logo
আপডেট : ২১ মার্চ, ২০২২ ২২:০৫
সোয়া দুই মিনিটেই ২০ হাজার ফুট নেমে আসে চীনের সেই উড়োজাহাজটি
নিজস্ব প্রতিবেদক

সোয়া দুই মিনিটেই ২০ হাজার ফুট নেমে আসে চীনের সেই উড়োজাহাজটি

চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইন্সের একটি বোয়িং বিমান। (ফাইল ছবি)

চীনের গুয়াংশি প্রদেশে বিধ্বস্ত উড়োজাহাজ থেকে কোনো যাত্রীকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। উদ্ধারকারী দল এখনও সেখানে জীবিত কারো সন্ধান পায়নি। কোনো মৃতদেহও পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, এ দুর্ঘটনায় উড়োজাহাজটির সব যাত্রী নিহত হয়েছে।

প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, উড়োজাহাজটিতে ক্রুসহ ১৩২ জন যাত্রী ছিল।

ফ্লাইট ট্র্যাকার সাইটগুলো জানিয়েছে, ২৯ হাজার ফুট উঁচু দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ করেই অস্বাভাবিকভাবে নিচে নেমে আসতে থাকে উড়োজাহাজটি। সোয়া দুই মিনিটেই এটি ২০ হাজার ফুট নেমে আসায় এতে যান্ত্রিক গোলযোগ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনাকে বড় করে দেখছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। তবে তারা কোনো সিদ্ধান্তে আসেননি।

চীনের জাতীয় গণমাধ্যমে প্রচারিত খবরে জানা গেছে, চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৩৭-৮০০ মডেলের এই উড়োজাহাজটি কুনমিং থেকে গুয়ানঝু যাওয়ার পথে গুয়াংশি প্রদেশের পাহাড়ি এলাকায় বিধ্বস্ত হয়। এতে ওই বনে আগুন লেগে যায়। খবর পেয়ে ফায়ারসার্ভিসের একটি দল সেখানে সবার আগে পৌঁছায় এবং আগুন নিভিয়ে ফেলে।

এ দুর্ঘটনার পর উদ্ধারকারী দলের ৬ শতাধিক সদস্য ঘটনাস্থলে ছুটে গেছে। তবে এখনো প্রাণের কোনো দেখা পাননি তারা।

 চীনের পাহাড়ি এলাকায় উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হওয়ার পরই আগুন ধরে যায়।

 

বিমানবন্দরের খাতায় উড়োজাহাজটির এই যাত্রাটি ফ্লাইট এমইউ৫৭৩৫ নামে লিপিবদ্ধ ছিল। চীনের কুনমিং বিমানবন্দর থেকে স্খানীয় সময় ১টা ১১ মিনিটে উড়োজাহাজটি উড্ডয়ন করে এবং এর ১ ঘণ্টা ৫৪ মিনিট পর ৩টা ৫ মিনিটে এটির গুয়ানজু বিমানবন্দরে নামার কথা ছিল। তবে উড্ডয়নের এক ঘণ্টা পরই বিমানটি হঠাৎ করেই উচ্চতা হারাতে শুরু করে এবং এর অস্বাভাবিক পতন ঘটতে থাকে। এসময় আবহাওয়া মেঘাচ্ছন্ন ছিল তবে পার্বত্য উজহু এলাকায় যে মুহূর্তে দুর্ঘটনা ঘটে তখন আবহাওয়া আবার পরিষ্কার হতে শুরু করে। ওই এলাকায় বর্ষা মওসুমের শুরু হওয়ায় আবহাওয়ার এ তারতম্য দেখা যায়।

ফ্লাইট ট্র্যাকিং সাইট ফ্লাইটরাডার২৪ এর উপাত্ত জানায়, উড়োজাহাজটি ২৯ হাজার ১০০ ফুট উচ্চতা দিয়ে যাচ্ছিল তবে হঠাৎ করেই এটি নামতে থাকে এবং ২ মিনিট ১৫ সেকেন্ডের মধ্যে এটি ৯ হাজার ৭৫ ফুটে নেমে আসে। স্থানীয় সময় ২টা ২২ মিনিটে এটি ৩ হাজার ২২৫ ফুটে নেমে যায়। ধারণা করা হচ্ছে, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে উড়োজাহাজটি অস্বাভাবিকভাবে নেমে আসার কারণে এটির নিয়ন্ত্রণ আর রাখা সম্ভব হয়নি পাইলটদের পক্ষে। তবে উড়োজাহাজটির ব্লাকবক্স এখনও খুঁজে পাওয়া না যাওয়ায় এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো সিদ্ধান্তে আসতে রাজি নন সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো।

উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় খবরে চীনজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এ দুর্ঘটনার কারণ অবিলম্বে খুঁজে বের করতে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

এ দুর্ঘটনার পর ক্ষতিগ্রস্ত কোম্পানি চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইন্স তাদের বোয়িং ৭৩৭ সিরিজের সবগুলো উড়োজাহাজ চলাচল বন্ধ রেখেছে। প্রসঙ্গত চীনের রাষ্ট্রায়াত্ত তিনটি উড়োজাহাজ কোম্পানি রয়েছে। চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইন্স এর অন্যতম। অপর দুই রাষ্ট্রায়াত্ত উড়োজাহাজ কোম্পানি হচ্ছে চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইন্স ও এয়ার চায়না।

এদিকে, ফ্লাইট ট্র্যাকিং ডেটা পর্যক্ষেণে জানা গেছে, ভূমিতে আছড়ে পড়ার আগে উড়োজাহাজটি অস্বাভাবিকভাবে উঁচু থেকে নেমে আসতে থাকে।

চীনের সোশ্যাল মিডিয়ায় স্থানীয় গ্রামবাসীর আপলোড করা ভিডিও ও ছবি এবং দেশটির সরকার নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমগুলোর খবরে দেখানো হয়েছে, দুর্ঘটনাস্থলে আগুন ও ধোঁয়া দেখা গেছে এবং মাটিতে বিমানের টুকরাগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে।

দুর্ঘটনার পর বিধ্বস্ত উড়োজাহাজটির অংশবিশেষ।

 

এ দুর্ঘটনার পর চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইন্স একটি হটলাইন চালু করে স্থানীয়দের কাছ থেকে তথ্য আহ্বান করেছে। চীনের সিভিল এভিয়েশনও ঘটনাস্থলে তাদের তদন্তদল পাঠানোর কথা জানিয়েছে।

চীনের এয়ারলাইনসগুলোর নিরাপদে উড়োজাহাজ চলাচলের সুনাম রয়েছে। ১২ বছর আগে একটি উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় ৪২ যাত্রী নিহত হয়েছিল দেশটিতে। এরপর এমন দুর্ঘটনা এটাই প্রথম।

এদিকে, চীনের রাষ্ট্রায়াত্ত উড়োজাহাজ সংস্থা চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইন্স এ ঘটনায় এখনও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি। তবে তাদের ওয়েবসাইট এরইমধ্যে রঙিন থেকে সাদা-কালো করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, শোক প্রকাশের উদ্দেশ্যেই ওয়েবসাইটে এ পরিবর্তন এনেছে এয়ারলাইন্সটি। পরে সম্ভাব্য হতাহতদের স্মরণে তাদের লোগো রঙ ধূসর করে দিয়েছে সংস্থাটি।

জানা গেছে, বোয়িং ৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজটি সাত বছরের পুরনো ছিল। এটি বোয়িং ৭৩৭ মডেলের উন্নত সংস্করণ। বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজটি ২০১৮ সালে ইন্দোনেশিয়ায় ও ২০১৯ সালে ইথিওপিয়ায় ভয়াবহ দুর্ঘটনা কবলিত হয়। এ দুটি দুর্ঘটনার পর চীনে ৭৩৭ মডেলের উড়োজাহাজ নিষিদ্ধ করা হলেও এর পরবর্তী সংস্করণ ৭৩৭-৮০০ চালু ছিল।

এদিকে, এ ভয়াবহ দুর্ঘটনার পর বিমান নির্মাণকারী সংস্থা বোয়িং এক বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, ‘গণমাধ্যমে প্রকাশিত তাৎক্ষণিক প্রতিবেদনগুলোর বিষয়ে আমরা অবগত আছি এবং আরো তথ্য সংগ্রহ করে যাচ্ছি।’