সাধারণভাবে আমরা জানি, নতুন টাকা শুধু ব্যাংকে পাওয়া যায়। কিন্তু এই নতুন টাকা যে ফুটপাতেও পাওয়া যায় তা হয়তো অনেকেই জানি না। আজ এমনই একটি টাকার বাজারের কথা বলব। যেখানে পুরাতন টাকার বিপরীতে নতুন টাকা পাওয়া যায়। তবে দিতে হয় কমিশন।
রাস্তায় ও ফুটপাতে ছোট ছোট টেবিল বসিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে ছেড়া টাকা কেনা এবং নতুন টাকা বিক্রির বাজার। প্রতিদিন সকাল আটটার দিকে নানা রঙের নতুন টাকার পসরা সাজিয়ে বসেন বিক্রেতারা। রাত দশটা পর্যন্ত খোলা থাকে এসব দোকান। ক্রেতারা এসব দোকানগুলোতে আসেন টাকা ভাংতি কিংবা বদল করতে।
বলছি গুলিস্তান শপিং কমপ্লেক্সের সামনে বসা টাকার বাজারের কথা। প্রতিদিন প্রায় ১৫ থেকে ২০টি দোকান সারিবদ্ধভাবে বসে টাকা বেচাকেনার এই বাজারে।
এই বাজারের একজন দোকানমালিক সাদ্দাম হোসেন, মানিকগঞ্জে তার বাড়ি। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে থাকেন মালিবাগের একটি ভাড়া বাসায়। তিনি প্রায় ১৬-১৭ বছর ধরে করছেন টাকার ব্যবসা। তিনি বলেন, টাকা ছিঁড়তে ছিঁড়তে এমন অবস্থা হয়, যখন আর কেউ সেই টাকা নিতে না চায় তখন সেই ছেড়া টাকাই তাদের কাছে আসে। তিনি ছেড়া টাকার ধরন অনুযায়ী শতকরা ১০ থেকে ২০ টাকা কমিশন নিয়ে থাকেন। আর নতুন টাকা বিক্রির ক্ষেত্রে শতকরা ৫ টাকা করে নেন। তার কাছে দুই টাকা থেকে শুরু করে হাজার টাকার নতুন নোট রয়েছে। প্রতিদিন যা আয় হয় তা দিয়ে সংসার চলে। চলে ছেলে-সন্তানদের পড়াশোনা।
কোথা থেকে নতুন টাকা সংগ্রহ করেন জানতে চাইলে বলেন, নির্ধারিত কিছু লোকের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে পাইকারি দামে নতুন নোট সংগ্রহ করেন এবং তা খুচরা দরে বাজারে বিক্রি করেন। ছেঁড়া টাকা নিয়ে কী করেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ টাকাগুলো তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যাংকের লোকজনদের ১ থেকে ২ শতাংশ লাভ দিয়েও তিনি ব্যাংক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে বিক্রি করে দেন এসব ছেড়া টাকা।
ব্যবসার অবস্থা জানতে চাইলে বলেন, বর্তমানে করোনায় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি খুব একটা ভালো নয়। এখন ব্যবসা একদমই ভালো হচ্ছে না। তিনি আরো বলেন, সারা বছরের তুলনায় ঈদের সময় নতুন টাকার বিক্রি অনেক বেশি হয়। তখন দামও একটুকু বেশি পাওয়া যায়। সারা বছরের কম বিক্রির হিসাবটা ঈদের সময়ে পুষিয়ে নেন তিনি।
করোনাকালে তিনি কী করেছেন জানতে চাইলে বলেন, করোনার সময় যখন সব বন্ধ ছিল তখন ঢাকার ভাড়া বাসা ছেড়ে তিনি তার পরিবার নিয়ে গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জের উথলিতে ছিলেন। সেখানে নিজের ছোট্ট একটুকরো জমিতে চাষাবাদ করেছেন। একজন ক্রেতা মোহাম্মদ সানোয়ার হোসেন বলেন, তিনি টাকা ভাংতি করতে এখানে এসেছেন। মাঝেমধ্যেই নিজের জন্য এসব দোকান থেকে টাকা ভাংতি করেন। অনেক সময় পুরাতন টাকা বদলে নতুন টাকা নিয়ে যান বাচ্চাদের জন্য। কারণ নতুন টাকা পেলে বাচ্চারা অনেক খুশি হয়।
মাঝে মাঝে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ফুটপাতে হকার বসার বিষয়ে কড়াকড়ির কারণে পথে বসার উপক্রম হয়ে পড়েন এই টাকা ব্যবসায়ীরা। একটু সুযোগ নিয়ে বসার চেষ্টা করলেই পুলিশ ও সিটি করপোরেশনের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা স্বেচ্ছাসেবকরা তাড়া করেন। তখন টাকার ব্যাগ নিয়ে পালাতে হয় তাদের। মাঝেমধ্যে দেখা দেয় ছিনতাইকারী চক্র। তারা হঠাৎ করেই টাকার বান্ডেল নিয়ে দৌড় দেয়।