logo
আপডেট : ২০ মার্চ, ২০২২ ১২:০৮
সুদ নির্ধারণে স্বেচ্ছাচারিতা
স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে
নিজস্ব প্রতিবেদক

সুদ নির্ধারণে স্বেচ্ছাচারিতা

দৈনিক ভোরের আকাশ-সবার কথা বলে

ব্যাংক নয় এমন আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সুদ নির্ধারণে অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান ইচ্ছামতো সুদহার নির্ধারণ করছে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান বেশি সুদ নিচ্ছে। আবার কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান আমানতের চেয়ে কম সুদ নিচ্ছে। সুদ নির্ধারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা থাকলেও তা মানছে না অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান। এর ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা কমছে, বিঘ্নিত হচ্ছে গ্রাহকস্বার্থ। তা ছাড়া নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য তৈরি হচ্ছে অনিশ্চয়তা।


বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চারটি নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান আমানত সংগ্রহে দেওয়া সুদহারের চেয়ে কম সুদহারে ঋণ বিতরণ করছে। অন্যদিকে ছয়টি প্রতিষ্ঠান সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণ করছে- যা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ঝুঁকি তৈরি করছে।


বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘আমানতের চেয়ে বিতরণের সুদহার কম, উদ্যোক্তারা নিজেরাই ঋণ নেওয়ার কৌশল হিসেবে এটা করতে পারে। নিজেদের সুবিধার জন্য এটা করতে পারে। আমানতের সুদহারের চেয়ে বিতরণে সুদ কম, এটা বাস্তবে কোনোভাবেই সম্ভব নয়। বাংলাদেশ ব্যাংক কাছে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চাইতে পারে।’


শুক্রবার (১৮ মার্চ) দৈনিক ভোরের আকাশ ‘আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সুদ নির্ধারণে স্বেচ্ছাচারিতা’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। উক্ত প্রতিবেদন মতে, অবসায়নের প্রক্রিয়ায় থাকা পিপলস লিজিংসহ বেশ কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান এ হ-য-ব-র-ল অবস্থার জন্য দায়ী। প্রতিষ্ঠান আছে, ব্যবস্থাপনা আছে, আছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা কেন্দ্রীয় ব্যাংক; কিন্তু তারপরও দুর্বৃত্তরা বিপুল পরিমাণ লুটপাট করেছে। এসব লুটপাটের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের নামও এসেছে। আমানতকারীরা সর্বস্ব হারিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। এমনকি আদালতের হস্তক্ষেপেও পুরোপুরি টাকা ফেরত পাচ্ছেন না ভুক্তভোগী আমানতকারীরা।


বলা হচ্ছে, টিকে থাকার জন্য নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এটা করতে পারে। তবে টিকে থাকার জন্য এটা যথেষ্ট নয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, কোনো কোনো ঋণ কম সুদে বিতরণ করছে, কোনো কোনোটি আবার বেশি সুদে বিতরণ করছে। এ কারণে এমনটা হতে পারে। এক্ষেত্রে গড় হিসাবে ঋণাত্মক সুদহার হচ্ছে। এভাবে কোনো প্রতিষ্ঠান বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব নয়।


বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২৯টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আমানত সংগ্রহের গড় হার ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ। বিতরণ ১০ দশমিক ৫৯ শতাংশ। গড় সুদহার ৩ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। এর মধ্যে চারটি প্রতিষ্ঠানে আমানত সংগ্রহে আমানতের চেয়ে বিতরণের সুদহার বেশি। এ প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- উত্তরা ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্ট লিমিটেড, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি লিমিটেড, ফার্স্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্ট লিমিটেড এবং এফএএস ফাইন্যান্স লিমিটেড।


বিপরীত চিত্রও আছে। বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান সর্বোচ্চ সুদহার নিচ্ছে। গ্রাহকদের ওপরও চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে সর্বোচ্চ সুদহার। নিয়ন্ত্রক সংস্থা তথা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সুদহার বেঁধে দেওয়া হলেও নির্দেশনা মানছে না এসব প্রতিষ্ঠান।


ব্যাংকের পাশাপাশি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে অর্থনীতির চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অর্থনৈতিক উন্নতির প্রশ্নে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ বিতরণ ও সুদ নির্ধারণ সুষম হওয়া অপরিহার্য। কাজেই আমানতকারী কিংবা প্রতিষ্ঠানগুলোর টিকে থাকার নিজস্ব স্বার্থে; সর্বোপরি সবার সুবিধা নিশ্চিতে ঋণ বিতরণ ও সুদ নির্ধারণে স্বেচ্ছাচারিতা দূর করতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে স্বচ্ছতা।

“প্রতিষ্ঠান আছে, ব্যবস্থাপনা আছে, আছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা কেন্দ্রীয় ব্যাংক; কিন্তু তারপরও দুর্বৃত্তরা বিপুল পরিমাণ লুটপাট করেছে। এসব লুটপাটের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের নামও এসেছে। আমানতকারীরা সর্বস্ব হারিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। এমনকি আদালতের হস্তক্ষেপেও পুরোপুরি টাকা ফেরত পাচ্ছেন না ভুক্তভোগী আমানতকারীরা”