পুঁজিবাজারে নতুন কোম্পানির তালিকাভুক্তিতে কাজ করে মার্চেন্ট ব্যাংক। এছাড়া নিজস্ব পোর্টফোলিওতে বিনিয়োগের পাশাপাশি গ্রাহকদের পক্ষে পোর্টফোলিও বিনিয়োগ ব্যবস্থাপন এবং আন্ডার রাইটিংয়ের কাজও করে এরা। কিন্তু নিজেদের এই ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হচ্ছে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান। বড় বড় মার্চেন্ট ব্যাংকের চাপে বছরের পর বছর ইস্যু আনতে ব্যর্থ হচ্ছে ছোট এবং নতুন আসা মার্চেন্ট ব্যাংক। কোণঠাসা হয়ে পড়ছে এসব ব্যাংক।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, বর্তমানে দেশে ৬৬টি মার্চেন্ট ব্যাংক রয়েছে। তবে ইস্যু আনতে পারছে হাতেগোনা কয়েকটি। অধিকাংশ মার্চেন্ট ব্যাংকই মার্জিন ঋণ প্রদান ও পোর্টফোলিও ব্যবস্থাপনার মধ্যে নিজেদের নিয়োজিত রেখেছে। তবে গা বাঁচাতে কেউ কেউ অন্য ইস্যু ম্যানেজারদের আইপিও ফাইলে নাম সংযুক্ত করে দেন। এরপরও গত এক যুগে ইস্যুও আনেনি ২২টি বা ৩৩ শতাংশ মার্চেন্ট ব্যাংক। নিয়মানুয়ায়ী প্রতিটি মার্চেন্ট ব্যাংককে প্রতি দুই বছরে আইপিওর জন্য অন্তত একটি ফাইল দাখিল করতে হবে। অন্যথায় মার্চেন্ট ব্যাংকের লাইসেন্স বাতিল করার বিধান রয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে তেমন কোনো পদক্ষেপ নেই।
এদিকে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর আইপিওতে অনাগ্রহ ও ব্যর্থতার পেছনে নিয়ন্ত্রক সংস্থার আইপিও অনুমোদনে ধীরগতিসহ অন্যান্য জটিলতা কাজ করছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া প্রয়োজনের তুলনায় বেশি মার্চেন্ট ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে সমালোচনা আছে। এ বিষয়ে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, পুঁজিবাজারের যে আকার, সেখানে ৬০-৬৫টির মতো মার্চেন্ট ব্যাংকের দরকার আছে কি না, তা চিন্তার বিষয়। হয়তো বাস্তবতা বিচার-বিশ্লেষণ না করেই এতোগুলো মার্চেন্ট ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে আনার জন্য মার্চেন্ট ব্যাংকারদের সক্ষমতা ও পেশাগত জ্ঞানের দরকার। এক্ষেত্রে মার্চেন্ট ব্যাংক প্রতিষ্ঠানে একটি শক্তিশালী পেশাদার টিম থাকা দরকার। তবে একটি দক্ষ টিম গঠনে ২০১০ সালের শেয়ারবাজার ধস নতুন মার্চেন্ট ব্যাংকের জন্য অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। যাতে পুরাতন মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো ইস্যু আনার ক্ষেত্রে এগিয়ে।
একই বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) একজন সাবেক চেয়ারম্যান বলেন, সক্ষমতা ও পেশাগত জ্ঞানের ওপর নির্ভর করে একটি মার্চেন্ট ব্যাংকের ইস্যু আনা। যাদের সক্ষমতা ও পেশাগত জ্ঞান ভালো, তারা ইস্যু আনছে, আর বাকিরা পারছে না। এদের আরো সময় দেওয়া উচিত।
তথ্যমতে গত একযুগে ইস্যু না আনা ইস্যু ম্যানেজার প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে এবি ইনভেস্টমেন্ট, এবিএসিআই ইনভেস্টমেন্ট, এআইবিএল ক্যাপিটাল ম্যানেজম্যান্ট, বেঙ্গল ইনভেস্টমেন্টস, কসমোপলিটন ফিন্যান্স লিমিটেড, এক্সিম ইসলামী ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, গ্রিন ডেল্টা ক্যাপিটাল, জিএসপি ইনভেস্টমেন্ট, ইসলামি ব্যাংক ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট, যমুনা ব্যাংক ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড। একইভাবে তালিকায় রয়েছে মেঘনা ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট, রেইস পোর্টফোলিও অ্যান্ড ইস্যু ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড, রিভারস্টোন ক্যাপিটাল, স্ট্র্যাটেজিক ফাইন্যান্স, ইউসিবি ইনভেস্টমেন্ট, উত্তরা ফাইন্যান্স ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট, এনডিবি ক্যাপিটাল লিমিটেড, মাইডাস ইনভেস্টমেন্ট, আইএল ক্যাপিটাল, কমিউনিটি ব্যাংক ইনভেস্টমেন্ট ও শান্তা ইক্যুইটি।
এদিকে ২০১০ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৪৪টি মার্চেন্ট ব্যাংক পুঁজিবাজারে শতাধিক ইস্যু এনেছে। তবে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে অধিকাংশ মার্চেন্ট ব্যাংক অন্যের সঙ্গে যৌথ হিসেবে শুধুমাত্র নাম ব্যবহার করেছে। যে কারণে প্রকৃত ইস্যু আনার কাজ করা মার্চেন্ট ব্যাংকের সংখ্যা ৪৪ এর চেয়ে অনেক কম হবে।
এদিকে প্রতি ২ বছরে ১টি ফাইল দাখিল করার বিধান থাকলেও সে হারে আইপিও অনুমোদন দেওয়া হয় না। যাতে অনেক মার্চেন্ট ব্যাংক আইপিও নিয়ে কাজ করতে অনীহা। বেশি বেশি আইপিও অনুমোদন পেলে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো তাদের দৈন্যদশা থেকে বের হয়ে আসতে পারবে বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
প্রসঙ্গত বিগত বছরগুলোতে সবচেয়ে বেশি ইস্যু আনা মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো তালিকায় রয়েছে আইসিবি ক্যাপিটাল, ইমপেরিয়াল ক্যাপিটাল, লংকাবাংলা ইনভেস্টমেন্ট ও এএফসি ক্যাপিটাল, ব্যানকো ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টস ও প্রাইম ফাইন্যান্স ক্যাপিটাল ম্যানেজম্যান্ট, অ্যালায়েন্স ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এএএ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, আলফা ক্যাপিটাল, সিটিজেন সিকিউরিটিজ, এনআরবি ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট (সাবেক ফার্স্ট সিকিউরিজি সার্ভিসেস) ও ইবিএল ইনভেস্টমেন্টসহ আরো কিছু প্রতিষ্ঠান।