ওয়ানডে সিরিজ জয়ের সুখস্মৃতি এখনো সতেজ। মাঝে বেশ কয়েকদিনের বিরতি। আগামী বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হবে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যকার টেস্ট সিরিজ। ডারবানের তাজা ঘাসে ভরা উইকেটে শুরু হবে প্রথম টেস্ট। ওয়ানডের মতো টেস্টেও ভালো করতে দৃঢ় প্রত্যয়ী বাংলাদেশ শিবির।
বৃষ্টির কারণে অনুশীলনে হয়েছে ব্যাঘাত। তবে জিমে ঘাম ঝরানো হয়েছে বেশ। বাংলাদেশের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে শুধু টেস্ট দলে থাকা ক্রিকেটাররা কেপটাউনের ক্যাম্পে প্রস্তুতি নিয়েছে এভাবেই। ব্যাটিং কোচ জেমি সিডন্সের বিশ্বাস, দারুণ এ প্রস্তুতির সুফল মিলবে টেস্ট সিরিজে। সূচিতে ওয়ানডে সিরিজ আগে হলেও এবার শুধু টেস্ট দলে থাকা ক্রিকেটাররাও ওয়ানডে দলের সঙ্গেই যায় দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে। টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হকসহ ওই ক্রিকেটাররা নিবিড়ভাবে অনুশীলন করেন সাবেক ক্রিকেটার ও এখন খ্যাতিমান কোচ গ্যারি কার্স্টেনের ক্রিকেট একাডেমিতে।
ব্যাটিং কোচ সিডন্সের তত্ত্বাবধানেই চলে এ ক্যাম্প। তবে শুরুর দিকে কোচিং করান স্বয়ং কার্স্টেনও। এছাড়া ছিলেন বাংলাদেশের সাবেক ফিল্ডিং কোচ রায়ান কুক, যিনি কার্স্টেন একাডেমিরও কোচ। ওই ক্যাম্প এখন শেষ। তবে সিডন্সের মনে রয়ে গেছে রেশ। দল এখন প্রথম টেস্টের শহর ডারবানে। সেখানেই কথা বলেন বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং কোচ জেমি সিডন্স। কেপটাউনের ক্যাম্প সম্পর্কে সিডন্স বলেন, ‘কেপ টাউন দুর্দান্ত ছিল (ক্যাম্প)। আবহাওয়া ছিল নিখুঁত। ৯ জন ছিল ক্যাম্পে, পরে দুজন দেশে ফিরে যায় (স্কোয়াডের বাইরে থাকা মোহাম্মদ মিঠুন ও রেজাউর রহমান রাজা)। দক্ষিণ আফ্রিকার আবহাওয়া ও পিচ কন্ডিশন সম্পর্কে যেভাবে ধারণা হয়েছে, ভালো কয়েকজন নেট বোলার ছিল, আমাদের বোলাররা তো ছিলই, ব্যাটসম্যানরা দারুণ কাজ করেছে।’
‘কোচিংও দারুণ হয়েছে, গ্যারি কার্স্টেন ছিল, রায়ান কুক ও আমি কাজ করেছি মুমিনুল ও সাদমানসহ সবার সঙ্গে আলাদা করে, সব মিলিয়ে কার্যকর ১০টি দিন ছিল। কঠোর অনুশীলন, জিম সেশন, অনুশীলনের দারুণ সুযোগ-সুবিধা। আশা করি, মুমিনুল ও সাদমানরা টেস্টের জন্য দারুণ প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে।’ যদিও খুব বেশি ক্রিকেটার ছিলেন না ক্যাম্পে, ম্যাচ পরিস্থিতির মতো করে অনুশীলনের সুযোগও হয়নি সেভাবে, প্রস্তুতিতে তবু যথেষ্ট ঝাঁজ ছিল বলেই দাবি সিডন্সের। বিশেষ করে ব্যাটিংয়ে কার্যকর প্রস্তুতি হয়েছে বলে মনে করেন তিনি, ‘ব্যাট-বলের মুখোমুখি লড়াইটা তীব্রই ছিল। চকচকে নতুন বল, সবুজ ঘাসের উইকেট। ঠিক ম্যাচ পরিস্থিতি নয়, তবে ব্যাট-বলের লড়াইটা ম্যাচের মতোই হয়েছে। নতুন বলে আমাদের দুই পেসার দুই টপঅর্ডার ব্যাটসম্যানকে বল করেছে, এরকম কিছুই দরকার ছিল ওদের।’
‘দক্ষিণ আফ্রিকার বাড়তি বাউন্সে কীভাবে বল ছাড়তে হয় বা ডিফেন্স করতে হয়, ঢাকা-চট্টগ্রামের চেয়ে অনেক বেশি বাউন্স এখানে, স্টাম্পের ওপর দিয়ে ছাড়া বা বাইরের বল ছাড়া, ভালোভাবে ঠেকানো, বাজে বলকে সীমানায় পাঠানো, এসবই অনুশীলন হয়েছে।’ দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের আগে পরিসংখ্যান ছিল বড্ড একপেশে। কারণ প্রোটিয়াদের বিরুদ্ধে তাদের মাটিতে ছিল না জয়ের কোনো রেকর্ড। আর সেটা ক্রিকেটের যেকোনো ফরম্যাটে। কিন্তু ওয়ানডে সিরিজেই ২০ বছরের আক্ষেপ ঘুচিয়ে রীতিমতো ইতিহাস গড়ে টাইগাররা।
প্রথম ম্যাচে দাপুটে জয়। দ্বিতীয় ম্যাচে অবশ্য হার। সেঞ্চুরিয়ানে তৃতীয় ম্যাচে তামিমরা গড়ে ইতিহাস। প্রোটিয়াদের উড়িয়ে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে সিরিজ জেতে বাংলাদেশ। এবার সামনে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ। রঙিন পোশাকের মতো সাদা পোশাকেও ভালো করতে মরিয়া বাংলাদেশ। যদিও এ ভার্সনের পরিসংখ্যান বাংলাদেশের জন্য খুব একটা ভালো নয়। ১২টি ম্যাচ খেলেছে দুই দল। এর মধ্যে ১০টিতেই জিতেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। দুই ম্যাচে ড্র। দুটি ড্রই মিরপুর ও চট্টগ্রামে। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ছয়টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। ছয়টিতেই বাংলাদেশ হেরেছে বাজেভাবে।
ছয় ম্যাচে পাঁচটিতেই বাংলাদেশ হেরেছে ইনিংস ব্যবধানে। বাকি একটি ম্যাচ ইনিংস ব্যবধানে হারেনি। সেই হারের ব্যবধান ৩৩৩ রানে। টেস্টে দুই দলের সর্বশেষ সাক্ষাৎ ২০১৭ সালে ৬ অক্টোবর। ব্লুমফন্টেইনে সেই ম্যাচে বাংলাদেশ হেরেছিল ইনিংস ও ২৫৪ রানে। সব মিলিয়ে টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটি বাংলাদেশের জন্য এখনো দুর্ভেদ্য। এ বাধার প্রাচীর ভাঙতে পারবে মুমিনুল শিবির? তার আগে মঙ্গানুই টেস্ট অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করছে। চলতি বছরের শুরুতে নিউজিল্যান্ডে প্রথমবারের মতো টেস্ট জেতে বাংলাদেশ। বিদেশের মাটি এখন আর দুর্বোধ্য ধাঁধার নাম নয়, বরং নতুন করে ইতিহাস গড়ার। মুমিনুলরা এগোচ্ছেন সেভাবেই।