একাত্তরের উত্তাল মার্চের প্রতিটি দিনই ছিল গুরুত্বপূর্ণ। দেশের পরিস্থিতি কি হবে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকার পাশাপাশি স্বাধীন দেশ হবে এমন স্বপ্নে বিভোর ছিল বাঙালি জাতি। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ শুনে জাতির মনোবল ছিল চাঙ্গা। লাগাতার অসহযোগ আন্দোলনের ২১তম দিবস ২২ মার্চ। এদিন স্বাধীনতার দাবিতে বিক্ষুব্ধ মানুষের সভা-সমাবেশ, শোভাযাত্রা ও গগনবিদারী স্লোগানে ঢাকার আকাশ-বাতাস মুখরিত।
স্লোগানে স্লোগানে ঢাকার আকাশ-বাতাস মুখরিত তখন আজকের দিনে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ২৫ মার্চ ঢাকায় অনুষ্ঠেয় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেন। অজুহাত হিসেবে পাকিস্তানের উভয় অংশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ‘ঐকমত্যের পরিবেশ সম্প্রসারণের সুযোগ সৃষ্টির’ কথা বলেন ইয়াহিয়া। প্রেসিডেন্ট ভবনে এদিন সকালে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জুলফিকার আলী ভুট্টো বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে নিজের বাসভবনে ফিরে বঙ্গবন্ধু সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন চলছে। লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’
এদিন জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে মিছিলের ঢল ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে যায়। দৈনিক পত্রিকাগুলো পরদিন সেই খবর প্রকাশ করে লেখে, একদিনে এত মিছিল এর আগে কখনো ৩২ নম্বরে যায়নি। বাসভবনে জনতার উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু এদিনও বেশ কয়েকবার বক্তৃতা দেন। জনতার গগনবিদারী ‘জয় বাংলা’ ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ ধ্বনি ও করতালির মধ্যে জনগণের নেতা ঘোষণা করেন, সাত কোটি বাঙালি যখন ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, তখন আমি অবশ্যই দাবি আদায় করে ছাড়ব। তিনি বলেন, ‘২৩ বছর মার খেয়েছি, আর মার খেতে রাজি নই। শহীদদের রক্ত বৃথা যেতে দেওয়া হবে না। এবার সুদে-আসলে বাংলার দাবি আদায় করে আনব’।
এদিকে দুপুরে প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে কড়া সামরিক পাহারায় হোটেলে ফিরে ভুট্টো তার উপদেষ্টাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। ভুট্টো ফেরার সময় হোটেলের বাইরে ভুট্টো-বিরোধী স্লোগান দিতে থাকেন বিক্ষুব্ধরা। ভুট্টোর নেতৃত্বে পিপলস পার্টির নেতারা সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্ট ভবনে যান। রাতে সেখান থেকে ফিরে ভুট্টো হোটেল লাউঞ্জে সংবাদ সম্মেলন করেন।
ভুট্টো বলেন, প্রেসিডেন্ট এবং আওয়ামী লীগ প্রধান বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে একটি সাধারণ ঐকমত্যে পৌঁছেছেন। তবে ওই ঐকমত্য অবশ্যই পিপলস পার্টির কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে। পিপলস পার্টির অনুমোদন ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত পশ্চিম পাকিস্তানিরা মেনে নিতে পারে না।
এদিন বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গণে সশস্ত্র বাহিনীর সাবেক বাঙালি সৈনিকেরা সমাবেশ ও কুচকাওয়াজ করেন। তারা বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য যে অভূতপূর্ব ঐক্য গড়ে উঠেছে, তাতে তারা আর প্রাক্তন হিসেবে বসে থাকতে পারেন না।