logo
আপডেট : ১৭ মার্চ, ২০২২ ১২:৫৫
আমনুরায় রেলবন্দর, বরেন্দ্র অঞ্চলে আনন্দের বন্যা
সোহান মাহমুদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

আমনুরায় রেলবন্দর, বরেন্দ্র অঞ্চলে আনন্দের বন্যা

আমুরায় রেণবন্দর ঘোষণার পর সাবেক এমপি আব্দুল ওদুদকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়

সকল জল্পনা-কল্পনা শেষে তিনটি সংস্থার সমীক্ষা, গেজেট পাস, এনবিআরের অনুমোদন অবকাঠামোগত সুবিধা বিপুল পরিমাণ রেলের জমি ও খরচ বিবেচনায় এনে রেলবন্দরটি হতে যাচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমনুরায়।

আমনুরায় রেলবন্দরে পক্ষে রেল কাস্টমস, ইমিগ্রেশন বিভাগ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি আবদুল ওদুদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এ ফসল। আমনুরায় রেলবন্দর আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণার পর এলাকাজুড়ে চলছে আনন্দের বন্যা। এর আগে সোমবার আমনুরা রেলস্টেশন চত্বরে সাবেক এমপি আবদুল ওদুদকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

গেল ২৪ ফেব্রুয়ারি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আমনুরা রেলস্টেশনকে রেলবন্দর ঘোষণা করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। জানা গেছে, ব্রিটিশ আমলে ইস্ট্রার্ন বেঙ্গল রেলওয়ে গোদাগাড়ী ঘাট, আমনুরা, রহনপুর ও ভারতের সিঙ্গাবাদ ও মালদা মিটার গেজ সেকশন চালু করে কাটিহার ব্রাঞ্চ রেলওয়ের অধীনে ছিল।

শিয়ালদহ থেকে লালগোলা ঘাট ব্রডগেজ ট্রেন এসে রেলফেরি ঘাট পার হয়ে পদ্মার উত্তর পাড়ে গোদাগাড়ী ঘাটে অপেক্ষমাণ মিটারগেজ ট্রেনে চড়ে মালদা, কাটিহার, শিলিগুড়ি ও উত্তরবঙ্গ যেতেন এ পথের যাত্রীরা।

১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর রাজশাহী গোদাগাড়ী ঘাট, আমনুরা, রহনপুর ও মিটার গেজ সেকশন ছোট মিটার গেজে পরিণত হয়। পরে রেল কর্তৃপক্ষ ২৩ দশমিক ৩৩ কিলোমিটার গেজ তুলে ফেলেন। ১৯৮০ সালে বাংলাদেশ রেলওয়ে রহনপুর স্টেশন থেকে সিঙ্গাবাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপিত করে।

২৫০ বছরের পুরোনো রেল জংশন আমনুরা আবারো ভারতের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আমনুরা রেলস্টেশনকে রেলবন্দর ঘোষণা করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। আমনুরায় আনুষ্ঠানিকভাবে রেলবন্দর ঘোষণা করায় আমনুরা রেল স্টেশন চত্বরে এক গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সাবেক এমপি আবদুল ওদুদকে বিপুল সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

অন্যদিকে স্থানীয় সর্বদলীয় রাজনৈতিক রহনপুরে রেলবন্দর করার দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রেলের অধিকাংশই জমি স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বড় বড় বিল্ডিং করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ আবাশিক ভবন নির্মাণ করেছে। এছাড়া আমনুরার তুলনায় রহনপুরে রেলের জমি কম রয়েছে।

এ বিষয়ে আমনুরা ঝিলিম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান বলেন, আমনুরা ত্রিদেশীয় করিডোরমুখী একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাচীন রেল জংশন। আমনুরাকে রেলবন্দরের ঘোষণা করায় রেলবন্দর স্টেশন চত্বরে এক গণসমাবেশের মাধ্যমে সাবেক এমপি আবদুল ওদুদকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তিনি।

রহনপুর উন্নয়ন আন্দোলনের আহ্বায়ক নাজমুল হুদা খান রুবেল বলেন, বর্তমানে এ রেলপথ দিয়ে ভারত থেকে পণ্য আমদানি ও বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন পণ্য নেপালে রপ্তানি করা হয়।

জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও সাবেক ছাত্রনেতা ইঞ্জিনিয়ার মাহতাব উদ্দীন বলেন, আমনুরা রেলস্টেশনটি মূলত বরেন্দ্র অঞ্চলে অবস্থিত। রেলবন্দর স্থাপন করার জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। আমনুরায় রেলবন্দর ঘোষণা করায় জেলাবাসীর পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানান তিনি।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বিশাল বরেন্দ্র অঞ্চলের বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে ও সরকারের বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পাবে।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি আবদুল ওদুদ বলেন, ‘শুধু আমনুরা রেলবন্দর নয়, সোনামসজিদ স্থলবন্দর পর্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারণের কাজ এগিয়ে চলেছে।’

তিনি বলেন, গত ১৩ বছরে আগ্রাসী পদ্মা নদীর ভাঙন, চরাঞ্চলের সঙ্গে জেলা সদরের কানেকটিং রোড শেখ হাসিনা সেতু নির্মাণের মধ্য দিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাকে একটি আধুনিক জেলায় পরিবর্তন এনেছেন প্রধানমন্ত্রী।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে জেনারেল ম্যানেজার অসীম কুমার তালুকদার বলেন, ‘আমনুরায় রেলবন্দর স্থাপন এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। যে অবকাঠামো আছে আর ৫০ কোটি টাকা খরচ করলেই রেলবন্দরটি তৈরি হবে। এ ছাড়া ভারত ও নেপালসহ অন্যান্য দেশ তাদের ব্যবসার স্বার্থে আমাদের রেলবন্দরকে সম্প্রসারিত করার জন্য নানাবিধ সহায়তা পাবে।’