logo
আপডেট : ১৭ মার্চ, ২০২২ ০৯:৫৯
ভালোবাসার কাছে হার মানল ক্যানসার
আহসান সুমন, কক্সবাজার

ভালোবাসার কাছে হার মানল ক্যানসার

হাসপাতালের বেডে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হন মাহামুদুল ও ফাহমিদা

মাহামুদুল হাসান নামে এক যুবকের সঙ্গে দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক তরুণী ফাহমিদা কামালের। সম্পর্কের ভিত্তিতে দুই পরিবারের মধ্যে বিয়ের কথাবার্তাও অনেকটা চূড়ান্ত হয়। এরই মধ্যে ফাহমিদা হয়ে পড়েন অসুস্থ। চিকিৎসক পরীক্ষা করে জানতে পারেন ফাহমিদা মরণব্যাধি ক্যানসারে আক্রান্ত।

খবরটি জানতে পারেন প্রেমিক মাহামুদুল হাসান ও তার পরিবার। এমন বাস্তবতায় সাধারণত ক্যানসার আক্রান্ত ওই মেয়েটিকে বিয়ে না করাটা স্বাভাবিক। কিন্তু না, হাসানের সত্যিকারের ভালোবাসা তা ভুল প্রমাণ করেছে।

কেবলই ভালোবাসার কারণে প্রেমিকা ফাহমিদার হাত ছাড়েনি মাহামুদুল হাসান। তিনি হাসপাতালের বেডে বর-কনে সেজে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে করলেন ভালোবাসার মানুষকে। গত ৯ মার্চ রাত সাড়ে ৮টায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাদের বিয়ে হয়।

মাহমুদুল হাসান চকরিয়া উপজেলার ফাঁসিয়াখালির সাবেক চেয়ারম্যান আজিজুল হকের ছেলে। তিনি একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করেছেন। আর ফাহমিদা কামাল হলেন চট্টগ্রাম নগরীর দক্ষিণ বাকলিয়ার বাসিন্দা। তিনিও একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিবিএ ও এমবিএ করেছেন।

বর ও কনের পরিবারের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, ফাহমিদার শরীরে মরণব্যাধি ক্যানসার ধরা পড়ার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রথমে ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতাল ও পরে নেওয়া হয় ভারতের টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালে। প্রায় এক বছর সেখানে চিকিৎসার পর জবাব দেন চিকিৎসকরা।

উপায়ান্তর না দেখে ফাহমিদাকে দেশে এনে ভর্তি করা হয় চট্টগ্রাম মহানগরীর জিইসি মোড়ে অবস্থিত বেসরকারি হাসপাতাল ‘মেডিকেল সেন্টারে’। কিন্তু দিন দিন অবস্থার অবনতি হতে থাকে ফাহমিদার।

আগের সেই সুশ্রী তরুণী ফাহমিদাকে দেখে যেন চেনাই যায় না। হাসপাতালের বেডে মৃত্যুযন্ত্রণায় কাতরাতে থাকা ফাহমিদার কষ্ট দেখে, স্থির থাকতে পারেননি মাহামুদুল। মৃত্যুপথযাত্রী প্রেমিকাকে বিয়ের আগ্রহের কথা পরিবারকে জানান মাহামুদুল। তখন তাকে নানাভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেও বিফল হয় পরিবার।

লাল বেনারসি শাড়ি, গলায় স্বর্ণের চেইন পরে ছিলেন কনে ফাহমিদা। তখনো নাকে, হাতে স্যালাইনের ক্যানোলা লাগানো। পায়জামা-পাঞ্জাবি পরা বর মাহামুদুলের সঙ্গে মিলে কেক কাটেন। হয় মালা বদল যেন স্বর্গীয় এক পরিবেশ।

প্রেমিক মাহামুদুল হাসানের ভাষ্য, ‘প্রেমিকা ফাহমিদাকে যদি মরতেই হয়, তা হলে তার বুকে মাথা রেখেই মরতে হবে। মাহামুদুলের নিঃস্বার্থ ভালোবাসার কাছে হার মানেন ফাহমিদাও।’

এ দিকে প্রেমিক মাহামুদুল হাসান বিয়ের ব্যাপারে নিয়েছেন কঠিন সিদ্ধান্ত। নিজের পরিবারকে নিয়ে এসে প্রস্তাব দিল সে দ্রুত সময়ের মধ্যে ফাহমিদাকে বিয়ে করতে চান। মৃত্যুপথযাত্রী ফাহমিদাকে প্রেমিক মাহামুদুল হাসানের বিয়ে করার প্রস্তাবে সবাই অবাক। হাসানকে বোঝানোর সব ধরনের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু হাসান তার সিদ্ধান্তে অনড়। অবশেষে উভয় পরিবার সম্মত হয়।

জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে থাকা ফাহমিদা অবিশ্বাস্য এই প্রস্তাব শুনে অপলক তাকিয়ে থাকে প্রেমিক মাহামুদুল হাসানের দিকে। ফাহমিদার মুখে ফুটে উঠে নির্মল হাসি। অবশেষে গত ৯ মার্চ রাত সাড়ে ৮টায় চট্টগ্রাম মেডিকেলে তাদের বিয়ের আয়োজন করা হয়। কনে ফাহমিদাকে পরানো হয় লাল বেনারসি শাড়ি আর গলায় সোনার হার। বর মাহামুদুল হাসানকে পরানো হয় পায়জামা-পাঞ্জাবি। দু’জন মিলে কেক কাটেন, বদল করেন মালা। সঙ্গের সবাই মিষ্টিমুখ করেন।

এরই মধ্যে মাহামুদুল আর ফাহমিদার এমন প্রেমের দৃষ্টান্ত ভাইরাল হয়ে যায় নেট দুনিয়ায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নানা রকমের প্রশংসা পাচ্ছেন এই নবদম্পতি।

কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলাম এই নবদম্পতির জন্য শুভ কামনা করে ফেসবুকে লেখেন, ‘মেয়েটি ক্যানসার আক্রান্ত এবং ক্রমশ মৃত্যুর দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে, সেটা জেনেও মেয়েটিকে বিয়ে করার সাহস করলেন মাহামুদুল হাসান। এই নবদম্পতির জন্য অন্তর থেকে দোয়া করি। মেয়েটি যেন আল্লাহর অশেষ কৃপায় ক্যানসার জয় করে তাকে ভালোবেসে দাম্পত্য জীবনে সুখী হতে পারে। এটাই মানবতা, এটাই ভালোবাসা।’

একইভাবে তাদের প্রশংসা করছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার শত শত মানুষ। সবাই লিখছেন, আধুনিক সমাজে এমন ভালোবাসা খুবই বিরল, যে ভালোবাসায় হার মেনেছে মরণব্যাধি ক্যানসারও। জয় হোক এমন ভালোবাসার।