logo
আপডেট : ১৯ মার্চ, ২০২২ ১০:০১
অবহেলায় সিলেটের ব্রিটিশ স্থাপত্য কিনব্রিজ
কামরুল ইসলাম মাহি, সিলেট ব্যুরো

অবহেলায় সিলেটের ব্রিটিশ স্থাপত্য কিনব্রিজ

সিলেটে এই ব্রিটিশ স্থাপত্যের সৌন্দর্য এখন রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ম্লান হতে বসেছে। ছবি- ভোরের আকাশ

সিলেট নগরকে দু’ভাগে বিভক্ত করে রেখেছে সুরমা নদী। আর এই বিভক্তিকে ব্রিটিশ ঐতিহ্যে এ অঞ্চলের প্রথম সেতু কিনব্রিজ তৈরি করেছে যোগাযোগের সেতুবন্ধন। নির্মাণে রয়েছে ঐতিহাসিক পটভূমি। তিরিশের দশকে তৎকালীন আসাম প্রদেশের গভর্নর ছিলেন মাইকেল কিন নামের এক ইংরেজ। দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে সিলেট পরিদর্শনে এলে তার স্মৃতিকে স্মরণীয় করে রাখতেই এ ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়েছিল। যা দেশবাসীর কাছে কিনব্রিজ নামে পরিচিত।

সিলেটে এই ব্রিটিশ স্থাপত্যের সৌন্দর্য এখন রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ম্লান হতে বসেছে। মালবাহী পিকআপসহ অনেক যানবাহন অবাধে চলছে এ ব্রিজ দিয়ে। ফলে ঐতিহাসিক এ ব্রিজটি পড়েছে মারাত্মক ঝুঁকিতে। এটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসক)। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্রিজটি রক্ষার ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়া খুবই জরুরি।

ইতিহাসবিদদের মতে, আসামের সঙ্গে সিলেট অঞ্চলের সড়ক যোগাযোগের পথ সুগম করতে সুরমা নদীতে ব্রিজ স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এর অংশ হিসেবে রেলওয়ে বিভাগ ১৯৩৩ সালে সুরমা নদীর উপর ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। তারপর ১৯৩৬ সালে ব্রিজটি আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে দেয়া হয়। ব্রিজের নামকরণ হয় গভর্নর মাইকেল কিনের নামে। ব্রিজের প্রধান কাঠামো লোহা দিয়ে নির্মিত। এর আকৃতি অনেকটা ধনুকের মতো বাঁকানো। ব্রিজটির দৈঘ্য ১১৫০ ফুট ও প্রস্থ ১৮ ফুট। এ ব্রিজটি নির্মাণে তখনকার দিনেই ব্যয় হয়েছিল প্রায় ৫৬ লাখ টাকা।

সিসিক সূত্রে জানা গেছে, বেশ কিছু বছর আগে ব্রিজটিতে স্থাপন করা হয় ২০টি পোল। পুরনো ৩২টি পোলসহ ৫৬টি এলইডি বাল্ব লাগানো হয়েছিল। বর্তমানে বেশ কয়েকটি লাইট জ্বলছে না।

সরেজমিন দেখা গেছে, দিনের বেলা সিএনজিচালিত অটোরিকশা, রিকশা-ভ্যান, মোটরসাইকেল চলাচল করলেও রাতে পিকআপসহ অন্যান্য মাঝারি যানবাহন অবাধে চলাচল করছে। এতে ওঠে গেছে লোহার রং। সিটি করপোরেশন থেকে এলইডি বাল্ব লাগানো হলেও বর্তমানে সেগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে রাতের বেলা অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে ব্রিজের ওপর।

বাংলাদেশ পল্লী ফোরামের চেয়ারম্যান চৌধুরী আলী আনহার শাহান বলেন, ঐতিহ্যবাহী এ ব্রিজের নির্মাণশৈলী আর স্থায়িত্ব দেখে মুগ্ধ হন দেশের মানুষ। আমাদের প্রাণের এ শহরে ঘুরতে এলেই কিনব্রিজ দেখতে আসেন পর্যটকরা। তবে আফসোস! কালের সাক্ষী এ ব্রিজের চারপাশে অযত্নের ছাপ। ব্রিজের নিচে নিজেদের পরিবহণ দাঁড় করিয়ে রেখেছে সিলেট সিটি করপোরেশন। ব্রিজের ওপর বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হয়েছে গর্ত। ফলে দুর্ভোগ পোহাতে হয় পথচারীদের।

ব্রিজ দিয়ে নিয়মিত চলাচল করা সিলেটের ওসমানীনগর এলাকার বাসিন্দা কয়েস আহমেদ নামে এক তরুণ জানান, অনেক দিন ধরে ব্রিজের লাইটগুলো নষ্ট হয়ে আছে। অনেক জায়গায় গর্ত থাকায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। এছাড়া ছিনতাইকারীদের উৎপাতও রয়েছে।

তবে ব্রিজকে ঘিরে অপরাধ কর্মকাণ্ড যাতে না ঘটে সে ব্যাপারে পুলিশের নিয়মিত টহল অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে সিলেট মহানগর পুলিশের মিডিয়া বিভাগ।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. জহির বিন আলম বলেন, শুধু পথচারী কিংবা রিকশা চলাচল করলে এই ব্রিজটিকে হাজার বছর আমরা টিকিয়ে রাখতে পারব। কিনব্রিজ আমাদের সম্পদ, এতবড় একটি সম্পদকে গুরুত্বই কেন দেয়া হচ্ছে না বুঝে ওঠতে পারছি না।

এ ব্যাপারে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, কয়েকবার আধুনিকায়নের উদ্যোগ নিয়েছিলাম, হয়নি। সুরমার ওপর দুইপাশে আরো একাধিক ব্রিজ রয়েছে। অথচ কিনব্রিজে যান চলাচল বন্ধ করার পর একটি পক্ষ আন্দোলনের ডাক দেয়। বাল্ব, সড়কের গর্তসহ অন্য সমস্যাগুলো খুব তাড়াতাড়ি সমাধান করা হবে।