logo
আপডেট : ২৪ মার্চ, ২০২২ ১০:১১
চুরি হওয়া ফোন উদ্ধারে ধীরগতি প্রযুক্তি স্বল্পতা 
থানায় প্রযুক্তি বাড়ানোর পরামর্শ
ইদ্রিস আলম

চুরি হওয়া ফোন উদ্ধারে ধীরগতি প্রযুক্তি স্বল্পতা 

প্রতীকী ছবি

হাতের মুঠোয় যেন পৃথিবী! আবার মিনিটেই অন্ধকার। এই অন্ধকার-আলোর খেলা শেষ হয়ে যায় মাত্র সেকেন্ড কিংবা মিনিটের মাথায়। হা-হুতাশ অথবা কান্নাকাটি। এরপর কী? থানায় গিয়ে জিডি, তারপর অপেক্ষার পালা।

এর সবই হচ্ছে রাজধানীজুড়ে। বাস ও ট্রেনের জানালা, ফুটপাত, রেলওয়ে ও বাস স্টেশনসহ জনবহুল এলাকা থেকে প্রতিদিনই চুরি হচ্ছে মোবাইল ফোন। বাদ পড়ে না রিকশার যাত্রীও। ছিনিয়ে নিয়ে যায় একটি অপরাধ চক্র।

বলছি, অতি জরুরি ও প্রয়োজনীয় একটি ডিভাইসের নাম মোবাইল ফোন। কিছু ব্যবহারকারীর কাছে অতি মূল্যবান একটি সম্পদ। লাখ টাকা হারিয়ে গিয়ে যতটা না কষ্ট হতে পারে তার থেকে বেশি কষ্ট হয় মাত্র ২০-৩০ হাজার টাকায় কেনা হারিয়ে যাওয়া মোবাইল ফোনে।

এই আবেগঘন কথাগুলো মোবাইল ফোন হারানো ভুক্তভোগীদের। ইচ্ছে থাকলেও উপায় নেই! অনেকটা সাধ আছে সাধ্য নেই অবস্থা। প্রযুক্তির স্বল্পতায় সময় ক্ষেপণ। এরপরও সফলতা কম নয়।

মোবাইল ফোন উদ্ধারে যথাসময়ে প্রযুক্তি ব্যবহার করতে না পারাই ধীর গতি বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তাছাড়াও থানায় কর্মরত কর্মকর্তাদের রয়েছে নানা কাজের চাপ।

সূত্র বলছে, থানাগুলোতে যদি প্রযুক্তির ব্যবহার চালু করা যায় তাহলে মোবাইল ফোন উদ্ধারে সফলতার মাত্রা দ্বিগুণ হতে পারে। এর মিস ব্যবহারও হতে পারে।

সেদিক খেয়াল রেখে ছোট ছোট ঘটনায় খুব সহজেই সাধারণ মানুষের হৃদয়ে স্থান পেতে পারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

সচেতনতা অবলম্বনের কথা তুলে ধরে পুলিশ বলছে, যাত্রাপথে চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনায় ভুক্তভোগীদের উদাসীনতা রয়েছে। ঢালাওভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপর দোষ চাপানো ঠিক হবে না।

প্রথমে নিজেদের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিজেরই নিতে হয়। এমন ঘটনা কম নয়, তারপরেও সচেতন হচ্ছে না মানুষ।

বিভিন্ন থানায় এমন একাধিক মোবাইল ফোন উদ্ধারকারী পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বললে উঠে আসে সমাধানের পথ। সেইসঙ্গে বেরিয়ে আসে আশা-নিরাশার গল্প। সফলতার গল্প থাকলেও অনেকেই নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।

তারা বলছেন, একটি হারিয়ে যাওয়া মোবাইল উদ্ধার করে যখন প্রকৃত মালিকের হাতে তুলে দেওয়া হয়। উনার (ভুক্তভোগীর) হাসিমাখা মুখ দেখে যে তৃপ্তি পাই তখন মনে হয় আমাদের চাকরিজীবন স্বার্থক।

তারা বলেন, আমরাও চাই যত দ্রুত সম্ভব হারানো মোবাইল ফোন উদ্ধার করে দিতে। অনেক সময় ব্যবহার দেরিতে হয় বলে লোকেশন পেতে দেড়ি হয় উদ্ধারে। আবার প্রযুক্তির স্বল্পতায় চাইলেই লোকেশন ট্যাক করতে পারি না। অন্য সংস্থার সহযোগিতা নিয়ে করে থাকি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উত্তরা জোনের একটি থানার একাধিক মোবাইল ফোন উদ্ধারকারী কর্মকর্তা ভোরের আকাশকে বলেন, উত্তরার আব্দুল্লাহ পুর থেকে জসিম উদ্দিন এলাকায় হারানো মোবাইল ফোন উদ্ধারে নেমে দেখা যায়। প্রথমে লোকেশন দেখায় টঙ্গীতে এরপর রাজধানীর ডেমরায়।

তিনি আরো বলেন, এতে ধারণা করা হয় উত্তরায় ছিনতাইকারীর একটি চক্র আসে টঙ্গী স্টেশন রোড এলাকা থেকে। এরপর সেখান থেকে ফোনগুলো চলে যায় বিভিন্ন এলাকায়।

থানা-পুলিশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার মতো অসংখ্য ঘটনা উঠে এসেছে অনুসন্ধানে। চুরি-ছিনতাই ও হারিয়ে যাওয়া মোবাইল উদ্ধারে রয়েছে আশা-নিরাশার গল্প।

এমনই একজন ভুক্তভোগী গণমাধ্যমকর্মী আঁখি আক্তার। গত বছর কচুখেত এলাকায় অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথে মিরপুর-১০ নম্বর কাফরুল থানা এলাকা থেকে তার একটি সাওমি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে যায় ছিনতাইকারী।

এ ঘটনায় জিডি করে কয়েক মাস তদন্তকারী কর্মকর্তার পেছনে ঘুরেও মেলেনি হদিস। সফলতার গল্পে রয়েছেন জাফর আহমদ নামের এক ব্যক্তি। তিনি পর পর তিন বার মাবাইল হারিয়ে ও কলাবাগান থানা পুলিশের সহযোগিতায় ফিরিয়ে পেয়েছেন। তবে এজন্য খরচ বাবদ ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা দিতে হয়েছে পুলিশকে।

পুলিশের একটি সূত্র বলছে, প্রযুক্তির স্বল্পতার কারণে চাইলেই একটি হারিয়ে যাওয়া মোবাইল দ্রুত উদ্ধার করা সম্ভব হয় না। ফোনের আইএমআইই নম্বর ট্যাকিং করতে তদন্তকারী কর্মকর্তাকে সহযোগিতা নিতে হয় অইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্য কোনো ইউনিটের।

থানায় যদি এ সুবিধা দেওয়া হতো শুধু মোবাইলই নয় কিছু জটিল মামলার পলাতক আসামি গ্রেপ্তার করতেও সহজ হতো। এদিকে, উত্তরা পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহির উদ্দিনের নেতৃত্বে বেশকিছু চুরি-ছিনতাই ও হারোনা মোবাইল উদ্ধারের ঘটনায় ব্যাপক সারা ফেলেছেন।

প্রায় ৩০টি মোবাইল উদ্ধারকারী এএসআই পদ মর্যাদার এক কর্মকর্তা বলেন, হারিয়ে যাওয়া মোবাইল উদ্ধারে অনেক সময় বেগ পেতে হয়। চাইলেই হারিয়ে যাওয়া মোবাইল উদ্ধারের লোকেশন জানতে পারি না। লোকেশন জানতে যে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় সেটি থানায় নেই।

আমাদের অন্য সংস্থার সহযোগিতা নিয়ে কাজ করতে হয়। যা ভুক্তভোগীরা জানেন না। সেজন্য অনেক সময় আমাদের ওপর অভিমান করে নানা কথা বলেন। এরপরও উদ্ধার করে তাদের হাতে তুলে দিতে পারলে তৃপ্তি পাই আমরা।