logo
আপডেট : ২৬ মার্চ, ২০২২ ১২:৩৮
মহান স্বাধীনতা দিবসের অর্থ ও তাৎপর্য
নিজস্ব প্রতিবেদক

মহান স্বাধীনতা দিবসের অর্থ ও তাৎপর্য

বাঙালির আত্মত্যাগের ফলশ্রুতিতে নয়মাসব্যাপি রক্তাক্ত যুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালি ছিনিয়ে আনে বাংলাদেশের স্বাধীনতা

১৯৪৭ এর দেশভাগের পর খ-িত কোনো অংশ থেকে নতুন দেশের আবশ্যকতা সাধারণভাবে দ্বি-জাতি তত্ত্ব এবং সুনির্দিষ্টভাবে পাকিস্তান রাষ্ট্রের ব্যর্থতার পরিচয়। এই ব্যর্থতার জন্য কেবল পাকিস্তান দায়ী নয়, ১০০০ মাইলের অধিক দূরত্বে অবস্থিত কোনো ভূখ-কে যে জোর করে ধর্মের নাম একীভূত করা যায় না, এটা যারা বুঝতে পারেননি (কিংবা বুঝেও এই গোলমাল সৃষ্টি করেছেন), এই ব্যর্থতার দায় তাদেরও। তবে এই অযৌক্তিক অন্তর্ভুক্তি না হলে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন স্বতন্ত্র দেশের আবির্ভাব ঘটতো কিনা অজানা- যে দেশটি ভাষা, ধর্ম, জাতি, ইত্যাদি সকল বিচারে কেবল অনন্য নয়; ধর্ম-বর্ণ দিয়ে যে রাষ্ট্র গঠিত হতে পারে না তথা দ্বি-জাতি তত্ত্বের অসারতার এটি একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। অমোঘ বাস্তবায় বাংলাদেশ নামক স্বাধীন রাষ্ট্রের বিকাশ তাই ভারত কিংবা পাকিস্তান থেকে স্বকীয়- যেখানে সকল ধর্ম, জাতি, ভাষাভাষী, তথা সকল ধরন ও শ্রেণীর মানুষের সহনশীল বসবাস নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে মাঝে মাঝে এর ব্যত্যয় যে ঘটে না, তা নয়। এর কারণ ঐতিহাসিক ও সমসাময়িক। একদিকে পূর্বেকার ঔপনিবেশিক প্ররোচিত ধর্মভিত্তিক চিন্তা-চেতনা; অন্যদিকে লুন্ঠন মনোবৃত্তি এবং এর সাথে যুক্ত ক্ষমতার রাজনীতি। এই বাস্তবতায় বাংলাদেশের স্বাধীনতার অর্থ ও তাৎপর্য অনুধাবন বারংবার প্রয়োজন।


১৯৪৭- এর দেশভাগের পর ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচনের জন্য সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এটাই ছিল পাকিস্তানের স্বাধীনতার পর প্রথম সাধারণ নির্বাচন, এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার আগের সর্বশেষ নির্বাচন। ৩৩০টি সাধারণ নির্বাচনী এলাকায় ভোট হয়েছিল। জনসংখ্যা অনুযায়ী পূর্ব পাকিস্তানে ১৬২টি এবং পশ্চিম পাকিস্তানে ১৩৮টি আসন। আরও তেরোটি আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত ছিল (যার মধ্যে সাতটি ছিল পূর্ব পাকিস্তানে এবং ছয়টি ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য বরাদ্দ ছিল) ।


নির্বাচনের ফলাফল ছিল আওয়ামী লীগ তথা বাংলাদেশের পক্ষে এক বিজয়সূচক মাইলফলক। আওয়ামী লীগ ১৬২টি সাধারণ আসনের মধ্যে ১৬০টি এবং পূর্ব পাকিস্তানের সাতটি মহিলা আসনে জয়লাভ করে, অর্থাৎ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করার পরও ক্ষমতাসীন পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠী আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেনি। কথা দিয়েও বারবার কেবল প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে। ২৩ বছরের বৈষম্য, বঞ্চনা, নৃশংসতা আর পরাধীনতার শিকল ভাঙার বুঝি সময় এলো। বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা আর প্রজ্ঞার উপর ভর করে দেশমাতৃকাকে মুক্ত করতে বদ্ধপরিকর ছিলেন। অবশেষে সেই লক্ষ্যে তাঁর আহবান: ‘এবারের সংগ্রাম, আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম'।


স্বাধীনতার ঘোষণার সূচনা মূলত ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের মধ্য দিয়ে শুরু। মূলত ৭ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ হিসেবে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ পরিচালিত হয়। এর মধ্যে ১৬ মার্চ থেকে ২৪ মার্চ পর্যন্ত ইয়াহিয়া-মুজিব-ভুট্টো আলোচনা হয়। ২৫ মার্চ আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার পর সন্ধ্যায় ইয়াহিয়া খান হঠাৎ ঢাকা ত্যাগ করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী তার নির্দেশে ২৫শে মার্চের কালো রাত্রিতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী নিরস্ত্র বাঙালিদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারা নৃশংস আক্রমণ চালায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পিলখানা রাইফেল সদর দফতর ও রাজারবাগ পুলিশ হেডকোয়ার্টার।


বঙ্গবন্ধু ২৫শে মার্চ রাট ১২টা ২০ মিনিটে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন: ‘এটাই হয়তো আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। বাংলাদেশের জনগণ, তোমরা যে যেখানেই আছ এবং যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শেষ পর্যন্ত দখলদার সৈন্য বাহিনীকে প্রতিরোধ করার জন্য আমি তোমাদের আহবান জানাচ্ছি। পাকিস্তান দখলদার বাহিনীর শেষ সৈনিকটিকে বাংলাদেশের মাটি থেকে বিতাড়িত করে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত তোমাদের যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে’ (অসমাপ্ত আত্মজীবনী, পৃ. ২৯৯)। এই ঘোষণা বাংলাদেশের সর্বত্র ওয়ারলেস, টেলিফোন, ও টেলিগ্রামের মাধ্যমে প্রেরিত হয়। এর সঙ্গে সঙ্গেই তিনি বাংলায় বার্তা পাঠান:
‘পাকিস্তান সেনাবাহিনী অতর্কিতভাবে পিলখানা ইপিআর ঘাঁটি, রাজারবাগ পুলিশ লাইন আক্রমণ করেছে এবং শহরের রাস্তায় রাস্তায় যুদ্ধ চলছে, আমি বিশ্বের জাতিসমূহের কাছে সাহায্যের আবেদন করেছি। আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা বীরত্বের সঙ্গে মাতৃভূমি মুক্ত করার জন্য শত্রুদের সঙ্গে যুদ্ধ করছে। সর্বশক্তিমান আল্লাহর নাম আপনাদের কাছে আমার আবেদন ও আদেশ দেশকে স্বাধীন করার জন্য শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যান। আপনাদের পাশে এসে যুদ্ধ করার জন্য পুলিশ, ইপিআর, বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও আনসারদের সাহায্য চান। কোন আপোস নাই। জয় আমাদের হবেই। পবিত্র মাতৃভূমি থেকে শেষ শত্রুকে বিতাড়িত করুন। সকল আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী এবং অন্যান্য দেশপ্রেমিক প্রিয় লোকদের কাছে এ সংবাদ পৌঁছে দিন। আল্লাহ আপনাদের মঙ্গল করুন। জয় বাংলা।’


বঙ্গবন্ধুর এই বার্তা তাৎক্ষণিকভাবে বিশেষ ব্যবস্থায় সারা দেশে পাঠানো হয়। সর্বস্তরের জনগণের পাশাপাশি চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও যশোর সেনানিবাসে বাঙালি জওয়ান ও অফিসাররা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনী ১:৩০ মিনিটে বঙ্গবন্ধুকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাসবভন থেকে গ্রেফতার করে ঢাকা সেনানিবাসে নিয়ে যায় এবং এর তিন দিন পর তাঁকে বন্দি অবস্থায় পাকিস্তান নিয়ে যাওয়া হয় (অসমাপ্ত আত্মজীবনী, পৃ. ২৯৯)। ২৬ মার্চ জেনারেল ইয়াহিয়া এক ভাষণে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বঙ্গবন্ধুকে দেশদ্রোহী বলে আখ্যায়িত করে। ২৬ মার্চ চট্টগ্রাম স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা এম. এ. হান্নান এবং পরবর্তীতে মেজর জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতা ঘোষণাপত্রটি পাঠ করেন।


৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ ও ২৬শে মার্চের স্বাধীনতার ঘোষণার পর সর্বস্তরের বাঙালি মাতৃভূমিকে শত্রুমুক্ত করার যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ৩০ লক্ষ শহীদ, দুই লক্ষাধিক নারীর সম্মান এবং কোটি বাঙালির আত্মত্যাগের ফলশ্রুতিতে নয়মাসব্যাপি রক্তাক্ত যুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালি ছিনিয়ে আনে বাংলাদেশের স্বাধীনতা। যখন কিনা পূর্ব পাকিস্তান (তথা বাংলাদেশ) স্বায়ত্তশাসনের জন্য সংগ্রাম করছে, পাকিস্তানের সাথে একীভূত থেকে নির্বাচন করছে, তথাপি কেমন করে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন তার প্রেক্ষিত, ও তাৎপর্য অনুধাবন করা প্রয়োজন।


দ্বি-জাতি তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে ভারত-পাকিস্তান দেশভাগের পরপরই বঙ্গবন্ধু বাঙালিদের উপর পাকিস্তানিদের খবরদারি ও কাঠামোগত বৈষম্য উপলব্ধি করেছিলেন। সেই উপলব্ধি ১৯৪৭ এর শেষের দিক থেকে, যা তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনী'তে সুস্পষ্ট। দেশভাগের অব্যবহিত পরপরই তাঁর চিন্তা-ভাবনা ও প্রতিক্রিয়ায় তা প্রতিভাত হয়ে ওঠে একটি ঘটনার মধ্য দিয়ে: “আমার ভীষণ জেদ হয়েছে মুসলিম লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে। যে পাকিস্তানের স্বপ্ন দেখেছিলাম, এখন দেখি তার উল্টা হয়েছে। এর একটা পরিবর্তন করা দরকার।” (রহমান ২০১২, ১২৫-১২৬)। এই পরিবর্তন তিনি ঘটিয়েছিলেন ২৫ বছরের আপোষহীন আন্দোলন সংগ্রাম আর প্রায় ১৪ বছরের কারাভোগের মধ্য দিয়ে।


পাকিস্তানের বৈষম্যনীতি প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন, “স্বাধীন দেশ হয়েছে, তবু মানুষের দুঃখ-কষ্ট দূর হবে না কেন? দুর্নীতি বেড়ে গেছে, খাদ্যাভাব দেখা দিয়েছে। বিনা বিচারে রাজনৈতিক কর্মীদের জেলে বন্ধ করে রাখা হয়েছে। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসাবে মুসলিম লীগ নেতারা মানবে না। পরচিম পাকিস্তানে শিল্প কারখানা গড়া শুরু হয়েছে। পূর্ব পাকিস্তানের দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে না। রাজধানী করাচি। সব কিছুই পশ্চিম পাকিস্তানে। পূর্ব বাংলায় কিছু নাই।” পূর্ব বাংলা বা বাংলাদেশের জন্য কিছু নাই, বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি তাই। ভাষার অধিকার, ভোটার অধিকার, ভোটের রায়, স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার, ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার, সুষম উন্নয়ন, কর্মসংস্থান, রাজনীতি, প্রতিনিধিত্ব ইত্যাদি সকল প্রশ্নে বঙ্গবন্ধুসহ তৎকালীন বাঙালি নেতৃবৃদ্ধ মর্মে মর্মে পাকিস্তানিদের বিমাতাসুলভ এবং উপনিবেশিক মনোভাব অনুভব করেছিলেন; স্বপ্ন দেখেছিলেন পৃথক স্বাধীন দেশ, বাংলাদেশ-যার ভিত্তি হবে গণতন্ত্র, ন্যায্যতা ও অসাম্প্রদায়িকতা, যা বাঙালির চিরায়ত ঐতিহ্য।


বলাবাহুল্য, বাংলাদেশ নামক নতুন দেশ কিংবা পাকিস্তানের বাইরে পৃথক কোন স্বাধীন দেশের ভাবনা নতুন ছিল না। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্বপ্ন তিনি স্পষ্ট করেছিলেন ১৯৬৯ সালের ৫ ডিসেম্বর শহীদ সোহ্রাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায়, পূর্ব বাংলার নামকরণ ‘বাংলাদেশ’ করার মধ্য দিয়ে। এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধুর (১৯৬৯ এর ৫ জানুয়ারিতে ভূষিত) বক্তব্য ও যুক্তি প্রণিধানযোগ্য: “একসময় এদেশের বুক হইতে, মানচিত্রের পৃষ্ঠা হইতে ‘বাংলা’ কথাটির সর্বশেষ চিহ্নটুকুও চিরতরে মুছিয়া ফেলার চেষ্টা করা হইয়াছে। ... একমাত্র ‘বঙ্গোপসাগর’ ছাড়া আর কোন কিছুর নামের সঙ্গে ‘বাংলা’ কথাটির অস্তিত্ব খুঁজিয়া পাওয়া যায় নাই। ...জনগণের পক্ষ হইতে আমি ঘোষণা করিতেছি-- আজ হইতে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশটির নাম ‘পূর্ব পাকিস্তান’- এর পরিবর্তে শুধুমাত্র ‘বাংলাদেশ’ (রহমান ২০১২, ২৯৭)।


বঙ্গবন্ধু স্বপ্নের এই বাংলাদেশের স্বাধীনতার আহবান ও চূড়ান্ত ঘোষণা দিয়েছিলেন ১৯৭১ সালের ৭ ও ২৬ মার্চ। ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেও, বঙ্গবন্ধু এর তর্জুনি ইঙ্গিত করেছিলেন ৭ই মার্চ। সেদিন সবকিছু অনুপুঙ্খভাবে বলে দিয়েও, স্বাধীনতা সংগ্রামের দিকনির্দেশনা সত্ত্বেও তিনি রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছেন। তাঁকে কিংবা বাঙালিকে যেন বিচ্ছিন্নতাবাদী বলে অভুযুক্ত না করা যায়, তাই তিনি পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠীর কাছে কয়েকটি মৌলিক ও যৌক্তিক দাবি বা শর্ত উত্থাপন করেছিলেন; যে শর্তাদি পূরণ না করলে বাঙালিকে আন্দোলনের জন্য দায়ী করা যাবে না।


যেহেতু ৭ই মার্চ থেকে ২৫শে মার্চ পর্যন্ত এ সকল শর্তাদি পূরণ করা হয়নি; উপরন্তু প্রতারণা করা হয়েছে, এবং ২৫শে মার্চের কালোরাত্রিতে নিরস্ত্র বাঙালির উপর নৃশংস আক্রমণ পরিচালনা করা হয়েছিল; তাই স্বাধীনতা ঘোষণা ব্যতীত ভিন্ন কোন উপায় ছিল না। এখানেই বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক বিচক্ষণতা। তাছাড়া ২৫শে মার্চ রাতে যখন গোটা ঢাকা শহরে হানাদার বাহিনী আক্রমণ করেছে, সেই মুহূর্তেও তিনি অবিচল ছিলেন। তিনি প্রাণ রক্ষার্থে পালিয়ে না গিয়ে, অন্যান্য নেতাদের পালিয়ে যেতে বুদ্ধি-পরামর্শ দিয়ে, নিজে বাসভবনে অবস্থান করেছেন; গ্রেফতার বরণ করে নিয়েছেন। এই যে পালিয়ে না যাওয়া কিংবা গ্রেফতার হওয়া, এটা যে কত বড় রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয়, তা রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ স্বীকার করেছেন।


২০২১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা ও বিজয়ের অর্ধশতক অতিক্রান্ত করেছে। স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে, কিন্তু মানুষের মুক্তি এবং শোষণহীন সমাজ নির্মাণ এখনো বাকি। বাংলাদেশ সে লক্ষ্য পূরণে সফল হোক, এটাই আমাদের প্রত্যাশা। এখন সময় সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার, বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলা’ গড়ার মানসে নিজেদের আত্মনিয়োগ করার। বঙ্গবন্ধুর মতো নেতা যাদের, তাঁর ভাবাদর্শের বাস্তবায়ন ব্যতীত অন্যকিছুর অনুশীলন গ্রহণযোগ্য নয়।

লেখক: অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়