logo
আপডেট : ২৫ মার্চ, ২০২২ ০১:০০
যোগনিদ্রায় মিলবে ৫ ঘণ্টা ঘুমের সতেজতা
ইসমত জেরিন স্মিতা

যোগনিদ্রায় মিলবে ৫ ঘণ্টা ঘুমের সতেজতা

২০ মিনিটের এই যৌগিক ক্রিয়া ৫ ঘণ্টা ঘুমের সমান সতেজতা দিবে

জেগে ঘুমিয়ে থাকা। যৌগিক নিদ্রা এমনই। ঘুমন্ত ও জাগ্রত অবস্থার মাঝামাঝি নিয়ে গিয়ে ২০ মিনিটের এই যৌগিক ক্রিয়া ৫ ঘণ্টা ঘুমের সমান সতেজতা দেয়। জন্ম দেয় এক নতুন আমি’র। ঘুমের সময় আমরা স্বপ্ন দেখি, কিন্তু চোখে কিছু দেখতে পাই? গন্ধ পাই নাকে? কানে কিছু শুনতে পাই? ঘুমের সময় পঞ্চ ইন্দ্রিয় নিজেদের গুটিয়ে নেয়।

ব্রেনে কোনওো ইনপুট দেয় না। ফলে ব্রেনে ইলেকট্রিক্যাল নিউরোলজিক্যাল সক্রিয়তা কমে। নিউরো ট্রান্সমিটারগুলোর কাজ নিয়ন্ত্রিত হয়। যোগনিদ্রা আমাদের এমন একটি পর্যায়ে নিয়ে যাবে যেখানে জাগ্রত অবস্থাতেই আমরা ঘুমের সমস্ত সুফল পাব।


যোগনিদ্রায় উপকারিতা


অবসাদ কাটাতে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে, স্মৃতিশক্তি এবং রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে যোগনিন্দ্রা অত্যন্ত উপযোগী। আসলে এই যৌগিকক্রিয়ার সময় আমাদের ব্রেনে থিটাওয়েব চলে। যা একমাত্র গভীর ঘুমের সময়ই সম্ভব। তবে মনে রাখতে হবে, যোগনিদ্রা কিন্তু ঘুমিয়ে পড়া নয়।

ঘুমের সতেজতা নিয়ে আসে বলে একে নিদ্রার সঙ্গে তুলনা করা হয়। তবে শরীর-মনের সতেজতা ফেরাতে ঘুমের থেকেও বেশি কার্যকর। ঘুম শুধু মাসকিউলার টেনশনকে কমায়। কিন্তু যোগনিদ্রা মাসকিউলার, ইমোশনাল, মেন্টাল- তিন রকম টেনশনকেই কমায়। সেই অর্থে যোগনিদ্রা সচেতন অবস্থা ও গভীর নিদ্রার মধ্যে বিবাহ!


যোগনিদ্রা কিভাবে করবেন


শবাসনে এই যৌগিকক্রিয়া করতে হবে। এমন একটি ঘর বেছে নিতে হবে, যেখানে অন্য কেউ চট করে ঢুকে আপনাকে নাড়িয়ে দেবে না। প্রয়োজনে দরজার বাইরে ‘ডু নট ডিস্টার্ব’ বোর্ড ঝুলিয়ে দিন। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর খালি পেটে এই যৌগিকক্রিয়া করলে ভালো ফল মিলবে। তবে অনেকে মধ্যাহ্নভোজের পরও যৌগিক নিদ্রা অভ্যাস করে থাকেন।


তবে, শবাসনের আগে মুখে সুন্দর হাসি এনে, মিনিটখানেক হাততালি দিয়ে নিজের মনকে আনন্দে ভরিয়ে তুলতে হবে। শবাসনে থাকা অবস্থায় দুটো পায়ের মাঝখানে, হাত ও শরীরের মাঝখানে ছয় ইঞ্চির ব্যবধান থাকবে।
হাতের চেটো ছাদের দিকে মুখ করে থাকবে। আঙুলগুলো থাকবে অল্প ভাঁজ অবস্থায় শিশুর মুখে যেমন স্বর্গীয় হাসি লেগে থাকে, তেমন হাসি ধরে রাখতে হবে মুখে।

তারপর এই হাসিকে সূর্যকিরণের মতো ঘাড়, কাঁধ, গলা, বুক, পেট, কোমর, হাত-পায়ে ছড়িয়ে দিতে হবে। মনে হবে শরীরের সমস্ত পেশি যেন শিশুর মতো খিলখিলিয়ে উঠছে। যদিও শবাসনের নিয়ম মেনেই মৃতদেহের মতোই থাকতে হবে নিশ্চল। মনে মনেও কোনো অঙ্গ সঞ্চালনের কথা ভাবা যাবে না। এরপর ঘরের বাইরে হওয়া আওয়াজগুলো একটা একটা করে শুনতে হবে, অনুধাবন করতে হবে।

শেষ হলে ঘরের মধ্যে মনোযোগকে টেনে আনতে হবে। ঘরের ভেতরে হওয়া আওয়াজগুলো শুনতে হবে। নিজের শরীরের সঙ্গে মেঝের সংযোগকে অনুভব করতে হবে। অনুভব করতে হবে যোগাম্যাটের সঙ্গে নিজের মাথা, কাঁধ, পিঠ, কোমর এবং পায়ের স্পর্শকে। প্রবল ঘুম আসবে, তবে ঘুমিয়ে পড়া চলবে না। প্রথম দিকে যোগ প্রশিক্ষকের নির্দেশ মেনে অভ্যাস করতে হবে। রপ্ত হয়ে গেলে নিজে থেকেই যোগনিদ্রা করা যাবে।


গোটা প্রক্রিয়ায় চোখ বন্ধ রাখতে হবে। কল্পনা করতে হবে আপনার শরীরের চারপাশে আয়না লাগানো রয়েছে। প্রথমে মাথার উপরে থাকা আয়নায় নিজের যৌগিক চেহারাকে কল্পনা করতে হবে। এরপর ডানদিক এবং বাঁদিকের আয়নায় নিজেকে দেখতে হবে। কিছুক্ষণ নিজেকে দেখার এই কল্পনা চলবে।


পরের পর্যায়ে নিতে হবে সংকল্প। আপনি যদি নিজের মধ্যে কোনো আচরণগত পরিবর্তন আনতে চান বা কোনো রেজলিউশন নিতে চান, তবে তা নিয়ে ফেলুন। প্রেজেন্ট কন্টিনিউয়াস টেন্সে তিনবার সেই সংকল্পের কথা মনে মনে আওড়ান।


এরপর প্রশিক্ষকের নির্দেশ মেনে নিজের মনকে মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত ধাপে ধাপে সঞ্চালন করুন। নিজের শ্বাস-প্রশ্বাস, নাভিমূলের ওঠানামাকে প্রশিক্ষকের নির্দেশ মেনে অনুধাবন করতে হবে। একবার নিজেকে পর্বতের মতো ভারী মনে হবে। পরক্ষণে মনে হবে পাখির পালকের মতো হালকা।


এই যোগিক ক্রিয়া এমন এক তুরীয় অবস্থায় অনুভূতিকে নিয়ে যাবে যে, মনে হবে আপনি গভীর ঘুম থেকে উঠলেন। হ্যাঁ, ২০ মিনিটের যোগনিদ্রায় ৫ ঘণ্টা ঘুমের সতেজতা। অলীক কল্পনা নয়। এটা বিজ্ঞানসম্মত বাস্তব।