বাউন্সি উইকেট। পেসারদের দাপট। এমন শঙ্কা মাথায় রেখে প্রথম ওয়ানডেতে বাংলাদেশের দুই ওপেনার তামিম ও লিটন মাটি কামড়ে পড়েছিলেন। লক্ষ্য ছিল দ্রুত উইকেট না দেওয়া। সে দিক থেকে সফল ছিলেন দুজন। উদ্বোধনী জুটিতে দুজনে তুলেছিলেন ৯৫ রান, ওভার খেলেছিলেন ২১.৩। তার পরের ঘটনা সবার জানা। লিটনের ফিফটি, সাকিবের ফিরে আসা, তরুণ ইয়াসিরের প্রথম ফিফটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়েছিল বাংলাদেশ। জয় এসেছিল ৩৮ রানে।
দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশের একই দল। তবে ভেন্যু বদল। সেঞ্চুরিয়নের পরিবর্তে জোহানেসবার্গ। কিন্তু ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের টপ অর্ডার ভুগল রান খরায়। যার প্রভাব পড়ল ইনিংসে। টপ অর্ডারের পাঁচ ব্যাটারের মধ্যে একজন রানের খাতাই খুলতে পারেননি। দুজন ছুঁতে পারেননি দুই অঙ্কের রান। লিটন ও মুশফিক চেষ্টা করলেও ছুতে পারেননি বিশের ঘরের রান।
জন্মদিনে তামিম ব্যাট হাতে রাঙাতে পারতেন। কিন্তু ১ রানেই তিনি বিদায়। সাকিব ছয় বল খেললেন, নামের পাশে বড় শূন্য। অথচ আগের ম্যাচেই তিনি করেছিলেন ৭৭ রানের ঝলমলে ইনিংস। লিটন ১৫, মুশফিক ১১। ১৪ বলে ইয়াসির করতে পারলেন দুই রান। টপ অর্ডারের পাঁচ ব্যাটারের রান যোগ করলে দাঁড়ায় ২৯ রান। ভাগ্য ভালো শেষের দিকে আফিফ, মাহমুদউল্লাহ ও মিরাজ কিছু রান পেয়েছিলেন। না হলে দেড়শর আগেই হয়তো গুটিয়ে যেত ইনিংস। তারপরও শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ করতে পারে ৯ উইকেটে ১৯৪ রান।
টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে তৃতীয় ওভারেই প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এনগিডির লাফিয়ে ওঠা বল তামিমের ব্যাট ছুঁয়ে ক্যাচ জমে মাহারাজের হাতে। ৪ বলে মাত্র ১ রান করে ফেরেন বার্থডে বয় তামিম। ওয়ান ডাউনে নামা সাকিবও সুবিধা করতে পারেননি। পরের ওভারেই তিনি নেন বিদায়। ৬ বল খেলেও রানের খাতা খুলতে পারেননি আগের ম্যাচের নায়ক। রাবাদার বলে তিনি ক্যাচ দেন ভেরিনের হাতে। ৮ রানে দুই উইকেট নেই বাংলাদেশের। ভরসা ছিল লিটনের ওপর। পারেননি তিনিও থিতু হতে। দলীয় ২৩ রানে তিনি রাবাদার শিকার। ২১ বলে ১৫ রানের মন্থও ইনিংসের পর ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে ককের গ্লাভসে।
এক প্রান্ত আগলে রেখে খেলার চেষ্টা করছিলেন অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহীম। তার সঙ্গে তরুণ ইয়াসির আলী। যার ব্যাটে গত ম্যাচে এসেছিল ফিফটি। এই জুটি জমেনি। ১২তম ওভারে রাবাদার বলে মাহারাজের হাতে ক্যাচ দেন ইয়াসির। ১৪ বলে মাত্র দুই রান করেন তিনি।
পরের ওভারে বিদায় নেন মুশফিকুর রহীম। পারনেলের বলে এলবির শিকার হন তিনি। ৩১ বলে কোনো বাউন্ডারি ছাড়া ১২ রান করে ফেরেন সাম্প্রতিক সময়টা খারাপ যাওয়া মুশফিক। ৩৪ রানে পাঁচ উইকেট হারিয়ে কাঁপছে তখন বাংলাদেশ। এমন অবস্থায় ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে হাল ধরার চেষ্টা করেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও আফিফ হোসেন। অনেকটা সফলও তারা।
৭৪ বলে মাহমুদউল্লাহ ও আফিফ হোসেন উপহার দেন প্রথম পঞ্চাশ ছোঁয়া জুটি। শেষ পর্যন্ত এই জুটি ভাঙেন দলে ফেরা প্রোটিয়া স্পিনার তাবরাইজ শামসি। তার ফাঁদে পা দেন মাহমুদউল্লাহ। লেগে ঘুরানোর চেষ্টায় ধরা পড়েন লেগ স্লিপে। বাঁহাতি রিস্ট স্পিনারের বলে ব্যাটের কানায় লেগে আসা ক্যাচ হাতে জমান ইয়ানেমান মালান। ভাঙেন ৮৭ বল স্থায়ী ৬০ রানের জুটি। কঠিন সময় পার করে দিয়ে বাজে শটে থামেন মাহমুদউল্লাহ। তিনটি চারে ৪৪ বলে তার রান ২৫।
এরপর আফিফের সঙ্গে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন মেহেদী হাসান মিরাজ। দলের ভীষণ বিপদের সময় নেমে দারুণ ব্যাটিংয়ে ফিফটির দেখা পান আফিফ হোসেন। ৭৯ বলে এসেছে তার ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় পঞ্চাশ।
ফিফটির পরও আফিফ ছিলেন দুরন্ত। সঙ্গে মিরাজও দিচ্ছিলেন দারুণ সঙ্গ। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির আভাস দিচ্ছিল আফিফের সামনে। তবে এতেই যেন বাধ সাধেন প্রোটিয়া পেসার রাবাদা। তিনিই ভাঙেন ১১২ বলে ৮৬ রানের জুটি।
রাবাদার বলে প্রোটিয়া অধিনায়ক বাভমার হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন আফিফ। ১০৭ বলে তার ব্যাটে আসে ইনিংস সর্বোচ্চ ৭২ রান। হাঁকিয়েছেন নয়টি চার। নেই কোনো ছক্কা। ৪৫.৩ ওভারে বাংলাদেশের রান তখন ৭ উইকেটে ১৮০। এরপর স্কোর শিটে এক রান যোগ হতেই বিদায় নেন মেহেদী হাসান মিরাজও। একই ওভারের পঞ্চম বলে তিনি ক্যাচ দেন ডেভিড মালানের হাতে। ৪৯ বলে দুই ছক্কা ও এক চারে ৩৮ রান করেন মিরাজ।
বল হাতে আগুন ঝড়ান দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার ক্যাগিসো রাবাদা। ১০ ওভারে ৩৯ রানে তিনি তুলে নেন ৫ উইকেট। এনগিডি, পারনেল, শামসি ও ডসন নেন একটি করে উইকেট।
বাংলাদেশ স্কোয়াড : লিটন দাস, তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহীম, মাহমুদউল্লাহ, ইয়াসির আলী, আফিফ হোসেন, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান।