কল্পনাকেও হারিয়ে দিলো জাভির বার্সেলোনা। মেসি পিএসজিতে যাওয়ার পর বার্সেলোনার অবস্থা নাজুক। আর এল ক্ল্যাসিকো মানেই রিয়াল মাদ্রিদের জয় আর বার্সেলোনার খেলোয়াড়দের মাথা নিচু করে মাঠ ছাড়া। আর বার্নাব্যুতে হলে তো কথাই নেই। লজ্জার বোঝাটা আরো ভারী হয়। কিন্তু রোববার রাতে রিয়াল মাদ্রিদের মাঠে অনুষ্ঠিত এল ক্ল্যাসিকোতে ঘটেছে অভাবনীয় ঘটনা। জাভির বার্সেলোনা নয়, লজ্জায় ডুবেছে রিয়াল মাদ্রিদ।
শিরোপা লড়াইয়ে এগিয়ে থাকা রিয়াল মাদ্রিদকে হতবাক করে একের পর এক গোল করেছে বার্সেলোনা। জয় পেয়েছে ৪-০ গোলে। রিয়াল মাদ্রিদের কাছে টানা পাঁচ হারের পর বার্সেলোনার এই ঘুরে দাঁড়ানো। ২০১৯ সালের পর চির প্রতিদ্বন্দ্বী দলটির বিপক্ষে বার্সেলোনার এ জয়।
বার্সেলোনার এ জয়ের রূপকার ছিলেন পিয়েরে ইমেরিক আউবামেয়াং। জোড়া গোল করেছেন তিনি। এছাড়া গোলের খাতায় নাম লিখিয়েছেন রোনাল্ড আরাউজো এবং ফেরান টরেস। গোল করতে পারেননি তবে দলের জয়ে ভূমিকা কম ছিল না ওসামানে দেম্বেলের। এ বছরের শুরু থেকে দারুণ খেলা দেম্বেলে প্রথম দুই গোলের রূপকার ছিলেন।
এ জয়ের ফলে বার্সেলোনা শিরোপা জয়ের দৌড়ে ফিরে এসেছে তা নয়। তবে একটু হলেও তারা শিরোপা লড়াইয়ে নিজেদের শামিল করেছে। অন্যদিকে হার সত্ত্বেও রিয়াল মাদ্রিদ পয়েন্ট টেবিলে নেতৃত্ব দিচ্ছে। ২৯ ম্যাচ শেষে রিয়াল মাদ্রিদের সংগ্রহ ৬৬। সমান ম্যাচ ৫৭ পয়েন্ট নিয়ে সেভিয়া রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে। আর বার্সেলোনার ২৮ ম্যাচে ৫৪ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। অ্যাতলেতিকো মাদ্রিদের পয়েন্টও ৫৪। তবে তারা খেলেছে ২৯ ম্যাচ। পয়েন্টের হিসেবে রিয়ালের সঙ্গে বার্সেলোনা আরো তিন পয়েন্ট কমানোর সুযোগ রয়েছে।
রিয়াল মাদ্রিদের এমন দূরাবস্থার কারণ ইনজুরি। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা করিম বেনজেমা এ ম্যাচে মাঠে নামতে পারেননি। তেমনি দলে ছিলেন না ফেরল্যান্ড মেনডি। ফলে নির্ভর করতে পারেন এমন কোনো স্বীকৃত কোনো স্ট্রাইকারকে মাঠে নামাতে পারেননি।
জাভির ছোঁয়ায় উজ্জ্বীবিত বার্সেলোনা বাঁশি বাজার শুরু থেকেই মাঠে সৌরভ ছড়াতে থাকেন। তারই সুবাদে তারা একের পর এক গোল পেয়েছে। আউবামেয়াং ২৯ মিনিটে প্রথম গোল করেন। তার আগেই অবশ্য গোলের ভালো সুযোগ পেয়েছিল বার্সেলোনা। কিন্তু সে সুযোগটি তারা কাজে লাগাতে পারেনি।
৫১ মিনিটে আউবামেয়াং দ্বিতীয় গোল করেন। তার আগে প্রথমার্ধের শুরুতে রোনাল্ড আরাউজো দ্বিতীয়বারের মতো বার্সেলোনার সমর্থকদের আনন্দে ভাসিয়ে দেন। দুই গোলে এগিয়ে থাকার আনন্দে নিয়ে বার্সেলোনা বিরতিতে গিয়েছিল। বিরতির পরপরই ফেরান টরেস আবার বার্সেলোনার সমর্থকদের উৎসব করার সুযোগ করে দেন।
কয়েক দিন আগে শিরোপা লড়াইয়ে নিজেদের দেখার সম্ভাবনা বাতিল করে দিলেও রিয়াল মাদ্রিদেও বিপক্ষে এ জয়ের পর একটু হলেও স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। ম্যাচ শেষে কোচ জাভি বলেন, ‘শিরোপা জিততে পারবো কিনা তা আমরা জানি না। তবে শিরোপা জয়ের সম্ভাবনা আমরা বাতিল করছি না। হয়তো আমরা একটু দেরিতে লড়াই শুরু করেছি। তবে রিয়ালের বিপক্ষে এ জয় আমাদের বড় প্রাপ্তি। কোচ হিসেবে যেমন আমার আনন্দের দিন তেমনি সমর্থক হিসেবেও।’
জাভি আরো বলেন, আমরা পাঁচ থেকে ছয়টি গোল করতে পারতাম। আগের কয়েটি ক্ল্যাসিকোতে হারের পর আমরা আমাদের নেতিবাচক মানসিকতা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছি।’
রিয়াল মাদ্রিদকে হারানোর পর মিডফিল্ডার সার্জিও বুস্কেটসও শিরোপা স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। তিনি বলেন, ‘যদি আমাদের সম্ভাবনা খুবই কম তবে সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা শেষ পর্যন্ত লড়াই করবো। এটা খুবই কঠিন তবে ফুটবলে অনেক কিছু ঘটতে পারে। আর আমাদের দলটির নাম বার্সেলোনা।’
এদিকে হারের জন্য রিয়াল মাদ্রিদ কোচ কার্লো আনচেলোত্তি নিজেকেই দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, এটা ছিল আমারই দোষ। তবে আমি আশা করবো ছেলেরা এ ঘটনা ভুলে যাবে এবং সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।
গত নভেম্বরে রোনাল্ড কোম্যানের পরিবর্তে জাভি দলের দায়িত্ব নেওয়ার পর বার্সেলোনা যেনো পুনর্জীবন পেয়েছে। এ সময়ে লা লিগায় একটা মাত্র ম্যাচ হেরেছে। আর সে হারটা তারা হেরেছিল তিন মাস আগে।