logo
আপডেট : ২৬ মার্চ, ২০২২ ১১:৪২
স্বাধীন দেশে বঙ্গবন্ধুর লড়াই
নিজস্ব প্রতিবেদক

স্বাধীন দেশে বঙ্গবন্ধুর লড়াই

মাত্র ৫৫ বছরের সংক্ষিপ্ত জীবনকালে পরাধীন শাসন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাঙালি জাতিকে বঙ্গবন্ধু সুনিপুণ কারিগরের মতো বীরের জাতিতে পরিণত করেন

১৯২০-১৯৭৫। মাত্র ৫৫ বছরের সংক্ষিপ্ত জীবনকালে পরাধীন শাসন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাঙালি জাতিকে বঙ্গবন্ধু সুনিপুণ কারিগরের মতো বীরের জাতিতে পরিণত করেন। বাঙালি জাতির অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ১৯৬৬ সালে ৬ দফা দাবির মাধ্যমে স্বাধিকার আন্দোলনকে বেগবান করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান। ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান এবং ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে বিপুল বিজয়ে তিনি পরিচিত হন এ জাতির অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে।


ধর্মের ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালে যে রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন, ২৪ বছর পর সেখানে ধর্মনিরপেক্ষতা আর সমাজতন্ত্রের কর্মসূচি অন্তর্ভুক্তির উদ্দেশ্য মহতী; কিন্তু এ নীতিমালার উপযোগী বাস্তবায়ন কৌশল প্রণয়নের আগেই শুরু হয় বিরোধিতা। নীতি ও কৌশলেন মধ্যে সংহতি ও সমন্বয় যে কোনো কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য অপরিহার্য। শুধু তাই নয়, কৌশল নির্ধারণ ও তার বাস্তবায়নে বঙ্গবন্ধুর ছিল চরম ও চূড়ান্ত রাজনৈতিক সদিচ্ছা।


১০ জানুয়ারি ১৯৭২ দেশে ফিরেই তিনি উপলব্ধি করলেন, গণমানুষের আবেগ-আকাঙ্ক্ষা, সমস্যাকবলিত দেশ আর কতিপয় সুযোগসন্ধানীর দেশবিরোধী তৎপরতার কথা। এর পরিপ্রেক্ষিতে তিনি স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মাত্র তেরো দিন পর অর্থাৎ ২৪ জানুয়ারি ১৯৭২ টাঙ্গাইলের এক জনসভায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সরকারি কর্মচারীদের হুঁশিয়ার করে বক্তব্য রাখেন। আওয়ামী লীগের মধ্যে যারা দালালি করছে তিনি তাদের কান ধরে বের করে দেওয়ার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে সরকারি কর্মচারীদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, আমি বলছি ঘুষ আর দুর্নীতি বাংলাদেশে থেকে মুছে যাবে।


এরূপ হুঁশিয়ারি আর নির্দেশনা তিনি প্রায় প্রতিটি ভাষণেই প্রদান করেছেন। কিন্তু তার সেই নির্দেশনার প্রতি যথাযথ সম্মান রাখেনি ওই দেশবিরোধী অপশক্তি। অবশেষে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়নের ঘোষণা দিয়েও সর্তক করতে চাইলেন। ১৯৭২ সালের ৭ জুন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রদত্ত ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আজ মুনাফাখোর, আড়তদার চোরকারবারি সাবধান হয়ে যাও। ভবিষ্যতে যদি জিনিসের দাম বাড়াও আমি তোমাদের শেষ করে দেব, কারফিউ করে করে। আর দরকার যদি হয় আইন করব।’ অর্থাৎ, হুঁশিয়ারিতে সংশোধন না হওয়ায় আইন পাসের উদ্যোগে নিলেন।


উল্লেখ্য, যুদ্ধ শেষ হলেও তার প্রতিক্রিয়াগত যুদ্ধ, পরবর্তী সমন্বয় ও সহাবস্থানের দ্বন্দের কারণে তীব্র বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেশের সমাজ প্রতিষ্ঠান ও কার্যক্রমে প্রতিফলিত হতে থাকে। এমনকি উভয়পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ যদি একপক্ষের সামরিক আধিপত্যে সমাপ্তও হয়; তবুও অবস্থানগত স্বার্থ আর সমঝোতায় অসন্তুষ্টির ফলে যুদ্ধপরবর্তী সমাজের নতুন সংঘাতের সৃৃষ্টি হয়। উদাহরণস্বরূপ- ২০০১ সালের পর আফগানিস্তান, ২০০৩ সালের পর ইরাকে নতুনভাবে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব শুরু হয়।


১৯৭১-পরবর্তী বাংলাদেশেও পরাজিত শক্তি আর তাদের স্থানীয় দোসর, এমনকি প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী দেশে বিভিন্নভাবে সংঘাত সৃষ্টি করতে থাকে। মুজিবনগর ফেরত-পাকিস্তান প্রত্যাগত কর্মচারী, ধর্মভিত্তিক গ্রুপ, ধর্মনিরপেক্ষ গ্রুপ, মুক্তিযোদ্ধা-অমুক্তিযোদ্ধা, ব্যক্তি-সম্পদের মালিক-জাতীয়করণকৃত মালিকানা ইত্যাদি বিভাজন বাংলাদেশেও প্রকট হয়ে ওঠে। কখনো তা রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটিয়ে আবার কখনো অর্থনৈতিক দুর্নীতির মাধ্যমে।


দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের রাষ্ট্র গঠনের আবহাওয়া তৈরি হয়েছে ঔপনিবেশিক বোধ থেকে। এই বোধ রাষ্ট্র ও সমাজের যোগসূত্র প্রতিষ্ঠা করেছে। রাষ্ট্রের-পরিচালক, রাজনৈতিক নেতৃত্ব- প্রশাসক ও জনসমষ্টির মধ্যে আন্তঃসম্পর্কে কি হবে, হস্তক্ষেপের পরিধি কি হবে- তা ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এক গুরুত্ববহ প্রশ্ন। কিন্তু সে প্রশ্নের সুরক্ষা না করেই রাষ্ট্র পরিচালনা শুরু হয়েছে। এ কথা ঠিক যে, রাষ্ট্রক্ষমতা আর সমাজকাঠামোর আন্তঃসম্পর্কের বিষয়টি নির্ধারণের জন্য সময় ও গবেষণার প্রয়োজন ছিল তা স্বীকার্য হলেও অন্য বাস্তবতায় সম্ভব হয়ে ওেেঠনি। হয়তোবা এ রাষ্ট্রকাঠামোর আন্তঃসম্পর্কের সুনির্দিষ্ট মডেলের অনুপস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু নিজেই একটি ব্যক্তিগত শাসনের মডেল নির্মাণ করেছেন। এই বোধ আশ্রয় করে রাষ্ট্র পরিচালকদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করেছেন।

দেশের সরকারপ্রধান, রাজনৈতিক দল, প্রশাসন ও জনগণের মধ্যে প্রশাসনিক সুস্পষ্ট কাঠামোর অভাবে এই আমলানির্ভর পুঁজিবাদী রাষ্ট্রে ফিরে যাওয়ার প্রক্রিয়া ব্যাহত করতে মুজিব সরকার সমর্থন দিলেন না। ততক্ষণে মজুতদার, চোরকারবারি, কালোবাজারি, দুর্নীতিবাজচক্র আর চাটার দল এতটাই শিকড় গেড়েছিলেন যে প্রশাসনিক দুর্বলতার সুযোগে কোনো হুঁশিয়ারিকে গুরুত্ব দেয়নি। যে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত, আইন, প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হয়েছিল জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য এবং তাদের পক্ষে থাকার জন্য তা শুধুই সংবিধান, নির্বাচনে জয়ী হওয়া বা প্রশাসনিক নির্দেশনির্ভর নয়। জনগণের পক্ষে থাকার অর্থ জনগণের অবস্থার পরিবর্তন আনা- সেটার দৃশ্যমানতা ক্রমশ স্থবির হতে থাকে।


স্বাধীন বাংলাদেশে বিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার মধ্যেই তার সরকার ১৯৭২ সালেই উপহার দিলেন সংবিধান। সংবিধানের মূল বৈশিষ্ট্য হলো : গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদ। পাকিস্তানের সংবিধান থেকে সম্পূর্ণ এক আলাদা বৈশিষ্ট্যের নীতিমালার আলোকে বাংলাদেশের শাসনকাজ শুরু হলো। একটি যুদ্ধপরবর্তী স্বাধীন দেশে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তিদের সাজা দেওয়ার দাবি ছিল স্বাধীনতার পক্ষের সকল শক্তি ও জনগণের এ দাবি ছিল যুক্তিসঙ্গত। ৩০ লাখ শহীদের রক্তস্নাত এ পুণ্যভূমিতে দখলদার হত্যা লণ্ঠনে নিয়োজিত এমন বাহিনীর দোসরদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জোরালো দাবির পক্ষে বঙ্গবন্ধু সরকার ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি ‘বাংলাদেশ কোলাবরেটর স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল অর্ডার’ জারি করেন।


এই আইনে তৎকালীন এসব রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী হিসেবে কোলাবরেটর স্পেশাল অ্যাক্ট এর সংশোধনীর আওতায় সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর বন্দি থাকে ১১ হাজার অপরাধী। এভাবে রাজাকার, আলবদর, আলশামস ও শান্তি কমিটির সদস্য হিসেবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সদস্যরা এই আইনের আওতায় অপরাধী হিসেবে বিচারের সম্মুখীন হওয়ায় এসব দল অন্যান্য দেশী-বিদেশী ও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী অন্যান্য পক্ষের সঙ্গে আঁতাত করতে থাকে। যা পরে দেশে হানাহানি, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিতে ইন্ধন জোগায়।


অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ক্ষেত্রে যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয় সেটিও বঙ্গবন্ধুর প্রশাসনকে দুর্বল করে তোলে। একদিকে সমাজে ছিল পাকিস্তানি যুদ্ধবন্দি এবং তাদের বাঙালি সহযোগীদের বিচারের প্রবল দাবি, অন্যদিকে পাকিস্তান ও তার বন্ধুরাষ্ট্রদের পক্ষ হতে বিচার বাতিলের চাপ। যুদ্ধের আগে যে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম, যুদ্ধক্ষেত্রের অভিজ্ঞতা বিভিন্ন গ্রুপের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন নিয়ে আসে। এই যে যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশের রাজনৈতিক মেরুকরণ তাকে একটি গঠনমূলক যৌক্তিক পর্যায়ে উন্নীত করার ক্ষেত্রে কোনো ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলো না। সুস্থ ও স্বাভাবিক রাজনীতির চর্চার ক্ষেত্রে যে শূন্যতা সৃষ্টি হলো সেই দুর্বলতার পূর্ণ সুযোগ গ্রহণ করেছিল সুযোগসন্ধানীরা।
এরূপ মুক্তিযোদ্ধারা সমাজে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখতেন। স্বাধীনতার এক বছরের মধ্যেই আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠনের একটি অংশ বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গঠন করে নতুন রাজনৈতিক দল জাসদ। দ্বিধাবিভক্ত কমিউনিস্ট সংগঠনের অনেকগুলো গ্রুপ সারাদেশে সহিংস তৎপরতা শুরু করে। স্বাধীনতার পরাজিত শত্রুরা মিশে যায় এই নতুন রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায়।


একইভাবে সমাজতন্ত্রের কোনো সুনির্দিষ্ট তত্ত্বের অনুসরণ বা তার উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টিতে সিভিল সোসাইটি, রাজনৈতিক নেতৃবর্গ বা আমলা শ্রেণির প্রয়োজনীয় সহায়তা পাওয়া যায়নি। এ কথা ঠিক যে, সমাজ পরিবর্তনে দেশবাসীর কাছে বঙ্গবন্ধুর যে প্রতিশ্রুতি ছিল, সেটা পালনে তিনি ছিলেন ব্যগ্র আকুল আর দ্বিধাহীন। কিন্তু প্রচলিত আর্থ-সামাজিক ও বিরাজমান বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি, প্রশাসন যন্ত্রেও দুর্বলতা ও অনির্ভরযোগ্যতা, রাজনীতিবিদদের স্বার্থপরতা অসহযোগিতা দুর্নীতিবিরোধী অভিযানকে দুষ্কর করে তোলে।


বঙ্গবন্ধুর চরিত্রে যে উদারতা তা রাষ্ট্র পরিচালনায় অনুসরণের যে ক্ষতি হয়েছিল তা তিনি নিজেই উল্লেখ করেছেন। চতুর্থ সংশোধনী বিল পাসের পর ২৫ জানুয়ারি ১৯৭৫ নতুন রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘কোনো দেশের ইতিহাসে নাই বিপ্লবের পর বিপ্লবে বাধা দিয়েছে যারা, শত্রুর সঙ্গে সহযোগিতা করেছে যারা, যারা এ দেশের মানুষকে হত্যা করেছে, তাদের কোনো দেশে, কোনো যুগে ক্ষমা করে নাই, কিন্তু আমরা করেছিলাম, সবাইকে ক্ষমা করেছিলাম। কিন্তু তাদের অনেকের পরিবর্তন হয় নাই। তারা এখনো গোপনে বিদেশিদের কাছ থেকে পয়সা এনে বাংলার স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। কোনো দেশ করে নাই, কোনো ইতিহাসে এরূপ ক্ষমা নাই কিন্তু দেশের শাসক মুজিব করেছিলেন। তার পরিণতি কি? স্বাধীনতার পর থেকেই তারা ষড়যন্ত্র করছে এবং এ বক্তৃতার ৭ মাস পর বঙ্গবন্ধু এসব ষড়যন্ত্রকারীদেও হাত নিহত হলেন। এটা প্রশাসনিকভাবে এক ভুল হিসেবে চিহ্নিত।


সমগ্র বাঙালি জাতিকে সামরিক, সিভিল জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতার এ আদর্শিক সমন্বয়ে স্বাধীন দেশে তিনি শুরু করেন নতুন সরকারের কার্যক্রম। কিন্তু গণতন্ত্রের সুযোগে চলতে থাকে অসহযোগিতা আর বিরুদ্ধাচরণ, রাজনীতি, প্রশাসন, সামরিক, বেসামরিক আর কিছু মুক্তিযোদ্ধাদের দখলদারী মনোভাব, চোরাকারবারি, দুর্নীতিবাজদের অপতৎপরতায় এক দ্বন্দ্বময় ও সংঘাতময় পরিস্থিতি বিরাজ করতে থাকে।


বঙ্গবন্ধু নিজেই এই অভ্যন্তরীণ দ্বান্দ্বিক পরিবেশ সর্ম্পকে বলেন, ‘এক গ্রুপ আমরা পলিটিশিয়ান হয়ে গেলাম, এক গ্রুপ আমরা বুদ্ধিজীবী, এক গ্রুপ স্কুলটিচার, যারা এই ঘোরপ্যাঁচের মধ্যে আসতে চায় না। এক গ্রুপ সরকারি কর্মচারী হয়ে গেলাম, কেউ অমুক হয়ে গেলাম। আর কিছুসংখ্যক থেকে গেলাম রাজনীতিবিদ। কিন্তু একচুয়াল যেটা-পিপল সমস্ত একতাবদ্ধ করতে না পারলে সমাজের দুর্দিনে দেশের মঙ্গল হতে পারে না। ... একদল বলে আমরা ব্যুরোক্র্যাট। তাদের এটিচিউট হলো : টু ডিসক্রেডিট দি পলিটিশিয়ান। পলিটিশিয়ানরা তাদের স্ট্র্রেংথ দেখবার জন্য বলত- ‘অলরাইট গেট আউট, এই নিয়ে সমস্ত দেশ একটা ভাগ ভাগ অবস্থার মধ্যে থাকত।’


সাবেক প্রধান বিচারপতি হাবিবুর রহমান ‘বঙ্গবন্ধু : জননেতা থেকে রাষ্ট্রনায়ক’ গ্রন্থে উল্লেখ করেন ‘মুক্তিযুদ্ধের প্রতি যাদের আনুগত্য ছিল না তাদেরকে প্রশাসনে রেখে সাফল্যের সাথে বিপ্লবাত্মক পরিস্থিতি মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। ... শেখ মুজিব যে অহংকারে নিজেকে অজাতশত্রু মনে করেছিলেন তার ভিত্তি মোটেও শক্ত ছিল না। .... রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষমতাহীনতা ও কোন্দল, সুযোগসন্ধানী বেসামরিক ও সামরিক আমলাদের ক্ষমতার বলয়ে আত্মপ্রতিষ্ঠার চক্রান্ত, দুর্নীতি, অর্থনীতিবিদদের অবাস্তব পরিকল্পনা এবং তাঁর চতুঃপার্শ্বের ব্যক্তিদের সীমাহীন অর্থলিপ্সা মধ্যাহ্নে অন্ধকার সৃষ্টি করেছিল।’ এখানে তিনি যুদ্ধোত্তরকালে রাজনৈতিক আমলাতান্ত্রিক, অর্থনৈতিক কার্যক্রমের দ্বান্দ্বিক বাস্তবতা তুলে ধরেছেন।


এভাবে বাঙালির অধিকার রক্ষার সংগ্রামে বঙ্গবন্ধু পকিস্তানি শোষকদের বিরুদ্ধে আপসহীনভাবে যেমন লড়েছেন, একইভাবে তার স্বপ্নের সোনার বাংলায়, স্বাধীন দেশেও অগণতান্ত্রিক আর দেশদ্রোহী অপশক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত থেকেছেন। সে যুদ্ধ যেমন পরাজিত শক্তির বিরুদ্ধে, তেমনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বিপথগামী শক্তি, দুর্নীতিবাজ, সিভিল ও মিলিটারি ব্যুরোক্র্যাসি, এমনকি নিজ দলের কুচক্রীদের বিরুদ্ধেও।


লেখক: জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের সাবেক পরিচালক