logo
আপডেট : ১৯ মার্চ, ২০২২ ১১:৫৯
পবিত্র শবেবরাত
ইবাদত-বন্দেগি ও তওবার রাত
নিজস্ব প্রতিবেদক

ইবাদত-বন্দেগি ও তওবার রাত

দৈনিক ভোরের আকাশ-সবার কথা বলে

আরবি শাবান মাস একটি পবিত্র মাস। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ মাসে বেশি বেশি নফল রোজা রাখতেন। রমজানের প্রস্তুতির মাস হিসেবে তিনি এ মাসকে পালন করতেন। এ মাসের একটি রাতকে মুসলমানরা বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। মধ্য শাবানের এই রাত মুসলিম উম্মাহর কাছে ‘শবেবরাত’ হিসেবে পরিচিত। শবেবরাতকে ‘ভাগ্যরজনী’ হিসেবেও অভিহিত করা হয়।


শবেবরাত মুসলমানদের কাছে লাইলাতুল বরাত নামেও পরিচিত। আরবি শব্দ ‘লাইলা’ অর্থ ‘রাত’। অন্যদিকে ফার্সি শব্দ ‘শব’ অর্থও ‘রাত’। আর ‘বরাত’ অর্থ ‘মুক্তি বা নিষ্কৃতি’। শাবান মাসের ১৪ তারিখের এ রাতকে ‘মুক্তির রাত বা নাজাতের রাত’ হিসেবে অবহিত করা হয়। এ রাতে সৃষ্টিকর্তার কাছে পাপ থেকে মুক্তি কামনা করে প্রার্থনা করা হয়। মহিমান্বিত এ রাতে মুসলিম উম্মাহ নফল নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত ও দোয়া করে থাকেন। এছাড়া অনেকেই এ রাতে বাবা-মাসহ আত্মীয়স্বজনের কবর জিয়ারত ও দোয়া করেন।


পবিত্র শবেবরাতের মহিমান্বিত রাতে মহান আল্লাহ তায়ালা বান্দার ভাগ্য নির্ধারণ করেন। মুসলমানরা মহান আল্লাহর রহমত ও নৈকট্য লাভের আশায় নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, জিকিরসহ বিভিন্ন ইবাদত বন্দেগির মাধ্যমে এ রাত অতিবাহিত করেন।


আল্লাহ তায়ালা এ রাতে বান্দাদের জন্য তার অশেষ রহমতের দরজা খুলে দেন। মহিমান্বিত এ রাতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা বিগত জীবনের সব ভুল-ভ্রান্তি ও পাপ-তাপের জন্য গভীর অনুশোচনায় আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।


বাঙালি মুসলিম সমাজে শবেবরাতের একটি আনন্দঘন সামাজিক দিকও রয়েছে। এদিন মুসলমানদের বাড়িতে সাধ্যানুযায়ী হালুয়া, পায়েস, রুটিসহ নানা উপাদেয় খাবার রান্না করা হয়। এসব খাবার আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীর বাড়িতে পাঠানো হয়, বিতরণ করা হয় গরিব-দুখীর মধ্যে। পুণ্য লাভের আশায় অনেকে মুক্ত হস্তে দান-খয়রাতও করে থাকেন।
শবেবরাতের বরকত, ফজিলত ও মর্যাদা হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। এ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহতায়ালা মধ্য শাবানের রাতে তার সৃষ্টির প্রতি দৃষ্টিপাত করেন এবং মুশরেক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত সবাইকে ক্ষমা করে দেন।’


আটজন সাহাবির সূত্রে বিভিন্ন সনদে উল্লিখিত হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে। এ হাদিস থেকে প্রমাণিত হয় যে, শবেবরাত ফজিলতময় এবং এ রাতে আল্লাহ তার বান্দাদেরকে ক্ষমা করে থাকেন। তবে, ক্ষমা পাওয়ার শর্ত হলো- শিরক ও বিদ্বেষ থেকে মুক্ত থাকা। এ দুটি বিষয় থেকে যারা মুক্ত থাকবেন, তারা কোনো অতিরিক্ত আমল ছাড়াই এ রাতের বরকত ও ক্ষমা লাভ করবেন। কিন্তু, শিরক ও বিদ্বেষ থেকে মুক্ত হতে না পারলে অন্য আমল দিয়ে ওই রাতের বরকত ও ক্ষমা লাভ করা যাবে না।


হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত- নবী করিম (সা.) বলেছেন, ১৪ শাবান দিবাগত রাত যখন আসে, তখন তোমরা এ রাতটি ইবাদত-বন্দেগিতে কাটাও এবং দিনের বেলায় রোজা রাখো; কেননা, এদিন সূর্যাস্তের পর আল্লাহতায়ালা দুনিয়ার আসমানে নেমে আসেন এবং আহ্বান করেন- কোনো ক্ষমাপ্রার্থী আছো কি? আমি ক্ষমা করব; কোনো রিজিকপ্রার্থী আছো কি? আমি রিজিক দেব; আছো কি কোনো বিপদগ্রস্ত? আমি উদ্ধার করব। এভাবে ভোর পর্যন্ত আল্লাহতায়ালা মানুষের বিভিন্ন প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করে আহ্বান করতে থাকেন। (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৩৮৪)।


শবেবরাতের রাত একটি পবিত্র রাত। মহিমান্বিত রাত। মহাসুযোগের রাত। প্রতিটি মুসলমানের উচিত ফজিলতময় এ রাতে দোয়া-মোনাজাতসহ বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল থাকা।

“শবেবরাত ফজিলতময় এবং এ রাতে আল্লাহ তার বান্দাদেরকে ক্ষমা করে থাকেন। তবে ক্ষমা পাওয়ার শর্ত হলো- শিরক ও বিদ্বেষ থেকে মুক্ত থাকা। এ দুটি বিষয় থেকে যারা মুক্ত থাকবেন তারা কোনো অতিরিক্ত আমল ছাড়াই এ রাতের বরকত ও ক্ষমা লাভ করবেন। কিন্তু শিরক ও বিদ্বেষ থেকে মুক্ত হতে না পারলে অন্য আমল দিয়ে ওই রাতের বরকত ও ক্ষমা লাভ করা যাবে না”