logo
আপডেট : ১৬ মার্চ, ২০২২ ১১:১৮
‘আমের রাজ্যে’ আম মঞ্জরি
তারেক মাহমুদ, রাজশাহী ব্যুরো

‘আমের রাজ্যে’ আম মঞ্জরি

রাজশাহী নগরীর মেহেরচণ্ডি এলাকার একটি আমের বাগানে প্রচুর মুকুল এসেছে

‘আমের রাজ্য’ রাজশাহীর বাতাসে এখন আমের মুকুলের মৌ মৌ গন্ধ। মধু মাসের আগমনী বার্তায় শোনা যাচ্ছে আম মঞ্জরি, যার পরিচর্যা নিয়ে ব্যস্ত এখন চাষিরা। তারা বাম্পার উৎপাদনের স্বপ্ন বুনছেন। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা এবার ছাড়িয়েছে আগের বছরকে। গাছের মুকুলও আভাস দিচ্ছে বাম্পার ফলনের।

রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের সূত্র মতে, চলতি মৌসুমে রাজশাহী জেলায় ১৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে আমের আবাদ হয়েছে, ফলনের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে দুই লাখ ১৭ হাজার টন। যার বাজার মূল্য প্রায় ৮৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা।

গত বছর ১৭ হাজার ৬৮৬ হেক্টর জমিতে আমের আবাদ হয়েছিল। হেক্টরপ্রতি গড় ফলন হয়েছে ১১ দশমিক ৯৬ টন। সম্ভাব্য মোট উৎপাদন হয়েছিল এক লাখ ৭৯ হাজার ৫৪০.৫৩ মেট্রিক টন আম, যার বিক্রয় মূল্য ছিল প্রায় ৭১ কোটি ৮১ লাখ ৬২ হাজার ১২০ টাকা।

চলতি মৌসুমে আমের জন্য আবহাওয়া বেশ অনুকূলে রয়েছে। গত বর্ষা মৌসুমে রাজশাহীতে প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টি হওয়ায় মাটি পর্যাপ্ত পানি পেয়েছে। এ কারণে গাছ পুষ্টি পেয়েছে। মুকুলও এসেছে অনেক গাছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে বাম্পার ফলন হবে বলে জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।

রাজশাহীর আম গাছগুলোতে প্রায় ৭০ শতাংশ মুকুল এসেছে। এ অঞ্চলে এবার ১০ লাখ ৩০ হাজার ৬১৪ টন আম ফলনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। ফলন ভালো করতে চাষিরা এখন গাছে গাছে মুকুলের পরিচর্যা করছেন।

রাজশাহী আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, এই বিভাগের আট জেলার মধ্যে চার জেলায় মূলত ব্যাপক আমের চাষ হয়। এর মধ্যে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও নাটোর জেলায় মোট ৮৪ হাজার ৩৮৮ হেক্টর জমিতে আমগাছ রয়েছে।

এর মধ্যে রাজশাহী জেলায় ১৭ হাজার ৯৪৩ হেক্টর জমিতে দুই লাখ ১৭ হাজার ১২৮ মেট্রিক টন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৩৪ হাজার ৭৩৮ হেক্টর জমিতে তিন লাখ ৮২ হাজার ১১৮ মেট্রিক টন, নওগাঁর ২৫ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে তিন লাখ ৪৮ হাজার ৯৭৫ মেট্রিক টন, নাটোরের পাঁচ হাজার ৮৫৭ হেক্টর জমিতে ৮২ হাজার ৩৯৩ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এ বছর জানুয়ারির মাঝামাঝি থেকে গাছে গাছে মুকুল আসতে শুরু করে। কিছু মুকুলে গুটিও চলেও এসেছে। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যেই সব মুকুলেই গুটি ধরবে।

রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আব্দুল আলীম বলেন, এ বছরে রাজশাহী জেলায় ১৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে আমের আবাদ হয়েছে। হেক্টর প্রতি গড় ফলন ধরা হয়েছে ১৫ দশমিক ৫৮ মেট্রিক টন। গতবারের চেয়ে জেলায় এবার ৫৮২ হেক্টও বেশি জমিতে আম চাষ হওয়ায় উৎপাদন অন্য যে কোনো সময়ের রেকর্ড ভাঙবে বলে মনে করছেন এ কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, চলতি মৌসুমে আমের জন্য আবহাওয়া বেশ অনুকূলে রয়েছে। গত বর্ষা মৌসুমে অনেক বৃষ্টি হওয়ায় মাটি পর্যাপ্ত পানি পেয়েছে। তাই মুকুল বেশি দেখা যাচ্ছে।

পুঠিয়া উপজেলার আম চাষি জাকির হোসেন বলেন, ‘এবার গাছে অনেক মুকুল এসেছে। গুটিও এখন ভালো দেখা যাচ্ছে। আমার কয়েকটি বাগান আছে, সেখানে বিভিন্ন জাতের আম রয়েছে। এবার ভালো ফলন আশা করছি। কৃষি বিভাগের পরামর্শে ওষুধ মেশানো পানি গাছের মুকুলে স্প্রে করছি মাঝে মাঝে।’

রাজশাহীর মোহনপুরের আম চাষি আব্দুল খালেক বলেন, ‘গাছে মুকুল অনেক ভালো এসেছে। গাছে পরিচর্যা কম করতে হচ্ছে। অনেক ধরনের আম গাছ আছে আমার। আশা করছি ভালো ফলন হবে।’

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক আব্দুল্লাহ হিল কাফী বলেন, ‘এবার রাজশাহীর বেশির ভাগ গাছে অনেক মুকুল এসেছে। কৃষকদের আমরা নানা ভাবে পরামর্শ দিচ্ছি। প্রত্যেক উপজেলার কৃষি কর্মকর্তারা সবসময় মাঠে কাজ করছে, আম চাষিদের পরামর্শ দিচ্ছে। গত বর্ষা মৌসুমে প্রচুর বৃষ্টি আম চাষিদের জন্য ভালো হয়েছে। সব মিলিয়ে এবার আমের ফলন ভালো হওয়ার আশা করছি।’