logo
আপডেট : ১৭ মার্চ, ২০২২ ১০:৫৪
ধ্বংসের পথে দেশীয় লবণ
আহসান সুমন, কক্সবাজার

ধ্বংসের পথে দেশীয় লবণ

সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন কক্সবাজার লবণ চাষি ও ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদের নেতারা

মাঠে লবণ উৎপাদন হতে না হতেই দরপতন শুরু হয়েছে। সিন্ডিকেটের কারণে সপ্তাহের ব্যবধানে মাঠ পর্যায়ে দাম কমেছে প্রায় সাড়ে ৩০০ টাকা। অথচ ৮০ কেজির বস্তা লবণের দাম ছিল ৮০০ টাকা। এই ধারা অব্যাহত থাকলে দেশীয় লবণশিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে। দেশের সম্ভাবনাময় এই খাতকে বাঁচাতে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন চাষিরা।

এ বিষয়ে মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত তুলে ধরেন কক্সবাজার লবণ চাষি ও ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদের নেতারা। এ সময় লিখিত বক্তব্য দেন সংগঠনটির সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট শহীদুল্লাহ্।

তিনি বলেন, ‘চলতি মৌসুমে প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকূল থাকায় দেশীয় উৎপাদিত লবণ দেশের মানুষের চাহিদা মেটাতে সক্ষম। কিন্তু কিছু অসাধু মিল মালিক বিদেশি লবণ আমদানিতে ব্যর্থ হয়ে সিন্ডিকেট করে চাষিদের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত করার ষড়যন্ত্র করছে। তারা চাষিদের লবণ চাষে অনুৎসাহিত করে বিদেশি লবণের ওপর দেশকে নির্ভরশীল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।’

এই মুহূর্তে ষড়যন্ত্র বন্ধ করা না গেলে দেশীয় লবণশিল্প ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাবে বলে তিনি জানান।

লবণচাষিদের দেওয়া তথ্যমতে, একজন লবণচাষি তিন কানি জমিতে লবণ চাষ করতে সক্ষম। সেই অনুপাতে গত বছর লবণ মাঠের মূল্য প্রতি কানি ১৮ হাজার টাকা হিসেবে তিন কানিতে ৫৪ হাজার টাকা দিতে হয়। পানি দেওয়ার জন্য মেশিনের জ্বালানি খরচ পড়ে কানি প্রতি ২ হাজার ৫০০ টাকা করে তিন কানিতে ৭ হাজার ৫০০ টাকা।

পলিথিন বাবদ প্রতি কেজি ৭০ টাকা হিসেবে (প্রতিকানিতে ৬৫ পাউন্ড) প্রতি কানিতে ৪ হাজার ৫৫০ টাকা করে ৩ কানিতে ১৩ হাজার ৬৫০ টাকা এবং খাওয়া-দাওয়া বেতন বাবদ ২০ হাজার টাকা। এক মৌসুমে (৫ মাসে) এক লাখ টাকার মতো শ্রমিক খরচ পড়ে।

সেই হিসেবে তিন কানি জমিতে উৎপাদন খরচ পড়ে ১ লাখ ৭৫ হাজার ১৫০ টাকা। প্রতি কানিতে সর্বোচ্চ ২৫০ মণ হিসেবে তিন কানি লবণ উৎপাদন হয় ৭৫০ মণ।

সুতরাং প্রতি মণে উৎপাদন খরচ পড়ে প্রায় ২৩৪ টাকা। মণ প্রতি লেবার চার্জ ও ইউপি ট্যাক্স ৩৩ টাকা, তার সঙ্গে মণ প্রতি ঢাকার বোট ভাড়া ৫০ টাকা যোগ হলে লবণের উৎপাদন মূল্য দাঁড়ায় মণপ্রতি ৩১৭ টাকা।
লবণের মূল্য ২৫০ টাকা হলে প্রতি মণ লবণে চাষিদের উৎপাদন ঘাটতি হয় ৬৭ টাকা। তিন কানি জমিতে ৭৫০ মণ লবণের ঘাটতি (একজন চাষার ক্ষতি) ৫০ হাজার ২৫০ টাকা।

এই ক্ষতি পোষাতে না পেরে চাষিরা যেকোনো মুহূর্তে মাঠ ছেড়ে চলে যেতে পারেন।

প্রধানমন্ত্রী, শিল্প মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সরকারের উচ্চপর্যায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ভুক্তভোগীরা জানান, লবণনীতি অনুসরণ করে দেশীয় লবণের ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ করে দেশীয় শিল্পকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে।

অসাধু সিন্ডিকেটের দেশবিরোধী চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে ৫৫ হাজার চাষিকে রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন লবণচাষি ও ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদের নেতারা।

সংবাদ সম্মেলনে লবণচাষি ও ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদের পক্ষে মিজানুর রহমান চৌধুরী খোকন মিয়া, কলিম উল্লাহ কলি, সোয়াইবুল ইসলাম সবুজ, ইউসুফ বদরীসহ সংশ্লিষ্টরা বক্তব্য দেন।
তারা বলেন, ‘ফেব্রুয়ারিতে ব্যবসায়ীরা যে দামে লবণ কিনে প্যাকেটে বাজারজাত করেছিল এখন অর্ধেক কম দামে কিনেও প্যাকেট লবণের দাম একই। এসিআই, মোল্লা, ফ্রেশ, সিটি এই চারটি কোম্পানির সিন্ডিকেটের কারণে লবণের ক্ষতি হচ্ছে।’