logo
আপডেট : ২৮ মার্চ, ২০২২ ০৯:৪২
ভর্তুকির বিষয়ে জানেন না কৃষক, ‘পকেট ভারি’ সেচ মালিকদের
দাম বাড়ে প্রতিবছর
আছাদুল ইসলাম আসাদ, জয়পুরহাট প্রতিনিধি

দাম বাড়ে প্রতিবছর

গভীর নলকূপের মাধ্যমে বোরোক্ষেতে সেচ দেওয়া হচ্ছে

‘বছর বছর বোরো আবাদে সেচের দাম বাড়ে। সেচ মালিকরা যে দাম নির্ধারণ করে, তা-ই দেওয়া লাগে। বিষয়টি এমন, পোষালে জমি আবাদ করো, আর তা না হলে জমি ফেলে রাখো। উপায় নাই। বাড়তি খরচে সারাবছরের খোরাকির জন্য হলেও ধান আবাদ করা লাগে।’

ভোরের আকাশের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে আক্ষেপ নিয়ে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন জয়পুরহাট জেলার ক্ষেতলাল উপজেলার মহব্বতপুর গ্রামের কৃষক আফজাল হোসেন।

তিনি এবার অন্যের তিন বিঘা জমি বর্গা নিয়ে বোরো ধান লাগিয়েছেন। বৈদ্যুতিক অগভীর নলকূপে সেচ বাবদ তাকে প্রতি বিঘায় এক হাজার ৬০০ টাকা দিতে হবে। যা গত বছর ছিল এক হাজার ৪০০ টাকা। আর বৈদ্যুতিক গভীর নলকূপে সেচ বাবদ প্রতি বিঘায় গুনতে হয় এক হাজার ৫০০ টাকা। গত সেচ মৌসুমে ছিল এক হাজার ২০০ টাকা।

জয়পুরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি এবং জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বোরো ধান উৎপাদনে কৃষকদের সেচের খরচ কমাতে গভীর ও অগভীর নলকূপ মালিকদের বিদ্যুতে ভর্তুকি দিয়ে আসছে সরকার। তবে সরকারের দেওয়া এ ভর্তুকির সুবিধা পান না জয়পুরহাটের কৃষকরা। এমনকি সেচ সুবিধায় এই ভর্তুকির কথাও জানেন না তারা। অথচ প্রতিবছর কৃষকদের সেচ বাবদ খরচ বাড়ে।

জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, ২০০৬-০৭ অর্থবছর থেকে বোরো চাষে কৃষকদের উৎপাদন ব্যয় সাশ্রয়ে সেচের জন্য বিদ্যুৎ বিলে ২০ ভাগ ভর্তুকি দিয়ে আসছে সরকার। ওই অর্থবছরে নলকূপ মালিকদের বিদ্যুৎ বিভাগের মাধ্যমে সেচ বাবদ দুই কোটি টাকারও বেশি ভর্তুকি দেয় সরকার।

জানা গেছে, জয়পুরহাটে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৭০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়। যেখানে ৬৬ হাজার হেক্টর জমিতে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মাধ্যমে সেচ সুবিধা দিচ্ছে পাঁচ হাজার ৪৩৪টি বৈদ্যুতিক সেচযন্ত্র। রয়েছে এক হাজার ৯৪২টি গভীর এবং তিন হাজার ৪৩৪টি অগভীর নলকূপ।

এ ছাড়া বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লি. (নেসকো) এবং ডিজেলচালিত সেচযন্ত্রের মাধ্যমে জেলার প্রায় চার হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা পান কৃষক।

যদিও ফসল উৎপাদনে সরকার সেচ মালিকদের যে ভর্তুকি সুবিধা দিয়ে আসছেন তার সুফল কৃষকদের (বোরো মৌসুম) ভাগ্যে জোটে না। মূলত সেই সরকারি ভর্তুকির টাকা সরাসরি যায় সেচ মালিকদের পকেটে। ফলে বছর বছর উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় বোরো চাষে কাঙ্ক্ষিত লাভের মুখ দেখেন না কৃষক। আগে যেখানে বিঘাপ্রতি ৮০০ থেকে হাজার টাকা নেওয়া হতো, বর্তমানে সেখানে এক হাজার ২০০ থেকে শুরু করে এলাকাভেদে এক হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে। কারণ বোরো চাষে সেচে ভর্তুকির কথা জানেন না কৃষকরা।

ক্ষেতলাল উপজেলার নিশ্চিন্তা এলাকার গভীর নলকূপ মালিক বাবলু মিয়া বলেন, ‘বাজারে সবকিছুর দাম ঊর্ধ্বমুখী। সে তুলনায় বিঘাপ্রতি সেচের দাম সামান্য বেড়েছে।’

জেলা গভীর নলকূপ মালিক সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট নৃপেন্দনাথ মণ্ডল বলেন, ‘গোটা মৌসুমে সেচ দিয়ে পকেট থেকে বিদ্যুৎ বিলের টাকা পরিশোধ করতে হয়। ভর্তুকির টাকা কৃষকরা প্রত্যক্ষভাবে না পেলেও পরোক্ষভাবে সুবিধা পায়। মৌসুম শেষে হালখাতা করে কৃষকদের কাছ থেকে সেচের টাকা তুলতে হয়। কিছু টাকা আবার আদায়ও হয় না।’

জয়পুরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার এনামুল হক প্রামাণিক বলেন, ‘সরকারি নির্দেশে কৃষকদের স্বার্থে সেচ মালিকদের প্রতি ইউনিটে ৮৩ পয়সা করে বিদ্যুৎ বিলে ভর্তুকি দেওয়া হয়। গত সেচ মৌসুমে ৩ কোটি ২৫ লাখ ১০ হাজার টাকা বিদ্যুতে ভর্তুকি ছিল। বিগত ১৫ বছরে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মাধ্যমে ৩৫ কোটি টাকা ভর্তুকি পেয়েছে সেচ মালিকরা।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক শফিকুল ইসলাম জানান, জেলায় এবার ৬৯ হাজার ৪৯০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ করেছে কৃষকরা। বোরোর উৎপাদন সাশ্রয়ে ২০০৬ সাল থেকে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার ভর্তুকি সুবিধা দিচ্ছে সরকার।