logo
আপডেট : ২৫ মার্চ, ২০২২ ১৯:৪০
১৭ বছর পর লাইলির কাছে ফিরল স্বামী
সোহেল রানা, ঠাকুরগাঁও

১৭ বছর পর লাইলির কাছে ফিরল স্বামী

লাইলি-রফিকুল দম্পতির পরিবার

পারিবারিকভাবে লাইলির সঙ্গে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হন রফিকুল ইসলাম। ভালোই যাচ্ছিল তাদের সংসার। এ দম্পতির ঘরে জন্ম নেয় এক মেয়ে শিশু। এর দুই বছর পর আবার গর্ভবতী হন লাইলি। তবে এ সময়ে অভিমানে ঘর থেকে বেরিয়ে যান রফিকুল। এর মধ্যে কেটে যায় ১৭ বছর।

এই ১৭ বছরে একবারও লাইলির সঙ্গে যোগাযোগ করেনি রফিকুল। তবে হাল ছাড়েনি লাইলি। স্বামীর আসার প্রতীক্ষায় বসে ছিলেন তিনি। অবশেষে তার সে প্রতীক্ষা শেষ হয়েছে। ফিরে এসেছেন রফিকুল।

বলছি ঠাকুরগাঁও সদরের আকচা শামস নগর গ্রামের দম্পতি লাইলি-রফিকুলের কথা। বৃহস্পতিবার রাতে দীর্ঘ ১৭ বছর পর ঢাকা থেকে ফিরেছেন তিনি।

লাইলি বেগম জানান, ২০০১ সালে ১০ নভেম্বর রফিকুলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে হয় তার। বিয়ের এক বছর পর তাদের ঘরে জন্ম নেয় এক মেয়ে। ভালোই চলছিল তাদের দাম্পত্য জীবন। তবে ছোট্ট অভিমানে ২০০৫ সালে ৮ এপ্রিল ঘর ছাড়েন তার স্বামী মজনু।

তিনি বলেন, ‘বিয়ের এক বছর পরে আমার বড় মেয়ে রিয়া মনির জন্ম হয়। ওর বয়স এখন আঠারো বছর। ছোট মেয়ে রিনি ববি যখন আমার পেটে তখনই চলে যায় আমার স্বামী। অনেক খোঁজার পরেও তার কোনো সন্ধান পাইনি। ১৭ বছর ধরে কাঁদছি আমি। অন্য ঘর করিনি। হোটেলে মসলা বাটার কাজ করে অন্যের ভিটায় আশ্রিতা হিসেবে জীবন যাপন করছি। সন্তানদের লেখাপড়া শিখাচ্ছি।’

স্বামী ফিরে আসার আনন্দ অশ্রু নিয়ে লাইলি বলেন, ‘আমার বিশ্বাস ছিল একদিন সে সব মান অভিমান ভেঙে ফিরে আসবে। আজ আমি পৃথিবীর সেরা সুখী মানুষ। আমি আজ নিশ্চিন্ত। সন্তানেরা তাদের বাবার মুখ দেখেছে।’

ছোট মেয়ে রিনি ববি বলেন, ‘আমার বাবা কে আমি জানতাম না। মার কাছে কখনো শুনতাম বাবা হারিয়ে গেছে। কখনো বলতো মারা গেছে। এভাবে কেটেছে ১৭ বছর। বাবার আদর স্নেহ ভালোবাসা পাইনি। আমি আমার বাবাকে আর হারাতে চাই না। সে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ভুল করলেও আমরা তার পরিচয়ে বড় হতে চাই। মায়ের রাতের চাপা কান্না আর দেখতে চাই না আমরা।’

প্রতিবেশী হাসিনা বানু বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে সন্তানদের লালন করেছে লাইলি। সন্তানদের মানুষ করেছে। ১৭ বছর পর তার স্বামী ফিরেছে ভালো লাগছে তাই দেখতে আসছি।’

আরেক প্রতিবেশী জুলেখা আক্তার বলেন, ‘লাইলি খুব অভাগি। ভিটে বাড়ি নাই। হোটেলে কাজ করে সমাজে টিকে আছে। স্বামী থেকেও ১৭ বছর ধরে পরিত্যক্তা সে। বাকি জীবন লাইলিকে যেন আর কষ্ট ছুতে না পারে এই প্রত্যাশা করি।’

রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘লাইলির একটা কথা আমাকে কষ্ট দেয়। তাই ১৭ বছর আগে বাড়ি ছেড়ে চলে যাই। সন্তানদের কথা মনে পড়তো। কিছুদিন আগে এখানকার এক লোকের সঙ্গে আমার দেখা হয়। তার থেকে মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করে স্ত্রী সন্তানদের দেখতে আসি।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমি লাইলির অনুমতি ছাড়ায় ঢাকায় বিয়ে করেছি। সেখানে দুই ছেলে সন্তান আছে আমার। সব মিলিয়ে আমি অনুতপ্ত।’

স্থানীয় উপমা পল্লী উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ফারজানা আক্তার পাখি বলেন, ‘লাইলি অপেক্ষা প্রমাণ করে একটা নারী ভেতর থেকে কতটা শক্তিশালী হতে পারে। সমাজের নানা কটু দৃষ্টিভঙ্গি ও কটু কথার সাথে যুদ্ধ করতে হয়েছে তাকে। আমার চোখে লাইলি এক সংগ্রামী নারী।’