নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীতে কার্গো জাহাজের ধাক্কায় যাত্রীবাহী লঞ্চডুবির ঘটনায় ৭ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এখনো ৫ ব্যক্তি নিখোঁজ রয়েছেন।
সোমবার (২১ মার্চ) সকাল ১০টার দিকে ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিস ও নৌ পুলিশের কাছে থাকা তালিকায় ওই পাঁচজনের নাম লিখিয়েছেন স্বজনরা।
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধানে নদীতে ডুবুরি দল কাজ করছে। সন্ধান না পাওয়া পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান চলবে।
এদিকে এ দুর্ঘটনায় নিহত ও নিখোঁজদের বাড়িতে বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।
জানা গেছে, মুন্সীগঞ্জের শিলমন্দি এলাকার আব্দুর রউফ দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। গতকাল রোববার ছেলের বউ আরিফা (৩২) নাতি সাফায়েতকে (দেড় বছর) নিয়ে নারায়ণগঞ্জের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে ডাক্তার দেখাতে গিয়েছিলেন তিনি। এরপর বাড়ি ফেরার পথে লঞ্চ দুর্ঘটনায় আব্দুর রউফ প্রাণে বাঁচলেও আরিফা ও সাফায়েত মারা যান। ওই দিন রাত ১২টায় স্থানীয় কবরস্থানে তাদের লাশ দাফন করা হয়। এ ঘটনায় শুধু আব্দুর রউফের বাড়ি নয়, পুরো এলাকায় চলছে শোকের মাতম।
আব্দুর রউফের ছেলে দ্বীন ইসলাম বলেন, ‘লঞ্চ দুর্ঘটনায় বউ ও ছেলেকে হারিয়েছি। এই নৌরুটে যত্রতত্র কার্গো জাহাজগুলো রাখা হয়। কিছুদিন আগেও আমাদের এলাকায় লঞ্চ দুর্ঘটনা ঘটেছে। কেন বার বার এই দুর্ঘটনা ঘটে? সরকারের কাছে স্বজন হারানোর বিচার চাই।’
একই দুর্ঘটনায় নিহত হন মুন্সিগঞ্জ সদরের উত্তর ইসলামপুর এলাকার হাজী জয়নাল। তার বোন ফাতেমা বলেন, ‘আমার ভাইয়ের ট্রলারের ব্যবসা রয়েছে। নারায়ণগঞ্জ থেকে আসার পথে কার্গো জাহাজের ধাক্কায় লঞ্চ ডুবে সে মারা গেছে। বার বার এই নৌরুটে লঞ্চ দুর্ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে প্রশাসনের নজর দেওয়া উচিত। এই দুর্ঘটনায় জড়িত সবার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
অপরদিকে এই লঞ্চ দুর্ঘটনায় এখনো নিখোঁজ রয়েছেন কুয়েত প্রবাসী হাতেম আলী। শারীরিক অসুস্থতার কারণে গত এক মাস আগে কুয়েত থেকে মুন্সীগঞ্জের বাড়িতে ফিরেন। চিকিৎসার জন্য রাজধানী ঢাকাতে যান তিনি।
রোববার সকালে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফেরার জন্য ‘এম এল আফাজ উদ্দিন’ নামের যাত্রীবাহী লঞ্চে উঠেন হাতেম আলী। তবে আর বাড়ি ফেরা হলো না তার। শীতলক্ষ্যা নদীতে কার্গো জাহাজের ধাক্কায় ডুবে যায় হাতেম আলীকে বহন করা লঞ্চটি। এরপর থেকেই নিখোঁজ তিনি।
নিখোঁজ হাতেম আলীর খোঁজে শীতলক্ষ্যা পাড়ে এসেছেন তার মেয়ে কাকলী। বাবার খোঁজে দিশেহারা তিনি। কিছুক্ষণ পর পর অঝোরে কাঁদছেন। শুধু কাকলী নয়, নিখোঁজ স্বজনদের কান্নায় যেন শীতলক্ষ্যা পাড়ের আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে গেছে।
কাকলী বলেন, ‘আমার বাবার মোবাইল বন্ধ পাইছি। টিভিতে দেখি মুন্সীগঞ্জের লঞ্চ ডুইবা গেছে। নদীর পাড়ে আইসা দেখি উদ্ধারের কাজ চলতাছে। আমার বাবারে পাইতাছি না, আমার বাবারে আইনা দেন। বাবাকে জীবিত অথবা তার লাশ চাই।’
গতকাল রোববার বেলা আড়াইটার দিকে নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীতে সিটি গ্রুপের মালিকানাধীন কার্গো রূপসী-৯-এর ধাক্কায় যাত্রীবাহী লঞ্চ ডুবে যায়। বেশির ভাগ যাত্রী সাঁতরে তীরে উঠতে সক্ষম হলেও নিখোঁজ ছিলেন কয়েকজন। আজ দুপুর পর্যন্ত এ ঘটনায় শিশুসহ ৭ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছে ৫ জন। মুন্সিগঞ্জের হোসেনদি এলাকা থেকে গতকালই কার্গো রূপসী-৯ জব্দ করেছে নৌ পুলিশ। কার্গোর মাস্টারকে আটক করা হয়েছে।
লঞ্চডুবির ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শামীম ব্যাপারীকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। এছাড়া নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব বজলুর রশিদকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।