুশীল ও রাজনৈতিক সমাজ 

মেহেরপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হক মন্টু বলেন, স্বাধীনতার সূতিকাগার মেহেরপুর মুজিবনগর। আর এই মুজিবনগরে স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন প্রয়াত ছহিউদ্দিন বিশ্বাস। তার এই অবদানকে মূল্যায়ন করেছে বর্তমান সরকার। মূলত গত ৫০ বছরে মেহেরপুরবাসীর জন্য শ্রেষ্ঠ উপহারগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম।’

বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক আবদুল্লাহ আল আমীন ধূমকেতু বলেন, ‘ছহিউদ্দিন ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর। এই এলাকার জনগোষ্ঠীকে একত্রিত করে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করানো ও প্রশিক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি। তাকে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করা মানে এই জনপদের মানুষকে মূল্যায়ন করা।’

মেহেরপুর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাফুয়ান উদ্দিন আহমেদ রূপক বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ত্যাগী নেতাদের সব সময় মূল্যায়ন করে। ১৯৭১ সালে আমার বাবা শাহবাজ উদ্দিন আহমেদ ও ছহিউদ্দিন বিশ্বাস একত্রে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করেছিলেন।
সেই সময়ে অনেক বাধার মুখে জীবনবাজি রেখে কাজ করেছিলেন তারা। সরকারের এই উপহারে খুশি মেহেরপুরের দলীয় নেতারা।’

জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মোখলেছুর রহমান খোকন বলেন, ‘আমরা তখন ছোট ছিলাম, ওই সময়ে দেখেছি ছহিউদ্দিন সাধারণ মানুষের পাশে রয়েছেন। মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগে তার অবদান ভোলার মতো না। এমন প্রাপ্তিতে সমৃদ্ধ হলো মেহেরপুর আওয়ামী লীগ।’

মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ খালেক দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, ‘এই পদক আরো আগে পাওয়া উচিত ছিল। এত বছর পর প্রয়াত ছহিউদ্দিনকে সম্মানিত করায় মেহেরপুরের রাজনীতিবিদরা খুশি।’