logo
আপডেট : ২১ মার্চ, ২০২২ ১০:৩৯
ঝিনাইদহে আমের বাগানে আসেনি কাঙ্ক্ষিত মুকুল
শাহারিয়ার রহমান রকি, ঝিনাইদহ

ঝিনাইদহে আমের বাগানে আসেনি কাঙ্ক্ষিত মুকুল

নির্ধারিত সময় পার হলেও এই আম বাগানের গাছগুলোতে মুকুল আসেনি। ছবিটি ঝিনাইদহ সদরের কাশিপুর এলাকা থেকৈ তোলা

নির্ধারিত সময় পেড়িয়ে গেলেও ঝিনাইদহের বিভিন্ন উপজেলার আম বাগানগুলোতে আসেনি কাঙ্ক্ষিত মুকুল। এতে চরম দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন বাগান মালিকরা। শতকরা ৩০ ভাগ বাগানের গাছে আসেনি মুকুল। কৃষি বিভাগ বলছে, এই গাছগুলোতে আর মুকুল আসবে না।

সাধারণত বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে মার্চের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত আম গাছে মকুল আসে। মুকুলের মধুর গন্ধে ভরে যায় বাগান। জেলায় সাধারণত হিম সাগর, আম্রোপালি, ল্যাঙড়া জাতের আম বেশি চাষ হয়ে থাকে।
কিন্তু নির্ধারিত সময়ের পরও যেমন মুকুল আসেনি তেমনি কিছুদিন আগের শিলাবৃষ্টিতে ঝরেছিল গাছের মুকুল।

অন্যদিকে গেল বছর মেলেনি আমের কাঙ্খিত দাম। যা কৃষকের চিন্তাকে বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুণ।

তবে জেলার গান্না, চন্ডিপুর, কোটচাঁদপুরের মঙ্গলপুরসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, যে বাগানের গাছগুলোতে মুকুল এসেছে তার অবস্থা অনেক ভালো। সেখানে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত পরিচর্যায় ব্যস্ত রয়েছেন বাগান মালিকরা।

বাগানগুলোতে দেখা যায়, কেউ মুকুলে কিটনাশক ছিটাচ্ছেন, কেউবা গাছের গোড়ার মাটির আদ্রতা ধরে রাখতে পরিষ্কার করে দিচ্ছেন আগাছা। কেউ বা ঘুরে ঘুরে দেখছেন বাগানের মুকুলের সর্বশেষ অবস্থা। কোথাও মুকুলের পরিবেশ খারাপ দেখলে কিংবা পোকার সংক্রমণের লক্ষণ দেখলে ছিটাচ্ছেন প্রয়োজনীয় কিটনাশক।

চন্ডিপুর গ্রামের আম বাগানে কাজ করা শ্রমিক নয়ন হোসেন জানান, গাছের গোড়া থেকে নিড়ানি দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করে দেওয়া হচ্ছে। আগাছা না থাকলে গাছের গোড়ার মাটি শুকাবে না। ফলে প্রয়োজনীয় আদ্রতা বজায় থাকবে।

আরেক শ্রমিক ফারুক বলেন, ‘এখন মুকুল এসেছে, পরিবেশও ভালো। তাই মুকুলে যেন ছত্রাক বা কোনো পোকা লেগে নষ্ট না হয় এ জন্য ছত্রাকনাশক ও কিছু কিটনাশক স্প্রে করা হচ্ছে।’

ঝিনাইদহ সদরের চন্ডিপুর গ্রামের আম বাগান মালিক আব্দুস সামাদ জানান, এবার বাগানের মুকুলের অবস্থা আশানুরূপ নয়। এর কারণ হিসেবে আমাদের কাছে মনে হচ্ছে আবহাওয়ার দিকটাই বড় সমস্যা।

‘আমার চারটি বাগানের চার শতাধিক গাছ রয়েছে। এর মধ্যে সন্তোষজনক মুকুল আছে ৫০ ভাগ গাছে। আর মুকুলগুলো এবার শেষের দিকে এসেছে, এটা ভয়ের একটা কারণ। কেননা শেষের দিকে মুকুল আসলে তা গাছে টিকতে চায় না। তবুও মুকুল রক্ষায় আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছি, পরিচর্যাও অনেক বেশি করছি’ বলেন আব্দুস সামাদ।

এই বাগান মালিক আরো জানান, গেল বছর আমের বাজার দাম একেবারেই কম ছিল। ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি বা তারও কম দামে আম বিক্রি করেছিলাম। এই দাম পেয়ে অনেকেরই উৎপাদন খরচও ওঠেনি। এবার যদি বাজার দাম ভালো পায় বা সরকার চাষিদের আমের বাজার দাম ভালো রাখার ব্যবস্থা নেয় তাহলে গেল মৌসুমের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারব।

কাশিপুর এলাকার বাগান মালিক আমির হামজা জানান, সাধারণত একটি মৌসুমে বাগানে পরিচর্যা বাবদ ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ হয়। আর ফলন ও দাম ভালো পেলে খরচের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি লাভ হয়। এবার মুকুল কিছুটা কম এসেছে। তবে যদি আবহাওয়া খারাপ না হয় তাহলে এতেই ভালো লাভ আসবে আমাদের।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা জুনায়েদ হাবিব জানান, আমে সাধারণত দেখা যায় একটি বছর ফলন ভালো হলে পরের বছর ফলন কম হয় বা একেবারেই হয় না। এখনো যেসব গাছে মুকুল আসেনি নতুন করে সেসব গাছে মুকুল আসার সম্ভাবনা নেই। বর্তমানে যে গাছগুলোতে মুকুল রয়েছে সেখানে ভালোভাবে পরিচর্যা করলে ফলনের কোনো ঘাটতি হবে না। তবে যে গাছগুলোতে মুকুল রয়েছে সেখানে কিটনাশক স্প্রে না করে মুকুলে আমের ছোট ছোট গুটি আসলে তখন কিটনাশক ও ছত্রাক নাশক স্প্রে করার পরামর্শ দেন তিনি।

তিনি আরো জানান, আম গাছের গোড়া থেকে ৪-৫ হাত দূরে দূরে ২০ থেকে ২৫ দিন পর পর সেচ প্রয়োগ করে মুকুলে গুটি আসলে সেখানে এমওপি, টিএসপি ও বোরন প্রয়োজনীয় অনুপাতে প্রয়োগ করতে হবে। তাহলে ফলনের হার অনেক বৃদ্ধি পাবে।

গেল বছর জেলায় ছয় হাজার ৯৩৭টি বাগান থেকে ৩৩ হাজার ৫১১ টন আম সংগ্রহ করা হয়েছিল। চলতি বছরের তথ্য এখনো দিতে পারেনি কৃষি বিভাগ।