logo
আপডেট : ২২ মার্চ, ২০২২ ০৯:১৪
ব্যয় বহন করতে পারছে না নির্ধারিত ওষুধের
প্রতিস্থাপনের পরও বিকল হচ্ছে কিডনি
নিখিল মানখিন ও আরিফ সাওন

প্রতিস্থাপনের পরও বিকল হচ্ছে কিডনি

প্রতীকী ছবি

কিডনি প্রতিস্থাপন পরবর্তী নির্ধারিত ওষুধের ব্যয় বহন করতে পারছেন না অনেক রোগী। কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিডনি প্রতিস্থাপনের দুই দিন আগে থেকে পরবর্তী সারা জীবন ধরে রোগীকে দুটি ওষুধ খেয়ে যেতে হয়। ওই দুটি ওষুধ বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়ে থাকে। আর কিডনি প্রতিস্থাপন ভালোভাবে সম্পন্ন হলেও ওই দুটি ওষুধ নিয়মিত না খেলে রোগীর মৃত্যু অনিবার্য হয়ে পড়ে। শুধু দরিদ্র নয়, মধ্যবিত্ত পরিবারের এমন অনেক রোগীই সারা জীবন মাসিক ৮ থেকে ১০ হাজার টাকার ওষুধের ব্যয় বহন করতে পারেন না। এমনিতেই কিডনি প্রতিস্থাপন পর্যন্ত চিকিৎসা চালাতেই নিঃস্ব হয়ে পড়ে অনেক পরিবার। কমে যায় পরিবারটির আয়-উপার্জন। এভাবে ওষুধ গ্রহণ অব্যাহত রাখতে না পেরে চিকিৎসা গ্রহণের মাঝপথেই অকাল মৃত্যু ঘটে অনেক কিডনি প্রতিস্থাপন রোগীর।

কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞরা বলেন, কেউ যদি দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগে ভোগেন তার শেষ পরিণতি হবে কিডনি বিকল। আর কিডনি বিকল হলে তার বেঁচে থাকার উপায় মাত্র দুটি। এক কিডনি সংযোজন, অন্যটি ডায়ালাইসিস। কিন্তু চিকিৎসার এই দুটি পদ্ধতিই অত্যন্ত ব্যয়বহুল। প্রতিস্থাপন পরবর্তী নির্ধারিত ওষুধ চালু রাখতে না পেরে চিকিৎসা গ্রহণের মাঝপথেই অকাল মৃত্যু ঘটে অধিকাংশ কিডনি বিকল রোগীর। চিকিৎসার পেছনে সহায় সম্বল হারিয়ে অনেক পরিবার হয়ে পড়ে নিঃস্ব। চিকিৎসার এক পর্যায়ে একসঙ্গে সহায় সম্বল ও রোগীকে হারানোর ঘটনাও ঘটছে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী আশঙ্কা করা হচ্ছে, ২০৪০ সালের মধ্যে ৫০ লাখের বেশি কিডনি বিকল রোগী সংকটাপন্ন অবস্থায় চিকিৎসার অভাবে অকাল মৃত্যুবরণ করবে। মৃত্যুঘাতী হিসেবে কিডনি রোগের অবস্থান দুই যুগ আগে ছিল ২৭তম, বর্তমানে এটা দাঁড়িয়েছে সপ্তম এবং ২০৪০ সালে পঞ্চম অবস্থানে পৌঁছাবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কিডনি বিভাগের অধ্যাপক ডা. শহিদুল ইসলাম সেলিম জানান, কিডনি প্রতিস্থাপনের দুই দিন আগে থেকে পরবর্তী সারা জীবন ধরে রোগীকে নিউরাল ও সেলসেপ্ট নামে দুটি ওষুধ খেয়ে যেতে হয়। ওই দুটি ওষুধ বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়ে থাকে। কিডনি প্রতিস্থাপন ভালোভাবে সম্পন্ন হলেও ওই দুটি ওষুধ নিয়মিত না খেলে রোগীর মৃত্যু অনিবার্য হয়ে পড়ে। আর প্রতিটি নিউরাল (১০০ এমজি) দাম ১৫০ টাকা এবং প্রতিটি সেলসেপ্টের দাম ১১০ টাকা। এ ছাড়া কিডনি ভালোভাবে মিল না হলে সাইমুলেট নামে দুটি ইনজেকশন দিতে হয়। এই প্রতিটি ইনজেকশনের দাম পড়ে দেড় লাখ টাকা। সারা জীবন ব্যবহার হওয়ার কারণে ওই দুটি ওষুধ নিয়মিত খেতে পারে না অনেক দরিদ্র পরিবার। তাই ওই দুটি ওষুধের ওপর থেকে আমদানি কর উঠিয়ে দিলে কিডনি প্রতিস্থাপন করা অনেক রোগী উপকৃত হবেন।

কিডনি ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন-অর-রশিদ বলেন, অনেক দরিদ্র রোগী দামি ওষুধ নিয়মিত সেবন করে না, ফলে তাদের কিডনির কার্যকারিতা লোপ পায় এবং তা রিজেকশন হয়ে যায়। কিছু রোগী ২-৩ বছর পর না জেনে ওষুধ বন্ধ করে দেন, ফলে সংযোজিত কিডনি নষ্ট হয়ে যায়। ইনসাফ বারাকাহ কিডনি অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতালের কিডনি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. এতেশামুল হক ভোরের আকাশকে বলেন, ডায়ালাইসিসের চেয়ে প্রতিস্থাপন ভালো। তবে প্রতিস্থাপনের পরে মাসে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকার ওষুধ লাগে। ওষুধের ডোজ আমরা অ্যাডজাস্ট করি। তিন বছর পরে যদি রোগী টিকে থাকেন, তাহলে খুবই কম খরচ হয়। দুই-তিন হাজার টাকার ওষুধ লাগে।

সেন্টার ফর কিডনি ডিজিজেস (সিকেডি) অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ডা. মো. কামরুল ইসলাম বলেন, কিডনি প্রতিস্থাপন পরবর্তী যত্নের ওপর নির্ভর করে তা কত দিন কার্যকর থাকবে। তাই প্রতিস্থাপন-পরবর্তী যত্ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত শৃঙ্খলার সঙ্গে ওষুধ সেবন, ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপসহ অন্যান্য রোগ, যা কিডনিকে দুর্বল করতে পারে, সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করা ও নিয়মিত ফলোআপ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। খাবারে পরিমিত লবণ, পরিমিত পানি পান ও চিন্তামুক্ত জীবনযাপন করা; নিয়মিত মাস্ক পরা, বেশি ভিড় এড়িয়ে চলা ও চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ সেবন করা উচিত নয়।

কিডনি প্রতিস্থাপিত রোগীর ডায়রিয়া বা পানিশূন্যতা হলে দ্রুততার সঙ্গে সঠিকভাবে তার চিকিৎসা করতে হবে। সংক্রমণ যেন না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ফুসফুসের সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য মাস্ক পরতে হবে। পেটের সংক্রমণ প্রতিরোধে বাইরের দূষিত খাবার, অপরিশোধিত পানি, বাসি-পচা খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে। তিনি আরো বলেন, প্রতিস্থাপিত কিডনির সঠিক যত্ন নিলে ১৫ থেকে ২০ বছর কোনো সমস্যা ছাড়াই সেবা দেবে। একাধিকবার কিডনি প্রতিস্থাপন করা যায়। বিশ্বে এখন পর্যন্ত একজনের দেহে পাঁচবার সফলভাবে কিডনি প্রতিস্থাপন করা গেছে।