দীর্ঘ ১৩ বছর পর মৌলভীবাজারে শুরু হয়েছে আর্সেনিকের মাত্রা নির্ণয়ের কার্যক্রম। সাধারণ মানুষ জানেন না তাদের টিউবওয়েল আর্সেনিকমুক্ত কি না। সচেতন মহলের দাবি জেলায় আর্সেনিকের সঠিক চিত্র প্রকাশের।
জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০০৩ সালে একবার এবং ২০০৯ সালে জেলার আংশিক এলাকায় আর্সেনিকের মাত্রা নির্ণয়ের জরিপ হয়েছিল। বর্তমানে সারাদেশের মতো মৌলভীবাজার জেলার সাত উপজেলার ৬৭ ইউনিয়নে জরিপের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় ২৫০০টি করে ১ লাখ ৬৭ হাজার ৫০০ টিউবওয়েলে আর্সেনিক পরীক্ষার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এখন সদর উপজেলাসহ পাঁচ উপজেলায় জরিপ চলছে, এর মধ্য জুড়ি ও বড়লেখা উপজেলায় আগামী মাসে জরিপ শুরু হবে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, প্রতিটি ইউনিয়নে দুইজন করে জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ট্রেনিংপ্রাপ্ত লোক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা প্রতিটি বাড়ি বাড়ি গিয়ে এই জরিপ চালাচ্ছেন। উন্নত ডিভাইস দিয়ে তারা জেলার সার্ভারে সেই তথ্য পাঠাচ্ছেন। পাশাপাশি যেসব টিউবওয়েলে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক পাচ্ছেন, সেই টিউবওয়েল লাল রঙের প্রলেপ দিচ্ছেন ও জনগণকে সেই পানি পান না করার পরামর্শ দিচ্ছেন।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার বাসিন্দা স্কুলশিক্ষক আফজাল হোসেন বলেন, ‘আমাদের মোস্তফাপুর ও নাজিরাবাদ ইউনিয়নের প্রায় টিউবওয়েলে নাকি উচ্চমাত্রার আর্সেনিক রয়েছে। আমার স্কুলের রেজাল্টের একটি অফিস কপি সংশ্লিষ্ট পরীক্ষক আমাকে দিলেন এবং পানি পান না করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বললেন। আফসোস ছাড়া কিছুই করার নেই। কারণ এটি প্রাকৃতিক ব্যাপার। শিশুদের কথা চিন্তা করে এখানে শিক্ষা অধিদপ্তরের তথা রাষ্ট্রের লক্ষাধিক টাকা ব্যয় হয়েছে। এলাকার অনেকেই পানি নিতে আসতেন। এখন চিন্তার বিষয় হচ্ছে, বাড়ি থেকে শিক্ষার্থীরা পানি নিয়ে এলেও সেটা যে নিরাপদ পানি তার গ্যারান্টি কে দেবে।’
এ বিষয়ে মৌলভীবাজার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. খালেদুজ্জামান জানান, জেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ২৮ হাজার টিউবওয়েলের পানিতে আর্সেনিকের পরীক্ষা হয়েছে। জেলার পুরো চিত্র জানতে আরো পাঁচ, ছয় মাস লাগবে।
জেলা সিভিল সার্জন চৌধুরী জালাল উদ্দীন মোর্শেদ জানান, দীর্ঘসময় আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করলে বিভিন্ন সমস্যা ও রোগ দেখা দেয়। হাতে পায়ে কালো ফোসকা পড়ে, বিভিন্ন ধরনের গুটি দেখা দেয়। শরীরে দেখা দেয় জ্বর, বমি, রক্তবমি, মাথাব্যথা, পেটব্যথা, রক্ত আমাশয়। হাত-পায়ের তালু শক্ত খসখসে হয়ে যায়। হাত ও পা ফুলে ওঠে। কিডনি, লিভার ও ফুসফুস বড় হয়ে টিউমারও হয়। চামড়া, মূত্রথলি ও ফুসফুসে ক্যানসার হতে পারে। জন্ডিস হতে পারে, কিডনি লিভার অকেজো হতে পারে।