দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে দোর্দণ্ড দাপটে ঐতিহাসিক সিরিজ জিতলো বাংলাদেশ। দেশটির মাটিতে এর আগে জয়ের কোনো অভিজ্ঞতাই ছিল না টাইগারদের। সেখানে তিন ম্যাচের সিরিজের দুটো ম্যাচ দাপটের সঙ্গে জিতে সিরিজের ট্রফি উঁচিয়ে ধরলেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল। এ যেন শুধু সিরিজ জয় নয়-অনেক বছরের আরাধ্য স্বপ্নপূরণ।
এর আগে দেশটিতে তিন সফরে ১৪ ম্যাচ খেললেও কোনোটাইতেই জয়ের দেখা পায়নি বাংলাদেশ।
বিদেশের মাটিতে কেনিয়া, জিম্বাবুয়ে এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ ছাড়া আর কোনো দলের বিপক্ষে বাংলাদেশের সিরিজ জয়ের রেকর্ড নেই। সেখানে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এমন সিরিজ জয় বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসেরই অন্যতম বড় ঘটনা। বিদেশের মাটির খেলাগুলো হিসেব করলে সবচেয়ে বড় ঘটনা।
আর সে জয়টা এলো এমন দাপটের সঙ্গে, এমন সাহসী ব্যাটিং দৃঢ়তায় যার কথা দেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা মনে রাখবেন যুগের পর যুগ ধরে। প্রথম বড় সিরিজ জয়ের মাহাত্ম্যই এমন।
তামিম-লিটনের দাপুটে ব্যাটিংয়ে সেঞ্চুরিয়নে সিরিজের প্রথম ম্যাচটি শুরু করেছিল বাংলাদেশ, বুধবার সিরিজের তৃতীয় ম্যাচ আবার একই ভেন্যুতে ফেরায় মঞ্চায়িত হলো যেন সেই প্রথম ম্যাচের পারফরম্যান্সের পুনরাবৃত্তি; তবে এবার আরো আগ্রাসী তামিম, মাত্র ৫২ বলে করে ফেললেন অর্ধশত। তার চারে ছয়ে বাংলাদেশের ব্যাটিংটা হয়ে গেলো সম্পূর্ণ রঙিন।
সঙ্গী লিটন দাসও এরপর থেকে হাত খুললেন। অর্ধশত পূরণ করে ফেলবেন এমনটাই যখন ভাবছিলেন সবাই তখনই ২১তম ওভারে ৫৭ বলে ৪৮ রান করে মহারাজের বলে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক বাভুমার হাতে সহজ ক্যাচ তুলে বিদায় নিলেন তিনি। খেলার বয়স তখন ২০.৫ ওভার। বিদায়ের আগে ৮টি বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন লিটন দাস। তামিম-লিটন মিলে গড়েছেন ১২৭ রানের জুটি।
১৫৫ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে উদ্বোধনী জুটিই যদি ১২৭ রান করে ফেলে তখন জয় তো পরিষ্কার দেখা যায় আগেভাগেই। বাকি পথ পাড়ি দেওয়ার জন্য তামিমের সঙ্গী তখন বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান।
এরপর নেমেছেন সাকিব। বল হাতে দারুন ভূমিকা রাখার পর ব্যাটিংয়েও চমৎকার সহায়তা দেন তামিমকে। শেষ পর্যন্ত ইনিংসের আদ্যপান্ত ব্যাটিং করে তামিম করেছেন ১৪ বাউন্ডারিতে ৮২ বলে ৮৭ রান। এরমধ্যে রয়েছে দেখার মতো ১‘৪টি বাউন্ডারি।
তবে এই জয়ের ভিত্তিটা আসলে গড়ে দেন বাংলাদেশের বোলারা। প্রথম ইনিংসে বল হাতে কারিকুরি দেখালেন তাসকিন। সেঞ্চুরিয়ানের উইকেটে ঝড়ালেন আগুন। তার সঙ্গে আলো ছড়ালেন সাকিব-মিরাজরাও। তাতেই বলতে গেলে কুপোকাত দক্ষিণ আফ্রিকা।
তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে আগে ব্যাট করতে নামা প্রোটিয়াদের মাত্র ১৫৪ রানে গুটিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ।
টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে পুরো ৫০ ওভার খেলতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। টাইগার বোলারদের তোপে কেউ দেখা পায়নি ফিফটির। সর্বোচ্চ ৩৯ রান এসেছে মালানের ব্যাটে। বল হাতে বাংলাদেশের হয়ে তাসকিন নেন ৫ উইকেট। যা তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মতো। ১৫৪ রান, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সর্বনিম্ন স্কোর দক্ষিণ আফ্রিকার। আগেরটি ছিল ১৬২ রানের।
টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ষষ্ঠ ওভারে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। মিরাজের বলে মাহমুদউল্লাহর হাতে বন্দি হন কুইন্টন ডি কক। ৮ বলে মাত্র ১২ রান করেন প্রোটিয়া ওপেনার। দলীয় ৬৬ রানে চমক দেখান পেসার তাসকিন আহমেদ। উইকেটে থিতু হতে চেষ্টা করা ভেরিনকে ব্যাটিংএজ করান তাসকিন। ১৬ বলে ৯ রান করা ভেরিন। এরপর স্কোরে তিন রান যোগ হতেই আবার তাসকিন ঝলক।
দলীয় ৬৯ রানে তৃতীয় উইকেট পতন দক্ষিণ আফ্রিকার। তাসকিনের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ওপেনার জানেমান মালান। ৫৬ বলে ৩৯ রান করেন তিনি। তার ইনিংসে ছিল সাতটি চারের মার। এরপর স্বরূপে সাকিব আল হাসান। এলবির ফাঁদে ফেলেন প্রোটিয়া অধিনায়ক টেম্বা বাভুমাকে। যদিও রিভিউ চেয়ে ব্যর্থ হয় স্বাগতিকরা। ১১ বলে মাত্র দুই রান করেন বাভুমা।
মিলারের সঙ্গে বড় জুটি গড়তে পারেন ভ্যান ডার ডসন। এমন আশায় ছিল স্বাগতিকরা। তবে তাতে বাধ সাধেন পেসার শরিফুল ইসলাম। বিদায় করেন ডসনকে। ১০ বলে মাত্র ৪ রান করে ডসন ক্যাচ দেন মিরাজের হাতে। ৮৩ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে কাঁপছে যেন দক্ষিণ আফ্রিকা।
ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে হাল ধরার চেষ্টা করেন ডেভিড মিলার ও প্রিটোরিয়াস। এই জুটি দলকে নিয়ে যান শতরানের ওপর। এরপরই আবার তাসকিনের আঘাত। ফিরিয়ে দেন প্রিটোরিয়াসকে। স্লাশ করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে মুশফিকের কাছে ক্যাচ দেন তিনি। ২৯ বলে এক চার ও এক ছক্কায় ২০ রান করেন প্রিটোরিয়াস।
২৯তম ওভারে তাসকিনের জোড়া আঘাত। তৃতীয় বলে তিনি ফেরান নির্ভরযোগ্য ব্যাটার ডেভিড মিলারকে। ৩১ বলে দুই চারে ১৬ রান করে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন তিনি। একই ওভারের শেষ বলে তাসকিন আউট করেন পেসার ক্যাগিসো রাবাদাকে। ৩ বলে ৪ রান করা রাবাদাও ক্যাচ দেন মুশফিকের হাতে।
বাকি দুই উইকেটে অবশ্য ২৮ রান যোগ করেন দক্ষিণ আফ্রিকা। ১৪ বল খেলে রানের খাতা খুলতে পারেননি এনগিডি। হয়ে যান সাকিবের বলে আউট। কেশব মাহারাজের রান আউটে শেষ হয় দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস, ১৩ ওভার বাকি থাকতেই। ৩৯ বলে ২৮ রান করেন মাহারাজ।
বল হাতে বাংলাদেশের হয়ে ৯ ওভারে মাত্র ৩৫ রানে সর্বোচ্চ ৫ উইকেট নেন তাসকিন আহমেদ। সাকিব দুটি, মিরাজ ও শরিফুল একটি করে উইকেট লাভ করেন। সাত ওভারে ২৩ রানে উইকেটশূন্য থাকেন মুস্তাফিজ।