logo
আপডেট : ২২ মার্চ, ২০২২ ২১:২০
হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও চট্টগ্রামের জলসা ক্লাব উচ্ছেদের চেষ্টা
চট্টগ্রাম ব্যুরো

হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও চট্টগ্রামের জলসা ক্লাব উচ্ছেদের চেষ্টা

চট্টগ্রামের জলসা ক্লাব

হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও বন্দর নগরী চট্টগ্রামের ৫৭ বছরের পুরোনো জলসা ক্লাব উচ্ছেদের চেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে ক্লাবের সদস্য ও স্থানীয় লোকজনের প্রতিরোধের মুখে পিছু হটেছে উচ্ছেদকারীরা।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী থানাধীন লালখান বাজার ওয়ার্ডের শহীদ নগর এলাকায় ১৯৬৫ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় জলসা ক্লাব। ১৯৭৩ সালে সমাজ কল্যাণ অধিদপ্তর থেকে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া প্রতিষ্ঠান হিসেবে এই ক্লাবের রেজিস্ট্রেশনও নেওয়া হয়। সোয়া দুই গণ্ডা জায়গার (বিএস দাগ নং-৯৯১) ওপর প্রতিষ্ঠিত এই ক্লাবটি দীর্ঘদিন ধরে ক্রীড়াঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে। এই ক্লাবের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় ফ্রি চিকিৎসা ক্যাম্প ও দুঃস্থদের মাঝে ত্রাণ বিতরণসহ অনেক সামাজিক ও মানবিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়ে আসছে।

ক্লাবের এই জায়গাটি শত্রু সম্পত্তি ছিল। পরে এই জায়গাটি অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সর্বশেষ জায়গাটি পরিত্যক্ত সম্পত্তি হিসেবে সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়। ১৯৮৮ সালে চট্টগ্রামের গণপূর্ত বিভাগের একটি বোর্ড মিটিংয়ে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওই পরিত্যক্ত সোয়া দুই গণ্ডা জায়গা জলসা ক্লাবের নামে ২৭ লাখ ৭১ হাজার টাকা মূল্যে ক্রয় করার জন্য ক্লাব কর্মকর্তাদেরকে প্রস্তাব দেওয়া হয়। ওই প্রস্তাবনা পাওয়ার পর ক্লাব কর্মকর্তারা তৎকালীন চট্টগ্রামের এক মন্ত্রীর সুপারিশসহ গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে নাম মাত্র মূল্যে জায়গাটি জলসা ক্লাবের কাছে বিক্রি করার জন্য আবেদন করেন।

জলসা ক্লাব কর্মকর্তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সচিব চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনারকে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রদানের নির্দেশ দেন। তৎকালীন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার ও পরিত্যক্ত সম্পত্তি বিভাগ চট্টগ্রামের সভাপতি ওই সময় ক্লাবের আবেদনের বিষয়টি বিবেচনা করা যায় মর্মে ২০১০ সালে মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন। এরপর এ ব্যাপারে নিশ্চুপ ছিল গণপূর্ত মন্ত্রণালয়।

২০১৫ সালে মন্ত্রণালয় থেকে পুনরায় চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনারকে আরো একটি প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। ক্লাবের ওই জায়গা নিয়ে আদালতে কোনো মামলা-মোকাদ্দমা আছে কিনা তা জানতে চায় মন্ত্রণালয়। কিন্তু এরপর এ ব্যাপারে জলসা ক্লাব কর্মকর্তাদের সঙ্গে আর মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি।

এরমধ্যে ২০১৯ সালে জলসা ক্লাব সংলগ্ন বিএস দাগ নং ৯৮৯ এর জায়গা চট্টগ্রাম পরিত্যক্ত বিভাগের কাছ থেকে ক্রয় করে একটি মহল। তারা এরপর থেকে নানা সময় জলসা ক্লাবের জায়গা দখলের চেষ্টা চালায়। তারা ক্লাবের ভবন এবং বাথরুম ভেঙে ফেলার উদ্যোগ নেয়। এর প্রতিকার চেয়ে জলসা ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ আমজাদ হোসেন হাজারী হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন করেন। ওই রিট পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ক্লাবের জায়গাটিতে স্থিতিবস্থা জারি করার পাশাপাশি উচ্ছেদ চেষ্টার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।

অভিযোগ রয়েছে, হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ক্লাবটি উচ্ছেদের চেষ্টা করে নগরীর বাকলিয়া সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ আতিকুর রহমান। তবে ক্লাবের সদস্যরা ও স্থানীয় লোকজনের প্রতিরোধের মুখে পিছু হটেন তিনি। ক্লাব উচ্ছেদ চেষ্টার প্রতিবাদে মানববন্ধনও করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জলসা ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ আমজাদ হোসেন হাজারী বলেন, ‘ক্লাব প্রতিষ্ঠার পর থেকে জায়গাটির খাজনা দিয়ে আসছি আমরা। ক্লাবের এই জায়গাটি শত্রু সম্পত্তি ছিল। পরে এই জায়গাটি অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সর্বশেষ জায়গাটি পরিত্যক্ত সম্পত্তি হিসেবে সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়। ১৯৮৮ সালে চট্টগ্রামের গণপূর্ত বিভাগের পক্ষ থেকে ওই পরিত্যক্ত সোয়া দুই গণ্ডা জায়গা জলসা ক্লাবের নামে ২৭ লাখ ৭১ হাজার টাকা মূল্যে ক্রয় করার জন্য আমাদেরকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। ওই সময় আমরা নাম মাত্র মূল্যে জায়গাটি ক্লাবের নামে দেওয়ার আবেদন করেছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মন্ত্রণালয়ের ধীরগতির কারণে ক্লাবের নামে জায়গাটি এখনও ক্রয় করা যায়নি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা বাধ্য হয়ে ক্লাবের জায়গাটির ব্যাপারে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চেয়ে চট্টগ্রামের একটি আদালতে মামলা দায়ের করি। মামলাটিতে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, নির্বাহী প্রকৌশলীসহ পাঁচজনকে বিবাদী করা হয়েছে। ২০১৫ সালে মামলাটি দায়ের করা হলেও চলতি ২০২২ সাল পর্যন্ত একবারও বিবাদীরা আদালতে হাজির হননি। মামলাটি এখনও চলমান রয়েছে। এরমধ্যেও ক্লাবের জায়গা নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে। হাইকোর্টে রিট পিটিশন করেছি। হাইকোর্ট ক্লাবের স্থিতিবস্থা ও উচ্ছেদের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেও ক্লাবটি উচ্ছেদের চেষ্টা চালানো হয়েছে। যা হাইকোর্টকে অবমাননার শামিল।’

তিনি আরো বলেন, ‘এই ক্লাবটি স্বাধীনতার পক্ষের একটি ক্লাব। এই ক্লাবের সাবেক সভাপতি জাহাঙ্গীর চৌধুরী ছিলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। ক্লাবটির বর্তমান সভাপতি সিদ্দিক আহমেদও একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। ক্লাবটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে অবদান রেখে আসছে। এটি একটি সর্বজনীন ক্লাব। চট্টগ্রামে এমনিতেই খেলার মাঠের সংকট রয়েছে। তার মধ্যে যদি ক্লাবের ইনডোর গেমসও বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে যুবসমাজ মাদকাসক্ত হয়ে ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিশেষ অনুরোধ, জলসা ক্লাবের জায়গাটি যেন ক্লাবের কাছেই বিক্রি করা হয়। প্রয়োজনে ২৭ লাখ ৭১ হাজার টাকা মূল্যেই জায়গাটি ক্লাবের নামে ক্রয় করতে চাই আমরা। তারপরও নানামুখী ষড়যন্ত্রের কবল থেকে সকলের স্বার্থে এই ক্লাবটিকে বাঁচাতে হবে।’