ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার সন্তোষপুর বনাঞ্চলে খাদ্যের অভাবে ধুঁকছে বানর। বনে ফলদ গাছপালা না থাকায় দর্শনার্থীরাই এসব প্রাণীর ক্ষুধা নিবারণের অন্যতম উৎস। যদিও বন কর্মকর্তাদের দাবি, নিয়মিত পর্যাপ্ত খাদ্য সরবরাহ করছেন তারা। তবে বাস্তবতা বলে ভিন্ন কথা।
স্থানীয়রা জানান, স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে এই বনাঞ্চলে হরিণ, ভাল্লুক, মেছোবাঘ, বাঘডাস, হনুমান, শিয়াল, সজারো, খরগোশ ও বানরসহ নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণীর অবাধ বিচরণ ছিল। কিন্তু বনদস্যুরা অবাধে গাছ কেটে নিয়ে যাওয়ায় বানর ছাড়া হারিয়ে যায় অন্য সব বন্যপ্রাণী। অন্তত ২৫ বছর ধরে বানর ছাড়া অন্য প্রাণীর আর দেখা যাচ্ছে না।
বর্তমানে বনে থাকা বানরগুলোও পড়েছে খাদ্য সংকটে। ফলে মাঝে মধ্যেই বনাঞ্চল ছেড়ে চলে যাচ্ছে জনবসতিপূর্ণ এলাকায়। সরকারিভাবে আরো তদারকি বাড়ানো না হলে বানরগুলোও এক সময় বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বনাঞ্চলের ভেতরে বিট অফিসের কাছেই ছয়টি ভ্রাম্যমাণ দোকান রয়েছে। বনে খাদ্যের অভাবে এসব দোকানের আশপাশে দল বেঁধে বানর চলাফেরা করছে। কিছু বানর এক ডাল থেকে আরেক ডালে লাফিয়ে বেড়াচ্ছে। দর্শনার্থীদের দেখামাত্রই বনের ভেতরে থাকা বানরগুলো দ্রুত ছুটে আসছে। এরপর খাদ্যের জন্য দর্শনার্থীদের মুখের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।
এমন দৃশ্য দেখে দোকান থেকে কলা, মুড়ি, বাদাম, চানাচুর, বিস্কুটসহ নানা ধরনের খাবার কিনে বানরগুলোকে খেতে দিচ্ছেন অনেকেই। ক্ষুধার্ত বানরগুলো দর্শনার্থীদের মাথা ও কাঁধে উঠে খাবার নিচ্ছে। আর কাউকে কামড় বা আঁচড় না দেওয়ায় আনন্দে মেতে উঠছে বিভিন্ন বয়সি নারী-পুরুষসহ শিশুরাও।
বানরগুলোকে বাদাম দেওয়ার সময় কথা হয় ফয়সাল আহমেদ নামে এক দর্শনার্থীর সঙ্গে। তিনি দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, ‘দুই বন্ধু একটি কাজে জামালপুর থেকে ময়মনসিংহে এসেছিলাম। এ সুযোগে এখানে ঘুরতে এসেছি। বনাঞ্চলের সৌন্দর্য বাড়িয়েছে এসব বানর। এরা কাঁধে উঠে খাবার নেয়, কিন্তু কামড় বা আঁচড় দেয় না। দেখে মনে হয় খাদ্যের অভাবে ধুঁকছে এরা।’
ফারজানা বেগম নামে আরেকজন বলেন, ‘ময়মনসিংহ নগরীর ভাটিকাশর এলাকা থেকে সপরিবারে এখানে ঘুরতে এসেছি। বনাঞ্চলে বানরের হইচই দেখে ভালো লেগেছে। বানরের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি আনন্দ করছে শিশুরা।’
আনন্দ মোহন কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফাহমিদা ইয়াছমিন জানান, বনে পর্যাপ্ত খাবার না থাকার কারণেই দর্শনার্থীদের হাত থেকে বানর খাবার নিচ্ছে। এতে রোগাক্রান্ত বানর থেকে যে কোনো রোগ মানুষের শরীরে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ জন্য বনের ভেতর পর্যাপ্ত ফলদ গাছ লাগানো প্রয়োজন। বন বিভাগের উদাসীনতার কারণেই প্রাণীগুলো খাদ্য সংকটে পড়েছে।
সন্তোষপুর বনের বিট কর্মকর্তা আ. রউফ মিঞা দৈনিক ভোরের আকাশকে জানান, এখানে ২ হাজার ২৭৭ একর জায়গাজুড়ে শালবন রয়েছে। সব জায়গায় বানর ঘোরাফেরা করে না। বিট অফিসসংলগ্ন আশপাশের গাছগুলোতে বেশি থাকে। কারণ, এদিক দিয়েই দর্শনার্থীরা প্রবেশ করে।
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে চার শতাধিক ছোট-বড় বানর রয়েছে। বানরদের খাবারের জন্য ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ভিজিএফ ও ভিজিডির কিছু চাল দেয়। এ ছাড়া আমরাও চাল কিনে সারা বছরই বানরদের দিচ্ছি। পানি খাওয়ার জন্য হাউস করে দিয়েছি।’
এই বন কর্মকর্তা জানান, চাল ছাড়াও বানররা ফল পছন্দ করে। এ জন্য বিভিন্ন ধরনের ফলের চারা লাগানোর পরিকল্পনা চলছে। এতে প্রাকৃতিক পরিবেশে ফল খেয়ে বেঁচে থাকার পাশাপাশি খাদ্যের অভাব ঘুচবে এবং বিভিন্ন বাসাবাড়িতে খাবার সংগ্রহের জন্য যাবে না।