অমর একুশে বইমেলায় বেজেছে বিদায়ের সুর। বইমেলা শেষ হচ্ছে আগামীকাল। এবারের বইমেলা পূর্ণ মেয়াদের থেকেও বেশিদিন হলো। ৩০ দিনে প্রায় তিন হাজারের বেশি নতুন বই এসেছে এবার। এর মধ্যে পাঠকপ্রিতায় শীর্ষে আছে বেশকিছু বই।
মাসজুড়ে মেলায় বই কিনতে এসে তুলনামূলক প্রবীণ লেখকদের পাশাপাশি তরুণ লেখকদের প্রতি আস্থা রেখেছে ক্রেতা ও পাঠকরা। যার মধ্যে নতুন লেখকদেরও বই আছে। মুহম্মদ জাফর ইকবাল, আকবর আলী খান, আনিসুল হকের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নতুন লেখকদের বইও পাঠকের পছন্দের তালিকায় রয়েছে।
করোনাকালীন সংকট পুষিয়ে নিতে না পারলেও বই বিক্রি নিয়ে বড় ও প্রতিষ্ঠিত প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলো অনেকটা সন্তুষ্ট। করোনার কারণে এবারো সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য সবাই প্রত্যাশা করলেও শেষ পর্যন্ত মেলার সময় বাড়ায় খুশি লেখক-প্রকাশকরা ও পাঠক।
সব প্রকাশকদের কাছে তালিকা না থাকায় বিক্রিতে এগিয়ে থাকা বইগুলোর সঠিক পরিসংখ্যান জানা যায়নি। তবে স্টলগুলোর সঙ্গে কথা বলে পাঠকপ্রিয়তা এবং মুদ্রণ বা সংস্করণ হিসেব করে একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
প্রচলিত রীতি অনুযায়ী লেখকের জনপ্রিয়তার ওপর নির্ভর করে পাঁচশত থেকে পাঁচ হাজার কপিতে এক মুদ্রণ ধরা হয়। সে হিসেবে এবারের মেলাতেই চতুর্থ মুদ্রণ শেষের পথে অন্য প্রকাশ থেকে প্রকাশিত তরুণ লেখক সাদাত হোসাইনের লেখা বই ‘প্রিয়তম অসুখ সে।’ বইটির পঞ্চম মুদ্রণ প্রস্তুত হচ্ছে বলেও জানা গেছে।
‘প্রিয়তম অসুখ সে’ বুধবার পর্যন্ত ‘অন্য প্রকাশ’র স্টল থেকে সর্বাধিক বিক্রি হওয়া বই বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক সিরাজুল কবির চৌধুরী।
তিনি বলেন, এবারের মেলায় নতুন লেখকদের বই পাঠকরা কিনছেন বেশি। তরুণ ও নবীন লেখকদের বই বেশি বিক্রি হচ্ছে। পরিচিত ধাঁচের লেখকদের পাঠক নির্দিষ্ট। এখন যারা নতুন লিখছেন তাদের নিজস্ব ভক্ত আছে। এসব ফ্যানরাই নতুন লেখকদের বই বেশি কিনে থাকেন। তারা আসলে ফ্যানেদের ভিরে স্টলের সামনে দাঁড়ানো যায় না।
প্রথমা থেকে প্রকাশিত বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা আকবর আলী খানের লেখা ‘পুরনো সেই দিনের কথা’ বইটি রয়েছে এই প্রকাশনীর সর্বাধিক বিক্রি হওয়া গ্রন্থের তালিকায়। ইতোমধ্যেই বইটির চতুর্থ মুদ্রণ এসেছে মেলায়। এর পরে বিক্রি আর পাঠক চাহিদায় এগিয়ে রয়েছে আনিসুল হকের ‘তিন কিশোরের দুঃসাহসিক অভিজান’ বইটি। এই বইয়ের দ্বিতীয় মুদ্রণ চলছে বলে জানিয়েছেন প্রথমা প্রকাশনীর বিক্রয় প্রতিনিধি মেজবাউদ্দিন।
এদিকে বই প্রকাশের পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন হাজার কপি বিক্রি হয়েছে মাসরুর আরেফিনের ‘আড়িয়াল খাঁ’ উপন্যাস। কথা প্রকাশের স্টল ব্যবস্থাপক জাফিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, আমাদের স্টলে পাঠকপ্রিয়তার শীর্ষে প্রথমে আছে মাসরুর আরেফিনের ‘আড়িয়াল খাঁ’। দ্বিতীয়তে আছে হরিশংকর জলদাসের ‘দুর্যোধন’। তৃতীয় অবস্থানে আছে হরিশংকর জলদাসের ‘বর্ণবৈষম্যের শেকড়বাকড়া’ বইটি। প্রতিটি বই তিন হাজারের বেশি বিক্রি হয়েছে।
এ ছাড়া পার্ল পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত মোস্তফা মামুনের লেখা ‘অপারেশন কুয়ালালামপুর’ বইটি প্রায় আড়াই হাজার কপি বিক্রি হয়েছে বলে জানান পার্ল পাবলিশার্স স্টলের মার্কেটিং ম্যানেজার মো. জাহাঙ্গীর হোসেন।
তাম্রলিপি প্রকাশনী থেকে সর্বাধিক বিক্রি হওয়া বইয়ের মধ্যে রয়েছে মুহম্মদ জাফর ইকবালের লেখা ‘আহা টুনটুনি উহু ছোট চাচ্চু’ বইটি। ইতোমধ্যেই এই বইটি আড়াই হাজার কপি বেশি বিক্রি হয়েছে বলে জানান প্রকাশক এ কে এম তারিকুল ইসলাম রনি।
একই অবস্থা বাংলা একাডেমির চত্বরের ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ স্টল থেকে প্রকাশিত ডিআইজি তওফিক মাহবুব চৌধুরীর লেখা বই ‘আমি জানি তুমি মিথ্যা বলছ’ বইটি। এ স্টল ও প্রকাশনীর বেস্ট সেলার তালিকায় রয়েছে ‘আমি জানি তুমি মিথ্যা বলছ’। ইতোমধ্যেই এই বইটির চতুর্থ সংস্করণও শেষের পথে। বৃহস্পতিবার নাগাদ পঞ্চম মুদ্রণ আসবে বলে জানিয়েছেন এই স্টলের বিক্রয় প্রতিনিধি আব্দুর রাজ্জাক।
মেলায় এ নিয়ে মোট নতুন বইয়ের সংখ্যা দাঁড়ালো ৩ হাজার ২০১ টি। বাংলা একাডেমির দেওয়া হিসেব অনুযায়ী, সর্বাধিক ৯৮৭টি কবিতার বই এসেছে। তারপর রয়েছে উপন্যাস এবং রয়েছে গল্পের বইও। সব থেকে কম প্রকাশ হয়েছে নাটক, অভিধান, রম্য, ধর্মীয়, চিকিৎসা, রচনাবলি এবং রাজনীতি বিষয়ক বই।
প্রাপ্ততথ্য অনুযায়ী, এবার মেলার ৩০ দিনে গল্প ৪৩৮টি, উপন্যাস ৪৭৭টি, প্রবন্ধ ১৭০টি, কবিতা ৯৮৭টি, গবেষণা ৯৭টি, ছড়া ৫৯টি, শিশুতোষ ৮৬টি, জীবনী ১০০টি, রচনাবলি ১৪টি, মুক্তিযুদ্ধ ৯৮টি, নাটক ১৬টি, বিজ্ঞান ৪৬টি, ভ্রমণ ৫১টি, ইতিহাস ৬৬টি, রাজনীতি ২৩টি, স্বাস্থ্য বিষয়ক ১৯টি, বঙ্গবন্ধু ৭৯টি, রম্য/ধাঁধা ১৪টি, ধর্মীয় ৩৭টি, অনুবাদ ৩৮টি, অভিধান ৯টি, সায়েন্স ফিকশন ৪৪টি, অন্যান্য ২৩৪টি বই প্রকাশ হয়েছে।