কথায় আছে, রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয় আর উলুখাগড়ার প্রাণ যায়। বাস্তবিক, যুদ্ধ বাধে রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের, কিন্তু তার অভিঘাতে তছনছ হয়ে যায় সাধারণ মানুষের জীবন।
যুদ্ধ তাদের কাউকে শিকড় থেকে উৎখাত করে দেয়, কাউকে বিচ্ছিন্ন করে নিজের পরিবার পরিজনের কাছ থেকে, আর কারও জীবনটাই ফুরিয়ে যায় যুদ্ধের আগুনে।
সম্প্রতি যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মুখোমুখি হয়েছে ইউক্রেন, সেখানে এই চিরন্তন সত্যকেই ফের উপলব্ধি করছেন সেদেশের মানুষ। দেখতে দেখতে একুশ দিনে পা দিল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ।
যুদ্ধের পরিণতি কোনদিকে গড়াবে, তা নিয়ে কেবল এই দুই দেশ নয়, গোটা বিশ্বই উদ্বিগ্ন। আর এই পরিস্থিতিতেই আরও আশঙ্কার খবর শোনাল ইউনিসেফ।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের ২৪ তারিখ। হঠাৎই ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে রাশিয়া। আক্রমণ আছড়ে পড়ে রাজধানী কিয়েভের উপর।
তার পর থেকেই প্রাণভয়ে দেশ ছেড়ে পালাতে শুরু করেন দলে দলে মানুষ। বিগত কয়েকদিনে ৩০ লক্ষেরও বেশি মানুষ ইউক্রেন ছেড়েছেন বলে খবর। আর তার মধ্যে প্রায় অর্ধেকই নাবালক।
আর সেই পরিসংখ্যানের ভিত্তিতেই রাষ্ট্রপুঞ্জ এবার জানাল, প্রতি মিনিটে উদ্বাস্তু হয়ে যাচ্ছে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের ৫৫ জন শিশু, অর্থাৎ সংখ্যাটা পৌঁছে গিয়েছে সেকেন্ডে প্রায় একজনে।
ইউনাইটেড নেশনসের রিফিউজি এজেন্সির মতে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এমন বিপুল উদ্বাস্তু সমস্যা আর দেখা যায়নি।
আর এখনও উদ্বাস্তু মানুষের মিছিল অব্যাহত। তা থামার কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না বলেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইউনিসেফ।
যে কোনও যুদ্ধের কোল্যাটারাল ড্যামেজ হিসেবে অনিবার্য হয়ে আসে উদ্বাস্তু সমস্যা। এদিকে সক্ষম পুরুষদের বাধ্যতামূলকভাবেই যুদ্ধে যোগ দিতে হয়, ফলে তাদের দেশ ছাড়ারও অনুমতি মেলে না।
কিন্তু তাদের পরিবার কেবল উদ্বাস্তুই হয় না, প্রিয়জনের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার যন্ত্রণাও ভোগ করতে হয় তাদের। যে শিকড় ছেঁড়ার যন্ত্রণা এখন ইউক্রেনের অসংখ্য শিশুর নিয়তি।
সূত্র: বিবিসি