গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত স্বাস্থ্য ব্যবস্থার যে অবকাঠামো গড়ে উঠেছে তা প্রশংসনীয়। কিন্তু কিছু সমস্যার কারণে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ফলাফল মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না। জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নত করতে পারলে সেখানেই ৬০ থেকে ৭০ ভাগ রোগীর মানসম্মত চিকিৎসা দেয়া সম্ভব।
'বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা: বর্তমান চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ পথরেখা' নির্ণয়ে করা গবেষনার প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়।
রোববার (২০ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও এ অনুষ্ঠানটি আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে গবেষনার উপস্থাপনের সঙ্গে ছয়টি সুপারিশ তুলে ধরেন আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক উপ-কমিটির সভাপতি ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী, সাতক্ষীরা-৩ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডাঃ আ ফ ম রুহুল হক।
ডাঃ আ ফ ম রুহুল হক বলেন, উপজেলা হাসপাতালের পদ থাকা সত্ত্বেও বেশিরভাগ পদগুলো খালি থাকে। স্থানীয়ভাবে শুন্য পদগুলোতে সাথে সাথে নিয়োগ দেওয়া সম্ভব। অনেক দেশেই এই ব্যবস্থা আছে। আমাদের জন্য কোন ব্যবস্থাটি সঠিক তা নির্ধারণ করতে হবে। নানাবিধি অসুবিধার কারনে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বিষেশায়িত হাসপাতালে অনেক বেশি রোগীর ভিড় থাকায় রোগীদের মানসম্মত চিকিৎসা দেয়া যাচ্ছে না। উপজেলা হাসপাতালে রোগীরা ডাক্তার পায়না, ঠিকমত ওষুধ পায়না, ফলে তারা জেলা ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভীড় করে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর দিক নির্দেশনায় বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় যে উন্নয়ন হয়েছে তা একটি মাইলফলক। অর্থনৈতিক সুব্যবস্থাপনা দ্বারা দেশ এগিয়ে গেছে। সামাজিক নিরাপত্তা বেড়েছে। কৃষিতে অভূতপূর্ব উন্নয়ন, শিক্ষা ব্যবস্থা পরিবর্তনের সাথে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অনেক উন্নতি সাধিত হলেও সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে আমাদের স্বাস্থ্য সেবা সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারছে না। তাই স্বাস্থ্য সেবার মান নিয়ে জনগনের অভিযোগ থেকেই যাচ্ছে।
স্বাস্থ্য ব্যবস্বাপনার পূণর্গঠনের ছয়টি সুপারিশ তুলে ধরেন আ ফ ম রুহুল হক।
১. স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় পদ সৃষ্টি করা হলেও সে অনুযায়ী জনবল নেই, অব্যবস্থাপনা শুরু হয়েছে এখানেই। জনবলের নিয়োগের কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনার জন্য প্রয়োজনীয় জনবল সঠিক সময়ে নিয়োগ দেওয়া হয় না। জনবল (ডাক্তার, নার্স, প্যারামেডিকস, ল্যাব-টেকনিশিয়ান) নিয়োগের ব্যবস্থাপনা বিকেন্দ্রীকরণ না করলে এই অব্যবস্থাপনার সমাধান হবে না। বিকেন্দ্রীকরণের ধাপ নিয়ে আলোচনা ও গবেষণা করে নির্ধারিত করতে হবে।
২. চিকিৎসা শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়ে নবীন চিকিৎসকদের ক্যারিয়ার তৈরী করার জন্য চিকিৎসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে চার ভাগে বিন্যাস করতে হবে। যেমন: ক্লিনিসিয়ান, শিক্ষক, প্রশাসন ও রোগ প্রতিরোধক।
৩. চিকিৎসা সেবায় কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র হয়ে রোগীরা উপজেলা ও জেলা ভিত্তিক ইনডোর স্বাস্থ্যসেবা পেতে ডিজিটাল রেফারেল সিস্টেম চালু করতে হবে। অপেক্ষাকৃত জটিল রোগের জন্য উপজেলা থেকেই জেলা, বিভাগীয় ও বিশেষায়িত হাসপাতাল গুলোতে রেফারেল সিস্টেমের মাধ্যমে রোগী পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
৪. হাসপাতালের যন্ত্রপাতি ক্রয় ব্যবস্থাপনা ও মেরামতের জন্য রোগীর সেবা ব্যাহত হয়। এই ব্যবস্থার সুষ্ঠু পরিচালনা করতে হলে মেরামতের ব্যবস্থার জন্য অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ান ও ইঞ্জিনিয়ার দিয়ে বিকেন্দ্রীকরণ করে দ্রুত সময়ে সকল যন্ত্রপাতি মেরামত করতে হবে এবং এই ব্যবস্থাকে মনিটরিংয়ের আওতায় আনতে হবে। এর জন্য বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগকে শক্তিশালী করতে হবে।
৫. হাসপাতালের পরিবেশ উন্নতির জন্য পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা অপরিহার্য। বাস্তব রোগী এবং রোগীদের সাথে আত্মীয়স্বজনের কথা চিন্তা করে সে অনুযায়ী টয়লেট ও পরিচ্ছন্নকর্মী নিয়োগ ও তদারকির জন্য জনবল জরুরি।
৬. হাসপাতালের সেবা সর্ম্পকে তথ্য প্রদানের এবং তত্বাবধায়নের জন্য জনবল নিয়োগ দিতে হবে। এরা রোগীদের সাথে ’পাবলিক রিলেশন’ এর ভুমিকা পালন করবে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন-বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী।
আরো বক্তব্য রাখেন-প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী, প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ।