logo
আপডেট : ২১ মার্চ, ২০২২ ০৮:৫০
শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণা আজ
শুরু হবে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের আনুষ্ঠানিক যাত্রা
নিজস্ব প্রতিবেদক

শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণা আজ

পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। ছবি- ভোরের আকাশ

পটুয়াখালীতে দেশের সবচেয়ে বড় পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হবে আজ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সোমবার ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উদ্বোধন করবেন। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে দেওয়া প্রতিশ্রুতি ‘শতভাগ’ বিদ্যুতায়নের ঘোষণা করবেন। এর মধ্য দিয়ে দেশের শতভাগ বিদ্যুতায়ন বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। অর্থাৎ বিদ্যুৎ নেটওয়ার্কের আওতায় আসছে পুরো দেশ। এর মাধ্যমে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি গ্রাহক বিদ্যুৎ সংযোগের আওতায় আসবে। পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র ঘিরে বদলে যাবে দক্ষিাণাঞ্চলের অর্থনৈতিক চালচিত্র। এর ফলে দক্ষিণাঞ্চল তৃতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চলে পরিণত হবে।

বিদ্যুৎ বিভাগের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, দেশের সব জেলা প্রশাসককে চিঠি দেওয়া হয়েছে নিজ নিজ জেলার বিদ্যুতায়নের খবর বিদ্যুৎ বিভাগে পাঠাতে। জেলা প্রশাসকরা তাদের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে নিশ্চিত করেছেন শতভাগ বিদ্যুতায়নের বিষয়টি।

প্রধানমন্ত্রীর সফর কর্মসূচি ঘিরে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসন। এদিকে প্রধানমন্ত্রীকে বরণে প্রস্তুত করা হয়েছে রংবেরংয়ের ২২০টি নৌকা। প্রতিটি নৌকায় ৫ জন করে ১১শ’ জেলে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাবেন। পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী আলমগীর বলেন, ‘এই তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ঘিরে আমাদের দক্ষিণাঞ্চলে ইপিজেড হবে। জাহাজ নির্মাণ কারখানাটিও এই তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিকে ঘিরে।’

শতভাগ বিদ্যুতায়নের বিষয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা পাঁচগুণ বেড়েছে। ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিদ্যুৎসহ দেশে এখন ক্ষমতা ২২ হাজার ৫১৪ মেগাওয়াট। আরো ১৩ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন অবস্থায় আছে। বিদ্যুতায়ন এখন ৯৯ দশমিক ৮৫ ভাগ, একে শতভাগই বলা যায়। সারা দেশে এখন আমাদের গ্রাহক সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৩ কোটি।

দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে সরকার এক দশক আগে বেশ কয়েকটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরের সময় ২০১৪ সালে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ চুক্তি সই হয়। পরে গঠিত হয় বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল)। বাংলাদেশের নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি (এনডব্লিউপিজিসিএল) ও চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি এক্সপোর্ট অ্যান্ড ইমপোর্ট করপোরেশনের (সিএমসি) সমান অংশীদারে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়েছে।

পায়রায় বিসিপিসিএল এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করেছে। প্রতিটি কেন্দ্রে ৬৬০ মেগাওয়াটের দুটি করে ইউনিট রয়েছে। এক হাজার একর জমির ওপর নির্মিত বিদ্যুৎকেন্দ্রটির প্রথম ফেজ নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২ দশমিক চার পাঁচ বিলিয়ন ডলার। কেন্দ্রটি চালু রাখতে প্রতিদিন দরকার হবে ১৩ হাজার মেট্রিক টন কয়লা। ১০ বছরের চুক্তির আওতায় ইন্দোনেশিয়া থেকে এই কয়লা আমদানি করা হবে।

উল্লেখ্য, সরকার দেশে একশ অর্থনৈতিক অঞ্চল বাস্তবায়নে কাজ করছে। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিদ্যুৎসেবা নিশ্চিত করতে মাস্টারপ্ল্যান করেছে। যার ধারাবাহিকতায় বেশকিছু বড় বিদ্যুৎ প্রকল্প সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে বাস্তবায়ন করছে। আগামী দুই-তিন বছরের মধ্যে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে চলে আসবে। বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মধ্যে রয়েছে ভারত-বাংলাদেশের যৌথ মালিকানায় খুলনার বাগেরহাটে রামপাল ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, রাশিয়া-বাংলাদেশের যৌথ সহযোগিতায় নির্মিত রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। এ ছাড়া বেসরকারি মালিকানাধীন আর এক ডজন বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন রয়েছে। সরকার ২০৪০ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।