টাঙ্গাইল পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় মশার উপদ্রবে টেকা কঠিন হয়ে পড়েছে। ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করেও রেহাই মিলছে না। শিশু থেকে বৃদ্ধ প্রত্যেকে মশায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে। দিন-রাত সবসময় মশার কামড়ে নাজেহাল পৌরবাসী। মশা নিধনের জন্য প্রতিবছর বাজেট থাকলেও পৌর কর্তৃপক্ষ মশা নিধনে তেমন কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করছে না।
পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ও পৌরবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, টাঙ্গাইল পৌরসভা প্রথম শ্রেণির পৌরসভা। ১৮টি ওয়ার্ডের এ পৌরসভায় ১ লাখ ২৮ হাজার লোকের বাস।
পৌর এলাকাটি দিয়ে বয়ে গেছে লৌহজং নদী। দখল ও দূষণে পুরো লৌহজং নদী এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। এখানেই ময়লা-আবর্জনা ফেলছে পৌরবাসী। ফলে পানিতে ময়লার স্তূপ জমে প্রচুর মশা জন্ম নিচ্ছে।
এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে মশা নিধন করছে না পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। শীতে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় প্রাকৃতিকভাবেও মশা নিধন হচ্ছে না। ফলে বেড়ে গেছে মশার উপদ্রব।
পৌর এলাকার বাসিন্দারা জানান, ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গেই মশার উপদ্রব ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে মানুষের দৈনন্দিন কাজে ব্যাঘাত ঘটছে। দিনে বা রাতে কয়েল, স্প্রে ও মশারি টাঙিয়েও মশার উৎপাত থেকে রেহাই পাওয়া যাচ্ছে না।
বিশেষ করে সন্ধ্যার পর মশার উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন তারা। কেউই স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারছেন না। যেখানে-সেখানে দূষিত বর্জ্য, বিভিন্ন স্থানে জমে থাকা নোংরা পানি ও সব সড়কের পাশেই ময়লা-আবর্জনা ফেলায় পুরো শহর মশার প্রজননক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।
তারা আরো জানান, পৌর এলাকার কোথাও কোনো ডাস্টবিন ও আবর্জনা ফেলার নির্দিষ্ট কোনো স্থান নেই। এ ছাড়া শহরের সর্বত্র নিয়মিত পরিষ্কার না করায় মশার বংশবিস্তার ক্রমশ বাড়ছেই। আর এতে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে শিশুসহ সব বয়সের মানুষ।
শহরের কলেজপাড়া এলাকার বাসিন্দা সাহেব আলী (৪৭) বলেন, ‘মশার অত্যাচারে সবাই অতিষ্ঠ। মসজিদ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাসায় কোনো স্থানেই রক্ষা নেই। অথচ টাঙ্গাইল পৌরসভার নতুন মেয়র ও কাউন্সিলররা কোনো ব্যবস্থাই নিচ্ছে না। এরা নাগরিক সেবায় কোনো কাজ করে না। শুধুই টাকা কামাইয়ের ধান্ধায় থাকে।’
পৌর শহরের ৩নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা নাজমুল হোসেন বলেন, ‘কাউন্সিলর সাহেবকে ফগার মেশিন কাঁধে নিয়ে ফেসবুকে ছবি আপলোড করার জন্য দু-এশটি জায়গায় একদিন দেখা গিয়েছে। তারপর আর কোথাও দেখা যায়নি। মশার উৎপাত আগের মতোই রয়েছে।’
আদালতপাড়ার বাসিন্দা শামীম বলেন, ‘গত বছর পৌরসভার উদ্যোগে বিভিন্ন এলাকায় মশক নিধন ওষুধ স্প্রে করা হয়েছে। কিন্তু এবার পৌরসভার নতুন মেয়র ও কাউন্সিলররা মশা মারার ব্যাপারে উদাসীন। সেন্টাল ড্রেনও পরিষ্কার করা হচ্ছে না। ফলে মশা প্রতিনিয়ত বাড়ছেই।’
সাবালিয়া এলাকার বাসিন্দা হোসনে আরা আক্তার বলেন, ‘শুধু রাতে না, দিনেও ঘর একটু অন্ধকার হলেই মশা কামড়াচ্ছে। ফলে অনেক সময় দিনেও মশারি ব্যবহার করতে হচ্ছে।’
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত মশা বংশবিস্তার ঘটায়। এ সময় মশার কামড়জনিত রোগে মানুষ বেশি আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে শিশুদের সংখ্যাই বেশি। এ জন্য সবাইকে সচেতন থাকা প্রয়োজন।
পৌরসভা কর্তৃপক্ষ থেকে পাওয়া তথ্যমতে, পৌরসভার প্রত্যেক কাউন্সিলরকে একটি করে স্প্রে মেশিন দেওয়া হয়েছে। মশার ডিম ধ্বংসের জন্য কেরোসিন ও মশা মারার জন্য ডেসিস ২.৫ ইসি নামক ওষুধ দেওয়া হয়েছে। পৌরসভায় ৯টি ফগার মেশিন থাকলেও ছয়টি মেশিন সচল রয়েছে। বাকি তিনটি মেরামতের জন্য দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে মেয়র সিরাজুল হক আলমগীর বলেন, ‘সব ওয়ার্ডে মশা নিধনের কাজ চলমান। সব কাউন্সিলরকে স্প্রে মেশিন ও ওষুধ দেওয়া হয়েছে। প্রতিদিন তারা মশা নিধনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের মনিটরিং করা হচ্ছে।’