logo
আপডেট : ২৮ মার্চ, ২০২২ ১২:১৬
৩৮ হাজার শিক্ষার্থীর ডাক্তার মাত্র ১৮ জন
তারেক মাহমুদ, রাজশাহী

৩৮ হাজার শিক্ষার্থীর ডাক্তার মাত্র ১৮ জন

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্র

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৩৮ হাজার ৩০০ জন। তাদের চিকিৎসাসেবা দিতে মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসকের পদ রয়েছে মাত্র ৩৬টি। কিন্তু সেই পদের বিপরীতে মেডিকেল সেন্টারে বর্তমানে চিকিৎসক আছেন মাত্র ১৮ জন।

এভাবে মোট চিকিৎসকের অর্ধেক নিয়েই চলছে মেডিকেল সেন্টারের কার্যক্রম। পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকায় শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা দিতে বিড়ম্বনায় পড়ছেন কর্মরত চিকিৎসকরা। ফলে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাকি ১৮টি পদের বিপরীতে ২০২০ সালের ২৪ অক্টোবর চিকিৎসক পদে ১৩ জনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। তবে তাদের মৌখিক পরীক্ষা না হওয়ায় নিয়োগ কার্যক্রম আটকে আছে। অর্থাৎ শূন্য ১৮টি পদের মধ্যে ১৩টি পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

এ ছাড়াও মেডিকেল সেন্টারের তিনটি কিউএস মেশিনের মধ্যে দুটি অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে দীর্ঘদিন ধরে। এই মেশিনের সাহায্যে শিক্ষার্থীরা তাদের স্মার্টকার্ড ব্যবহার করে চিকিৎসকের অ্যাপয়েন্টমেন্ট, রোগীর ব্যবস্থাপত্র, ইলেকট্রনিক রেকর্ডে সংযোজন, রোগ অনুযায়ী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সেবা নেওয়াসহ নানা কাজে ব্যবহার করে থাকেন।

মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসাসেবা নিয়ে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। তাদের অভিযোগ, যে কোনো অসুখের চিকিৎসায় দেওয়া হয় প্যারাসিটামল ও ইনজেকশন। এ ছাড়াও বিশেষ রোগে চিকিৎসা দিতে নেই বিশেষজ্ঞ ডাক্তার।

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রাজু বলেন, মেডিকেল সেন্টারে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের অভাব বহুদিনের। চুলকানিসহ আরো নানা সমস্যা নিয়ে গত সপ্তাহে মেডিকেল সেন্টারে যাই। কিন্তু সেখানে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ কোনো ডাক্তার নেই। বাধ্য হয়ে মেডিসিন বিভাগের ডাক্তার দেখাতে হয়েছে।

মেডিকেল সেন্টারের প্রধান ডা. তবিবুর রহমান বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা চিকিৎসার জন্য এখানে আসেন, কিন্তু আমরা তাদের যথাযথ সেবা দিতে পারছি না। এতে আমাদের নিজেদেরও খারাপ লাগে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের পরীক্ষার যন্ত্র রয়েছে, কিন্তু যিনি পরীক্ষা করবেন তিনিই নেই। আমি ভিসি এবং প্রো-ভিসি স্যারের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা দ্রুত চিকিৎসকের শূন্যপদগুলোর নিয়োগ দেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। আশা করি, তখন শিক্ষার্থীদের যথাযথ চিকিৎসাসেবা দিতে পারব।’

প্রয়োজনীয় ওষুধ না পাওয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদেরও ধৈর্যশীল ও সহনশীল হতে হবে। আমাদের এই মেডিকেল সেন্টার থেকে মূলত প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। তাই রোগীর অবস্থা দেখে শুরুতে আমরা অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ দিতে পারি না। প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য ওষুধ দিয়ে থাকি। এতে করে শিক্ষার্থীরা ওষুধ না পাওয়ার অভিযোগ করে থাকে।’

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে প্রো-ভিসি অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরনের নিয়োগের ওপর সরকারের নিষেধাজ্ঞা আছে। এটা তদন্তের বিষয়ের সঙ্গে জড়িত। তাই যতক্ষণ সরকার নিষেধাজ্ঞা তুলে না নেবে আমরা কোনো নিয়োগই দিতে পারব না। নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলে আমরা নিয়োগ দিতে পারব।’

গত বছরের ১০ ডিসেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরনের নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে চিঠি পাঠায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেখানে বলা হয়, প্রশাসনিক কারণে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সব নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত রাখতে অনুরোধ করা হলো।