logo
আপডেট : ১৬ মার্চ, ২০২২ ১১:০৫
বইমেলা প্রতিদিন
করোনাকালীন ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার আশা প্রকাশকদের
ইফ্ফাত শরীফ

করোনাকালীন ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার আশা প্রকাশকদের

বড় পরিসর ও সময় বেশি পাওয়ায় করোনাকালীন ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার আশা করছেন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলো। ছবি- ভোরের আকাশ

ধীরে ধীরে বিদায়ের সুর বেজেছে অমর একুশে গ্রন্থমেলার। করোনার এক বছর কাটিয়ে এবারের গ্রন্থমেলা পূর্ণ মেয়াদের থেকেও বেশি দিন হচ্ছে। বড় পরিসর ও সময় বেশি পাওয়ায় করোনাকালীন ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার আশা করছেন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলো। করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করে পাঠক-দর্শনার্থীদের আগমনে সন্তুষ্ট প্রকাশকরা। তবে বিগত বছরের থেকে এ বছরের মেলাটা প্রকাশকদের কাছে মন্দের ভালো হিসেবে আখ্যায়িত হয়েছে। গত শুক্র ও শনিবার বই কেনেন এমন পাঠকের দেখা মিললেও সাধারণ দিনগুলোয় তেমন দেখা যায়নি।

শেষ সময়ে এসে বই কেনে এমন পাঠক বাড়বে- এ প্রত্যাশা এখনো করছেন অন্য প্রকাশ প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক সিরাজুল কবির চৌধুরী কমল। ভোরের আকাশকে তিনি বলেন, করোনায় প্রকাশকদের যে ক্ষতি হয়েছে, সেটা আগামী ১০ বছরেও পোষাবে কিনা, সন্দেহ। এ ক্ষতি আমরা মেনে নিয়েছি। প্রকাশকরা ‘ভাগ্যবান’। আমরা সরকার থেকে কোনো প্রণোদনা পাইনি, নিইনি বা আমাদের দেওয়া হয়নি। অথচ অন্যান্য সব সেক্টর এটা পেয়েছে। এবার এ ক্ষতি আমরা পোষাতে পারব কিনা, জানি না। তবে পাঠকরা যদি আমাদের সাপোর্ট করেন, তাহলে ঘুরে দাঁড়াতে পারব। শেষ সময়ে গ্রন্থমেলা উপলক্ষে পরিচিতদের বই উপহার দেওয়ার জন্য তালিকা ধরে ধরে বই কিনতে দেখা যাচ্ছে অনেককে। পাঠক-দর্শনার্থীদের কম এলেও যারা আসছেন, তাদের অধিকাংশই বই কিনছেন।

মেলায় আসেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ওয়াকার ইউনুস। ভোরের আকাশকে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন ধরনের বই খোঁজ নেওয়ার বড় সুযোগ থাকে মেলায়। কিছু বইয়ের তালিকা করে এনেছি। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোট ভাইদের পছন্দমতো বই কিনে উপহার দিচ্ছি। আমাদের সবার লক্ষ্য থাকা উচিত প্রতি বইমেলা উপলক্ষে কিছু বই উপহার দেওয়া। তাহলে কিছু পাঠক তৈরি হবে।’ পরিচিতদের বই উপহার দেওয়ার পাশাপাশি অনেকে বিভিন্ন গ্রন্থাগারে উপহার দেওয়ার জন্যও বই কিনছেন। গল্প, উপন্যাস, কবিতার পাশাপাশি বর্তমানে উঠতি বয়সের তরুণ-তরুণীদের থ্রিলার বইয়ের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে বলে মনে করছেন প্রকাশকরা।

তাম্রলিপি প্রকাশনীর প্রকাশক এ কে এম তারিকুল ইসলাম রনি ভোরের আকাশকে বলেন, “তরুণরা বর্তমানে থ্রিলার বইয়ের প্রতি বেশি ঝুঁকছে। বিশেষ করে কিশোরীরা যারা ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত তারা বেশি ভূতের গল্প, বিভিন্ন রোমাঞ্চকর বই ব্যাপকভাবে কিনছেন। আমাদের সাদমান সাঈদ চৌধুরীর ‘মনশ্চক্ষু’, মালিহা তাবাসসুমের ‘অ্যাকিলিসের টেন্ডন’ নামের মেডিক্যাল থ্রিলার বই বেশি বিক্রি হচ্ছে।” তবে এবার মেলার ২৯ দিনে মোট নতুন বই প্রকাশ হয়েছে ৩ হাজার ১২৪টি। এর মধ্যে কবিতার বই ৯৪০টি। এবারের মেলায় কবিতার বই সবার্ধিক। তারপর রয়েছে উপন্যাস এবং গল্পের বই। সব থেকে কম প্রকাশ হয়েছে নাটক, অভিধান, রম্য, ধর্মীয়, চিকিৎসা, রচনাবলি এবং রাজনীতি বিষয়ক বই।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, এবার মেলায় এখন পর্যন্ত গল্প ৪০৭টি, উপন্যাস ৪৪১, প্রবন্ধ ১৬৪, কবিতা ৯৪০, গবেষণা ৮৭, ছড়া ৫৫, শিশুতোষ ৭৭, জীবনী ৯৪, রচনাবলি ১২, মুক্তিযুদ্ধ ৯৩, নাটক ১৬, বিজ্ঞান ৪৫, ভ্রমণ ৪৯, ইতিহাস ৬১, রাজনীতি ২২, স্বাস্থ্যবিষয়ক ১৮, বঙ্গবন্ধু ৭৫, রম্য ১৩, ধর্মীয় ৩৫, অনুবাদ ৩৩, অভিধান ৮, সায়েন্স ফিকশন ৪৩ এবং অন্যান্য ২১৫টি বই প্রকাশ হয়েছে। এর আগে ২০২১ সালে ২ হাজার ৬৪০ এবং ২০২০ সালে ৪ হাজার ৯১৯টি বই প্রকাশ হয়েছিল।

প্রকাশকরা বলছেন, ‘অন্যবারের তুলনায় এবারে বই প্রকাশের সংখ্যা অনেক বেশি। তবে হিসাব করলে দেখা যায়, বিগত বছরের তুলনায় এবার নতুন বইয়ের সংখ্যা কিছুটা কম।’ এবার গ্রন্থমেলায় সোহরাওয়ার্দীর বড় পরিসর, সুন্দর ছিমছাম পরিবেশ। শুরু থেকেই মেলায় দর্শনার্থীর সংখ্যা একেবারে কম নয়। তবে অনেক প্রকাশকরা বলছেন, ফেব্রুয়ারির মেলা মার্চে গড়ানোয় পাঠক বা ক্রেতারা এটাকে গ্রহণ করতে পারেনি। শেষ সাত দিনে হুলুস্থুল বিক্রির যে রেওয়াজ থাকে মেলায়, এবার সেটা দেখা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে প্রকাশনা সংস্থাগুলো।