logo
আপডেট : ২২ মার্চ, ২০২২ ২০:১২
শীতলক্ষ্যায় লঞ্চডুবি: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১১
বিল্লাল হোসাইন, নারায়ণগঞ্জ

শীতলক্ষ্যায় লঞ্চডুবি: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১১

নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে জাহাজের ধাক্কায় লঞ্চডুবির ঘটনায় আরও তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস ও নৌ পুলিশ। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত মোট ১১ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হলো। মঙ্গলবার (২২ মার্চ) বিকেলে শীতলক্ষ্যার সেতুর দক্ষিণ পারে ভাসমান অবস্থায় মরদেহগুলো উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস।

ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক আদুল্লাহ আল আরেফিন ভোরের আকাশকে বলেন, ‘নদীতে ভাসমান অবস্থায় মরদেহগুলো উদ্ধার করে তীরে আনা হয়েছে। মরদেহগুলো দেখে তাদের স্বজনরা শনাক্ত করেছে। সব শেষ মরদেহ পাওয়া গেছে, আবদুল্লাহ আল জাবের, হাতেম ও শিশু আরোহীর। তাদের মরহেদগুলো পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে নৌ পুলিশ।’

নিহত জাবেরের বাবা ওয়াদুদ সিদ্দিক জানান, ছুটির দিন হওয়ায় তিন বন্ধুসহ নারায়ণগঞ্জ থেকে মুন্সীগঞ্জ যাচ্ছিল তার ছেলে। শীতলক্ষ্যা নদীতে লঞ্চ ডুবে যাওয়ার পর থেকে তাকে পাওয়া যাচ্ছিল না। তার তিন বন্ধু সাঁতরে তীরে উঠলেও জাবের পারেনি। তার ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিল। দেড় বছর আগে বিয়ে হয় তার।

নিহত হাতেম আলীর মেয়ে কাকলী জানান, তার বাবা কুয়েত প্রবাসী। শারীরিক অসুস্থতার কারণে গত এক মাস আগে মুন্সীগঞ্জে বাড়িতে ফেরেন। রোববার সকালে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে লঞ্চে উঠে মুন্সীগঞ্জের বাড়িতে ফিরছিলেন। পথে শীতলক্ষ্যা নদীতে কার্গোবাহী জাহাজের ধাক্কায় লঞ্চ ডুবে নিখোঁজ হন তিনি।

নৌ পুলিশের নারায়ণগঞ্জ সদর নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনজনের মরদেহ পাওয়া গেছে। তাদের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ নিয়ে মোট ১১ জনের মরগে উদ্ধারের পর তা হস্তান্তর করা হয়।’

যাত্রীবাহী লঞ্চডুবির ঘটনা তদন্ত করতে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়, নৌ-পরিবহন অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ঘটনার পর বিকেলে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আ ন ম বজলুর রশীদকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

একই ঘটনার তদন্তে প্রকৌশলী ও জরিপকারক ওবায়দুল্লাহ ইবনে বশিরকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে নৌপরিবহন অধিদপ্তর। এই কমিটিকে আগামী ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

এদিকে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শামীম বেপারীকে আহ্বায়ক করে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও ছয় সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি ইতিমধ্যে ঘটনাস্থল পরির্দশন করেছেন।

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার আলামিন নগর এলাকায় রোববার বেলা ২টার দিকে সিটি গ্রুপের কার্গো জাহাজের ধাক্কায় এম এল আশরাফ উদ্দিন নামের একটি লঞ্চ ডুবে যায়।

এ ঘটনায় বিআইডব্লিটিএ মামলার করেছে। উপ-পরিচালক বাদী বাবু লাল বদ্য বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলায় জাহাজের চালক, মাস্টার, সুকানিসহ মোট আটজনকে আসামি করা হয়েছে। তাদের আটজনকে আটকের পর তিন দিন করে রিমান্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।

আসামিরা হলেন- জাহাজের মাস্টার রমজান আলী শেখ, নুরুল আলম, ইঞ্জিনিয়ার আরিফুল ইসলাম, নাদিম হোসেন, লস্কর সুমন হোসেন, ইয়াসিন, সুকানি জাহিদুল ইসলাম ও গ্রিজার রিয়াদ হোসেন।

এর আগে গত বছরের ৮ জুলাই শীতলক্ষ্যা নদীর একই স্থানে এক কার্গো জাহাজের ধাক্কায় সাবিত আল হাসান নামে যাত্রীবাহী লঞ্চডুবির ঘটনা ঘটে। এতে নারী ও শিশুসহ ৩৪ জনের মৃত্যু হয়।