logo
আপডেট : ২০ মার্চ, ২০২২ ০৯:৫৮
ঢাকায় মার্কিন পলিটিক্যাল সেক্রেটারি
সরাসরি অংশীদারত্বমূলক সম্পর্ক চায় যুক্তরাষ্ট্র
তরিকুল ইসলাম

সরাসরি অংশীদারত্বমূলক সম্পর্ক চায় যুক্তরাষ্ট্র

ভিক্টোরিয়া ন্যুল্যান্ড। ফাইল ছবি

তিন বছর পর রাজনৈতিক সংলাপে বসছে ঢাকা-ওয়াশিংটন। সংলাপে মানবাধিকার, সন্ত্রাসবাদ দমন ও নিরাপত্তা সহযোগিতাসহ বিভিন্ন বিষয় স্থান পাবে। কূটনীতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আলোচনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সামনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হলো মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার।

মার্কিন উদ্যোগ ‘ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি’ ও রিজিওনাল প্ল্যাটফর্মের বাইরে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ করতে তাৎপর্যপূর্ণ সফরে ঢাকা এসেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের রাজনীতিবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া ন্যুল্যান্ড। বাংলাদেশের সঙ্গে সরাসরি অংশীদারত্বমূলক সম্পর্ক চায় দেশটি।

আর এ কারণেই তিন বছর পর বাংলাদেশের মাটিতে আজ অষ্টম রাজনৈতিক সংলাপে বসছে ঢাকা-ওয়াশিংটন। এর আগে সর্বশেষ ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে সপ্তম সংলাপটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল। রাজনৈতিক সংলাপে মূলত উভয় দেশের মধ্যে সব ইস্যুতেই খোলামেলা আলোচনা হয়। যদিও এবারের আলোচনায় নতুন করে বাড়তি ইস্যু হিসেবে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি বোঝায় পরিণত হয়েছে।

বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ করতে ২০২০ সালের ১৪ অক্টোবর ঢাকা সফর করেন মার্কিন উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টিফেন বিগান। সে সময় তিনি সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সিরিজ বৈঠক করেন। বিগানের ঢাকার এনগেজমেন্টের মধ্য দিয়ে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রস্তাবিত অবাধ, মুক্ত, সমন্বিত, শান্তিপূর্ণ এবং নিরাপদ ইন্দো-প্যাসিফিক রিজিওন প্রতিষ্ঠার যে প্রয়াস, যা বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের কমন ভিশন, তা এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে বিস্তৃত আলোচনা হয়।

২০১২ সালে তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের ঢাকা সফরের সময় দুই দেশের মধ্যে প্রতি বছর অংশীদারি সংলাপ অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী ২০১৯ সাল পর্যন্ত নিয়মিত এ সংলাপটি চলমান ছিল। কোভিডের কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে সংলাপ হয়নি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, মানবাধিকার সুরক্ষা, বিচারবহির্ভূত হত্যা, গণতন্ত্র, গুম, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের কিছু ধারা, ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি, শ্রম নীতিমালার বাস্তবায়ন, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার তদন্ত, সন্ত্রাসবাদ দমন, সাইবার নিরাপত্তা ও নিরাপত্তা সহযোগিতাসহ বিভিন্ন বিষয় আলোচনায় স্থান পাবে। এর আগের বৈঠকেও এসব আলোচনা হয়েছে।

তিনি বলেন, জিএসপি স্থগিতাদেশ তুলে নেওয়া, মেরিটাইম, জ্বালানি ও কৃষি, বাণিজ্য সহযোগিতাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করবে বাংলাদেশ।

সংলাপে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (সিনিয়র সচিব) মাসুদ বিন মোমেন। মার্কিন প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন স্টেট ডিপার্টমেন্টের রাজনীতি বিভাগের আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড।

মার্কিন নিষেধাজ্ঞাকে বংলাদেশ চাপ হিসেবে না দেখলেও তা প্রত্যাহারে সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে জানিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘এপ্রিল মাসেও বাণিজ্য সংক্রান্ত বিষয়ে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের বৈঠক রয়েছে। এ ধরনের বৈঠকগুলোতে বাড়তি ইস্যু হিসেবে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা অব্যাহত থাকবে। কারণ এটা এখন আমাদের কাছে টপ ইস্যু।’

‘যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির কালচারটা ভিন্ন। তাদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে যে ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার সেগুলো আমরা নেব উল্লেখ করে তিনি বলেন, মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আমরা অনেক কিছুই করেছি বা করছি। বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক এগিয়ে যাবে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর টেলিফোন আলাপে বিষয়টি এরই মধ্যে পরিষ্কার হয়েছে।’

কূটনৈতিক সূত্র বলছে, বাংলাদেশ উভয় দেশের রাজনৈতিক সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু এবং যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে থাকা বঙ্গবন্ধুর দণ্ডপ্রাপ্ত খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ফেরাতেও বেশ গুরুত্ব দিচ্ছে। এ ছাড়া রোহিঙ্গা ও ইউক্রেন-রাশিয়া পরিস্থিতিও আলোচনায় স্থান পাবে।

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হকের মতে, ‘সর্বশেষ সংলাপে জেনারেল সিকিউরিটি অব মিলিটারি ইনফরমেশন এগ্রিমেন্ট (জিসমিয়া) সইয়ের বিষয়টি যেহেতু যুক্ত হয়েছিল। তাই এবারের সংলাপেও এই বিষয়ের অগ্রগতি নিয়ে এবারো আলোচনা হতে পারে।’

তিনি বলেন, সাধারণত ‘এ ধরনের আলোচনায় দুই দেশের সম্পর্কোন্নয়নের পাশাপাশি নীতি প্রণয়ন করা হয়। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয়ে উভয় দেশের অবস্থান পরিষ্কার করা হয়।’