logo
আপডেট : ২১ মার্চ, ২০২২ ১৮:৪৮
রমনার বটমূলে বোমা হামলা
বিস্ফোরক মামলায় আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থন ২৮ মার্চ
আদালত প্রতিবেদক

বিস্ফোরক মামলায় আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থন ২৮ মার্চ

রমনা বটমূলে বোমা হামলা। (ফাইল ছবি)

২১ বছর আগে রমনার বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলার ঘটনায় বিস্ফোরক আইনে দায়ের মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি পুলিশের পরিদর্শক আবু হেনা মো. ইউসুফ।

সোমবার (২১ মার্চ) ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান এই সাক্ষ্য নেন।

রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর আবু আব্দুল্লাহ ভুঞা এসময় সাক্ষীকে আদালতে সহায়তা করেন।

আসামিপক্ষে সাক্ষীকে জেরা করেন আইনজীবী মিজানুর রহমান ও মো. ফারুক আহাম্মদ।

এদিন মামলার তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হলে ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারায় আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য আগামী ২৮ মার্চ তারিখ নির্ধারণ করেন ট্রাইব্যুনালের বিচারক।

মামলার আসামিদের উপস্থিতিতে সাক্ষ্য দেওয়ার প্রয়োজনে এদিন সাত আসামিকে কাশিমপুর কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়।

ট্রাইব্যুনালের পেশকার মো. জুম্মন ভোরের আকাশকে বলেন, ‘রমনার বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলার ২১ বছর পর মামলার তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষীর মধ্যে দিয়ে শেষ হলো রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্য। অভিযোগপত্রে রাষ্ট্রপক্ষে মোট ৮৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ৫৪ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন।

আসামি পক্ষের আইনজীবী মো. ফারুক আহাম্মদ ভোরের আকাশকে বলেন, ‘রমনা বটমূলে বোমা হামলার ঘটনায় আট বছর আগে আটজনের মৃত্যুদণ্ড ও ছয় জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। তবে একই ঘটনায় করা বিস্ফোরক আইনের মামলায় দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হাজির করতে না পারায় এই মামলার বিচারকাজ বিলম্বিত হয়েছে। ’

এ ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আবু আব্দুল্লাহ ভুঞা ভোরের আকাশকে বলেন,‘রমনার বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলার ঘটনায় বিস্ফোরক আইনে করা মামলায় গত বছরের ৫ এপ্রিল মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক আবু হেনা মো. ইউসুফের সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ধার্য তারিখ থাকলেও করোনা অতিমারির কারণে আদালত বন্ধ থাকায় মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহণ সম্ভব হয়নি। সে সাক্ষ্য প্রায় একবছর পর আজ গ্রহণ করা হল। এতে আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য আদালত আগামী ২৮ মার্চ তারিখ নির্ধারণ করেছেন। এরপর যুক্তি উপস্থাপন হবে, তারপর রায়। আশা করছি, এই মামলায় আসামিদের সর্বোচ্চ সাজার আদেশ দেবে আদালত।’

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আরও বলেন, মামলাটির বিচার প্রক্রিয়ায় তদন্তকালীন সময়ের দীর্ঘসূত্রিতার কারণে দুই দশক সময় অপচয় হয়েছে। যার ফলে অনেক সাক্ষী মারা গেছে, ঠিকানা পরিবর্তনের ফলে অনেককে আদালতে হাজির করা যায়নি। তবে রাষ্ট্রপক্ষের চেষ্টায় অধিকাংশ সাক্ষীকে আদালতে হাজির করানো হয়েছে।

আসামি পক্ষের আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ বলেন, ‘ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলার ঘটনায় বিস্ফোরক আইনের মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ ও তাকে জেরা করা শেষ করেছি আমরা। আগামী ২৮ মার্চ ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারায় আসামিরা আত্মপক্ষ সমর্থন করে তাদের বক্তব্য পেশ করবেন।’

নথিপত্র ঘেঁটে জানা যায়, ২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল (বাংলা ১৪০৮ সনের ১ বৈশাখ) পহেলা বৈশাখের দিন ভোরে রমনার বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানস্থলে দুটি বোমা পুঁতে রাখা হয়। পরে রিমোট কন্ট্রোলের সাহায্যে তা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। সকাল ৮টা ৫ মিনিটে একটি ও এর ১৫ মিনিট পর আরেকটি বোমা বিস্ফোরিত হয়। এ বোমা হামলায় প্রাণ হারান ১০ জন। আহত হন অনেকেই। ওই ঘটনার পর রমনা থানার তৎকালীন উপ-পরিদর্শক (এসআই) কবির হোসেন বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।

২০০৮ সালের ২৯ নভেম্বর হরকাতুল জিহাদ (হুজি) নেতা মুফতি আবদুল হান্নানসহ ১৪ জনকে অভিযুক্ত করে সিআইডির পরিদর্শক আবু হেনা মো. ইউসুফ আদালতে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এর মধ্যে ২০১৪ সালের ২৩ জুন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. রুহুল আমিন হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে মুফতি হান্নানসহ আটজনের মৃত্যুদণ্ড এবং ছয় জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অন্য আসামিরা হলেন মাওলানা আকবর হোসাইন, মুফতি আব্দুল হাই (পলাতক), হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর (পলাতক), মাওলানা আবু বকর, মুফতি শফিকুর রহমান (পলাতক), মাওলানা তাজউদ্দিন (পলাতক) ও আরিফ হাসান সুমন। আসামিদের মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আদেশ দেন আদালত। এ ছাড়াও তাদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়।

যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, মাওলানা সাব্বির, হাফেজ ইয়াহিয়া, মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, মাওলানা আব্দুর রউফ ও মাওলানা শাহাদাৎ উল্লাহ জুয়েল। ৩০২/৩৪ ধারায় তাদের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড এবং প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা মামলায় ২০১৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন মামলার অন্যতম আসামি মুফতি হান্নানসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।
বিস্ফোরক মামলায় অভিযুক্তরা হলেন মুফতি আব্দুল হান্নান, মাওলানা আকবর হোসাইন, মুফতি আব্দুল হাই, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মাওলানা আবু বকর, মুফতি শফিকুর রহমান, মাওলানা তাজউদ্দিন, আরিফ হাসান সুমন, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, মাওলানা সাব্বির, হাফেজ ইয়াহিয়া, মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, মাওলানা আব্দুর রউফ ও মাওলানা শাহাদাৎ উল্লাহ জুয়েল।

অভিযুক্ত মুফতি আব্দুল হান্নানের ফাঁসি ২০১৭ সালের ১২ এপ্রিল রাতে কার্যকর হয়েছে। সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলার দায়ে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। তাই মামলা হতে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।