নীলফামারীতে বৈদ্যুতিক ফাঁদে একটি চিতাবাঘের মৃত্যু হয়েছে। ক্ষুধার্ত ওই বাঘটি রাতের অন্ধকারে মুরগি ব্যবসায়ী অলিয়ার রহমানের খামারে ঢুকতে চেষ্টা করলে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
শুক্রবার (১৮ মার্চ) জেলা সদরের চওড়াবড়গাছা ইউনিয়নের কাঞ্চনপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়দের দাবি, আরেকটি চিতাবাঘ লুকিয়ে আছে পার্শ্ববর্তী ভুট্টাক্ষেতে। তারা চিতাবাঘের গর্জন শুনতে পেয়েছে। এতে আতঙ্ক বিরাজ করছে স্থানীয়দের মধ্যে।
ওই চিতাবাঘটি উদ্ধারে কাজ করছে বনবিভাগ। আর মৃত বাঘটি উদ্ধার করে ইতোমধ্যে বনবিভাগে হস্তান্তর করেছে পুলিশ।
জানা গেছে, দীর্ঘ ৯ বছর ধরে মুরগির খামার করে আসছেন কাঞ্চনপাড়ার অলিয়ার রহমান। তার খামারে রয়েছে প্রায় ১০ হাজার মুরগি। গত দেড় থেকে দুই মাস ধরে মুরগি খেকো নানা প্রাণীর উৎপাতে চরম বিপাকে পড়েছেন তিনি। তাই এসব প্রাণীর উৎপাত ঠেকাতে বিস্তীর্ণ খামার জুড়ে বৈদ্যুতিক ফাঁদ পেতেছেন। আর এই ফাঁদে প্রাণ গেলো ভারত থেকে আসা ওই চিতা বাঘের।
অলিয়ার রহমান বলেন, ‘কিছুদিন ধরে আমার খামারের মুরগি চুরি যাচ্ছিল। অনেক সময় মুরগির মাথা ছিঁড়ে নিয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে। আমি ভেবেছিলাম, শিয়াল মুরগি নিয়ে যাচ্ছে। এ কারণে বৈদ্যুতিক ফাঁদ তৈরি করি। খামারের পেছনে বাঁশঝাড় ও ভুট্টাক্ষেত থাকায় এদিক দিয়ে শিয়াল আসে। তাই ওই দিকে ফাঁদটি পেতে রাখি। ওই ফাঁদে আটকা পড়ে চিতাবাঘটি মারা যায়। আরেকটির গর্জন শোনা গেছে।’
স্থানীয় কৃষক গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘এই খামারের পাশে ভুট্টাক্ষেতটি আমার। অলিয়ার ভাইয়ের খামারের বিদ্যুতের ফাঁদে জড়িয়ে একটি বাঘ মারা গেছে। আর একটি বাঘ আমার ভুট্টাক্ষেতে আছে।’
স্থানীয় বাসিন্দা রেজাউর করিম বলেন, ‘আমরা রাত-বিরাতে বাহিরে কাজে থাকি। না জানি কখন বাঘ আমাদের ওপর আক্রমণ করে। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’
চওড়াবড়গাছা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবুল খায়ের জানান, মৃত চিতাবাঘটিকে খামার এলাকা থেকে উদ্ধার করে নীলসাগরে নিয়ে আসা হয়। পরে এখান থেকে বন বিভাগের কর্মীরা সেটিকে নিয়ে যান। মৃত চিতাবাঘটির ময়নাতদন্ত শেষে নীলফামারী সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন নাহার বলেন, ‘দুটি বাঘের সন্ধান পাওয়া গেছে বলে শুনেছি। একটি বাঘ বৈদ্যুতিক ফাঁদে মারা গেছে। আরেকটা পার্শ্ববর্তী ভুট্টাক্ষেতে আছে। সেটি উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত আমি এখানকার স্থানীয়দের অনুরোধ করব, তারা যেন অতি উৎসাহী না হয়ে নিরাপদ দূরত্বে থাকে।’
তিনি আরো বলেন, ‘বন বিভাগের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে জানতে পারি যে মৃত বাঘটি ক্ষুধার্ত ছিল। তাই ধারণা করা হচ্ছে সঙ্গী বাঘটিও ক্ষুধার্ত। এ জন্য সকলকে অনুরোধ করব ওই স্থান ত্যাগ করতে।’
নীলফামারী বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল মোনায়েম বলেন, ‘মৃত চিতাবাঘটির ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। এ ঘটনায় নীলফামারী সদর থানায় একটি জিডি করা হয়েছে। এলাকায় আরও একটি চিতাবাঘ আছে এমন সন্দেহে সেটির খোঁজে ঢাকা ও রাজশাহী থেকে দুটি দল এসেছে। তারা এলাকায় অবস্থান করছে।’