logo
আপডেট : ২০ মার্চ, ২০২২ ১০:১১
বিএনপির ‘বৃহত্তর ঐক্য’ প্রক্রিয়ায় হোঁচট, নেপথ্যে ‘জাতীয় সরকার’ গঠন
এম সাইফুল ইসলাম

বিএনপির ‘বৃহত্তর ঐক্য’ প্রক্রিয়ায় হোঁচট, নেপথ্যে ‘জাতীয় সরকার’ গঠন

বিএনপির লোগো

দল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচনের দাবি আদায়ে সরকারের প্রতি চাপ সৃষ্টি করতে বিএনপি ‘বৃহত্তর ঐক্য’ গড়ে তোলার যে প্রক্রিয়া শুরু করেছিল তা শুরুতেই হোঁচট খেয়েছে। উদ্যোগের শুরুতে ধীরগতির নেপথ্যে চলছে নানা আলোচনা। জানা গেছে, কয়েকটি দল নির্বাচনের আগেই নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ‘জাতীয় সরকার’ গঠনের কথা বললেও বিএনপি তা চায় না। বিএনপি নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গেলে আওয়ামী লীগ ও তাদের জোটদের বাদ দিয়ে ‘জাতীয় সরকার’ গঠনের পক্ষে।

বিএনপির সঙ্গে বৃহত্তর জোট গঠনে আগ্রহী অনেকেই বলছেন, ভোটের আগে জাতীয় সরকার গঠন নিয়ে আলোচনা হতে পারে। আর এই বিষয়ে আলোচনা করতে চাইলেও বিষয়টিকে সন্দেহের চোখে দেখছেন বিএনপি নেতারা। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এক হাতে জামায়াতসহ ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো আর অন্য হাতে বামসহ সরকারবিরোধী দলগুওেলাকে নিয়ে ‘বৃহত্তর ঐক্য’ গড়তে জোর তৎপরতা চালিয়ে আসছে বিএনপি। জামায়াতের ব্যাপারে কৌশলী বিএনপি চলতি বছরের শুরু থেকেই এই তৎপরতা শুরু করে।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, ২০-দলীয় জোটের পাশাপাশি কয়েকটি ধর্মভিত্তিক দল ও বামদলগুলোকে সরকারবিরোধী অবস্থানে নিতে কাজও শুরু করেছে বিএনপি। গত মাসে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করতে দুই সদস্যের কমিটিও গঠন করে বিএনপি। অনানুষ্ঠানিকভাবে বিভিন্ন দল ও ব্যক্তির সঙ্গে বৈঠকও করে বিএনপির ওই দুই কমিটি। কমিটির নেতৃত্বে থাকা দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও গয়েশ^র চন্দ্র রায়ের বিভিন্ন দলের সঙ্গে বৈঠকের খবরও প্রকাশিত হয় গণমাধ্যমে। শুরুতে বেশ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছিল ‘বৃহত্তর ঐক্য’ গঠনের কাজ। গত মাসে এ বিষয়ে রূপরেখাও ঘোষণা করতে চেয়েছিল বিএনপি। কিন্তু হঠাৎ করেই এই প্রক্রিয়ায় গতিহীনতা দেখা গেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সরকারবিরোধী অবস্থানে থাকা কয়েকটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে কিছুদিনের জন্য জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব দেওয়ার পর থেকে নানা আলোচনা শুরু হয়। বিশেষ করে বেশ কিছুদিন থেকেই গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন, জেএসডির সভাপতি আ স ম আব্দুর রব, এলডিপির সভাপতি অলি আহমদ, কল্যাণ পার্টির সভাপতি মেজর সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমসহ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা জাতীয় সরকার নিয়ে আলোচনা করে আসছিলেন।

কিন্তু গত মাসে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর জাতীয় সরকারের বিষয়ে দেওয়া বক্তব্য নিয়ে বিএনপিতে সন্দেহের দানা বাঁধতে থাকে। ডা. জাফরুল্লাহর ওই বক্তব্যে বলেছিলেন, প্রয়োজনে জাতীয় সরকারে শেখ রেহানাকে রাখা যেতে পারে। বিএনপি মনে করে, এই প্রক্রিয়ায় বর্তমান সরকারের হাত থাকতে পারে। বিএনপি ‘বৃহত্তর ঐক্য’ গঠন প্রক্রিয়া বর্তমানে ‘জাতীয় সরকার’ ইস্যুতে হোঁচট খেয়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই। জাতীয় সরকার ইস্যু নিয়ে নতুনভাবে ভাবছে বিএনপি। মূল দাবি ঠিক রেখে কীভাবে সামনে এগোনো যায় তা নিয়েও কাজ করছে দলটি। দলটির নেতারা বলছেন, বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে যারাই রাজপথে আছে তাদের সঙ্গে যেকোনো প্রক্রিয়ায় হোক ঐক্য গড়বে বিএনপি।

বিষয়টি নিয়ে ভোরের আকাশের সঙ্গে কথা হয় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর। তিনি বলেন, যারা ক্ষমতায় আছে তাদের প্রতিনিধি রেখে কোনো জাতীয় সরকার হতে পারে না। কারণ, আমরা চাইছি দল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন। জাতীয় সরকারের যদি দল থাকে তাহলে সেটির নিরপেক্ষতা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠবে। দিন শেষে সবাই মিলে একটা ভালো পথ বের করে সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। বিএনপি নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জয় লাভ করে তাদের সঙ্গে থাকা সবাইকে নিয়ে সরকার গঠন করতে চায়। এ ছাড়া বিএনপি ঐক্য প্রক্রিয়ায় গতিহীনতার বিষয় তিনি বলেন, কারো কথা অনুযায়ী আজ বা কালই সব হয়ে যাবে বিষয়টি এমন নয়। এ বিষয়ে কাজ চলছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, বিএনপি কোনো অনির্বাচিত সরকারের পক্ষে নয়। কারণ এক-এগারোর সরকারের আমলে বিএনপি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া এক- এগারোর সরকারই আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা আসার পথ করে দিয়েছে। যারা নির্বাচনের আগে জাতীয় সরকার গঠন করতে চাইছেন তাদের উদ্দেশ্য কী সেটা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না এ বিষয়ে বলেন, নির্বাচনের আগে জাতীয় সরকার হওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। কারণ ইতোমধ্যে যারা জাতিকে নির্যাতন করে গুম-খুন অপহরণে লিপ্ত হয়েছে, সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে, তাদের নিয়ে জাতীয় সরকার হতে পারে না। তিনি বলেন, নির্বাচনের পর জাতীয় সরকারের কথা বলা বিএনপির দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপার। তারা হয়তো উদারতা দেখাতে চেয়েছে। এতে দলটি সবাইকে নিয়েই সরকার গঠনের কথা বলছে। জাতীয় সরকারের কাঠামো নিয়ে অন্য রাজনৈতিক দলকে নিয়েই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।

আগামী নির্বাচনের আগে জাতীয় সরকার চাওয়া একটি রাজনৈতিক দলের নেতা ভোরের আকাশকে বলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বিএনপি যদি ক্ষমতায় আসে তাহলে সরকার গঠনের বিষয়ে তাদের একক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। ওই সময় বিএনপির দেওয়া আগের কমিটমেন্ট ঠিক থাকা নিয়ে অনেকের মাঝে সন্দেহ রয়েছে। তাই তারা নির্বাচনের আগেই জাতীয় সরকার গঠন করে দেশের সার্বিক পরিবেশ স্থিতিশীল পর্যায় এনে ক্ষমতাকে যেন কেউ কুক্ষিগত করতে না পারে সেজন্য ভারসাম্য তৈরি করতে চান।