সৌদি আরবের জ্বালানি মজুতের স্থাপনায় ২৫ মার্চ বড় ধরনের হামলা চালিয়েছে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা। সৌদি আরব রাজ্যের বিভিন্ন শহরে বেসামরিক সুবিধা এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা লক্ষ্য করে হুথি মিলিশিয়াদের সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ।
সোমবার (২৮) মার্চ ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই ঘটনার তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেছে, সন্ত্রাসবাদের এই বেআইনি এবং কাপুরুষতাপূর্ণ কাজগুলি স্থিতিশীলতাকে বিপন্ন করছে।
বাংলাদেশ মনে করে যে রাজ্যের বেসামরিক এলাকা এবং স্থাপনাগুলিকে লক্ষ্য করে বারবার নিয়মিত ড্রোন এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা আন্তর্জাতিক আইন ও নিয়মের বিরুদ্ধে একটি স্পষ্ট লঙ্ঘন।
বাংলাদেশ হুথিদেরকে জাতিসংঘ এবং জিসিসির উদ্যোগে সহযোগিতা করার এবং এই অঞ্চলে সংঘাত বৃদ্ধি করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে।
বাংলাদেশ সৌদি আরব এবং তার ভ্রাতৃপ্রতীম জনগণের নিরাপত্তার জন্য যে কোনো হুমকির বিরুদ্ধে তার দৃঢ় সংহতি পুনর্ব্যক্ত করে। বাংলাদেশও এই অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য সকল প্রচেষ্টার প্রতি অবিচল প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
দেশটির রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন তেল কোম্পানি সৌদি আরামকোর জেদ্দার পেট্রোলিয়াম বিতরণ স্টেশনে এ হামলা চালানো হয়। এতে দুটি মজুতে আগুন ধরে যায়। এমন সময় এই হামলার ঘটনা ঘটেছে, যখন জেদ্দা ফর্মুলা ওয়ান সৌদি অ্যারাবিয়ান গ্রান্ড প্রিক্স আয়োজন করছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স এর প্রতিবেদনে বলা হয়, পবিত্র মাস রমজান উপলক্ষে সাময়িক অস্ত্রবিরতিকে সামনে রেখে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোয় সৌদির তেল স্থাপনায় হামলা জোরদার করেছে ইরান-সমর্থিত হুতিরা।
হুতির সামরিক মুখপাত্র ইয়াহইয়া সারিয়া বলেন, জেদ্দায় আরামকোর স্থাপনা লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র এবং রাস তানুরা ও রাবিগ শোধনাগার লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালানো হয়। এ ছাড়া রাজধানী রিয়াদের ‘গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাও’ লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল।
সৌদি আরবের সংবাদমাধ্যমগুলো এর আগে বলেছিল, হুতিদের বেশ কিছু ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকিয়ে দিয়েছে দেশটির নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট। জিজান লক্ষ্য করে ছোড়া একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রও সৌদি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে। এতে একটি বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রে সাময়িক আগুন ধরে যায়।
সৌদি জোট বলে আসছে, হুতিদের হামলা সত্ত্বেও তারা নিজেরা হামলা চালানোর ক্ষেত্রে সংযম দেখাচ্ছে। তবে ঐ ঘটনার পর দিন ২৬ মার্চ দিনের শুরুতে ইয়েমেনে সামরিক অভিযান চালিয়েছে সৌদি জোট। বৈশ্বিক জ্বালানি সুরক্ষা ও সরবরাহ চেইন নিশ্চিত করতে এ অভিযান চালানো হয়েছে বলে তাদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।
সৌদির জ্বালানি মন্ত্রণালয় বলেছে, এই ‘নাশকতামূলক হামলার’ তীব্র নিন্দা জানায় তারা। এ ধরনের হামলার কারণে বৈশ্বিক জ্বালানি সরবরাহ বিঘ্নিত হলে তার দায় সৌদি আরব নেবে না বলেও নিজেদের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছে মন্ত্রণালয়। এক কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা এসপিএ এ কথা জানিয়েছে।
হুতিদের অব্যাহতভাবে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও উন্নত ড্রোন সরবরাহের জন্য ইরানকে দায়ী করেছে মন্ত্রণালয়। তারা জোর দিয়ে বলেছে, এ ধরনের হামলা সৌদির তেল উৎপাদন সক্ষমতা এবং বিশ্ববাজারে তেল সরবরাহের সামর্থ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। তবে তেহরান এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
এদিকে সৌদি জোট বলেছে, শনিবারের হামলায় হুতিনিয়ন্ত্রিত রাজধানী সানা এবং লোহিত সাগরের বন্দরনগরী হোদেইদাহে ‘হুমকির উৎসস্থলকে’ লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
২০১৪ সালের শেষ দিকে হুতিরা দেশটির গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হাদি সরকারকে অস্ত্রের মুখে সানার ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে। হাদি সরকারের সমর্থনে ২০১৫ সালের মার্চে ইয়েমেনে হুতিদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান শুরু করে সৌদি জোট। এর পর থেকে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটছে।