logo
আপডেট : ২৭ মার্চ, ২০২২ ১২:০৭
১৩ বছর পর রায় বাস্তবায়নের উদ্যোগ
যৌন হয়রানি প্রতিরোধে অধস্তন আদালতে কমিটি গঠনের নির্দেশ
এম বদি-উজ-জামান

যৌন হয়রানি প্রতিরোধে অধস্তন আদালতে কমিটি গঠনের নির্দেশ

প্রতীকী ছবি

হাইকোর্টের নির্দেশনার প্রায় ১৩ বছর পর কর্মস্থলে নারী ও শিশুর প্রতি যৌন হয়রানি প্রতিরোধে রায় বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিল সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। এরই অংশ হিসেবে দেশের সব অধস্তন আদালতে কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট। এই কমিটি গঠন করে ১৫ দিনের মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন সুপ্রিম কোর্টে পাঠাতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার মো. বদরুল আলম ভূঞার স্বাক্ষরে বুধবার বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে যৌন হয়রানি সংক্রান্ত অভিযোগ গ্রহণ, প্রাপ্ত অভিযোগ বিষয়ে অনুসন্ধান ও প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রদানসংক্রান্ত কমিটির সভাপতি বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত কমিটির দ্বিতীয় সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রত্যেক জেলা জজ আদালত, মহানগর দায়রা জজ আদালত, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ও চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাইকোর্ট বিভাগের রিট পিটিশন নম্বর ৫৯১৬/২০০৮ এ প্রদত্ত ১৪/০৫/২০০৯ খ্রি. তারিখের রায়ের আলোকে শুধুমাত্র নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি সংক্রান্ত অভিযোগ গ্রহণ, প্রাপ্ত অভিযোগ বিষয়ে অনুসন্ধান ও প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রদানের নিমিত্ত প্রত্যেক জজশিপ ও ম্যাজিস্ট্রেসিতে এ সংক্রান্ত কমিটি গঠনপূর্বক পত্র প্রাপ্তির ১৫ (পনেরো) কার্যদিবসের মধ্যে নিম্ন স্বাক্ষরকারীর কাছে প্রতিবেদন প্রেরণ করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’

কর্মস্থল এবং শিক্ষাঙ্গনে নারী ও শিশুদের প্রতি যৌন হয়রানি প্রতিরোধে নির্দেশনা চেয়ে ২০০৮ সালের ৭ আগস্ট হাইকোর্ট বিভাগে জনস্বার্থে একটি রিট আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে ২০০৯ সালের ১৪ মে হাইকোর্ট রায় দেন। রায়ে হাইকোর্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যমসহ সব প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে ‘যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি’ গঠনের আদেশ দেন। কিন্তু সেই রায় বাস্তবায়ন না হওয়া রায় বাস্তবায়নের নির্দেশনা চেয়ে চলতি বছর জানুয়ারির শুরুতেই নতুন করে রিট আবেদন করা হয়। এই রিট আবেদনে কর্মস্থল এবং শিক্ষাঙ্গনে নারী ও শিশুর প্রতি যৌন হয়রানি প্রতিরোধে কমিটি গঠন সংক্রান্ত রায় বাস্তবায়নের অগ্রগতি জানতে চেয়ে গত ৯ জানুয়ারি আদেশ দেন বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ। বিবাদীদের তিন মাসের মধ্যে তা লিখিতভাবে আদালতকে জানাতে বলা হয়। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পক্ষে করা এক আবেদনে এ আদেশ দেন আদালত। রিট আবেদনে জনপ্রশাসন সচিবসহ ৪০ জনকে বিবাদী করা হয়। এ আবেদনে আদালত অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশনার পাশাপাশি রুল জারি করেন।

এছাড়া সরকারি ও বেসরকারি সব কর্মস্থলে যৌন হয়রানি রোধে পদক্ষেপ চেয়ে মহিলা আইনজীবী সমিতি রিট আবেদন করে। এই রিট আবেদনে ২০০৯ সালের ১৪ মে হাইকোর্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কমিটি গঠনসহ নীতিমালা করে তা অনুসরণ করার নির্দেশ দেন। জাতীয় সংসদে এ সংক্রান্ত আইন পাস না হওয়া পর্যন্ত এই রায় অনুসরণ করতে বলা হয় সংশ্লিষ্টদের। কিন্তু এই রায় বাস্তবায়ন না হওয়ায় মহিলা আইনজীবী সমিতি ২০১০ সালের মার্চে আদালত অবমাননার আবেদন করেন। এ আবেদনে ওই বছরের ২৫ মার্চ হাইকোর্ট এক আদেশে আগের রায় বাস্তবায়নের অগ্রগতি জানতে চেয়েছিলেন। এছাড়া ২০১৯ সালের ১৩ মে প্রয়াত বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ পৃথক এক আদেশে কর্মস্থলে যৌন হয়রানি রোধে কমিটি গঠনের অগ্রগতি জানতে চান।

হাইকোর্টের রায়ের নির্দেশনা খোদ সুপ্রিম কোর্টই ১১ বছরেও বাস্তবায়ন না করায় ২০১৯ সালের ১২ অক্টোবর সাংবাদিকদের এক অনুষ্ঠানে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘একটি জরিপে উঠে এসেছে, প্রতি ১০০ জন কর্মজীবী মহিলার মধ্যে ৭৫ জনই কোনো না কোনোভাবে যৌন হয়রানির শিকার। এই যৌন হয়রানি রোধে হাইকোর্ট কমিটি করার জন্য রায় দিলেন। কিন্তু খোদ সুপ্রিম কোর্টেই এই কমিটি হয়নি আজো। তিনি বলেন, কাউকে কিছু বলার আগেই নিজের ঘর থেকেই কার্যক্রম শুরু করতে হবে। সুপ্রিম কোর্টে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি করতে হবে।