কথায় বলে মাছে-ভাতে বাঙালি। বাঙালিরা মাছ-ভাত ছাড়া একবেলাও খাবার খেতে পারে না। তবে জন্মের পরে কোনোদিন ভাত খায়নি এমন এক মানুষের দেখা পাওয়া গেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে।
তার দাবি- জন্মের পর কোনোদিন ভাতের থালা হাতে নেননি তিনি; এমনকি কেউ বসে ভাত খেলে তার পাশেও যান না। তার নাম আনারুল ইসলাম (৫৭)। বাড়ি উপজেলার শ্যামপর ইউনিয়নের শরৎনগর হাজিপাড়া গ্রামে। তিনি স্থানীয় শ্যামপুর ইউসি উচ্চ বিদ্যলয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক।
সরেজমিনে শ্যামপুর ইউনিয়নের শরৎনগর গ্রামের আনারুলের বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, ১৯৬৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন আনারুল ইসলাম। সততার সঙ্গে পড়ালেখা শেষ করে প্রথমে একটি স্থানীয় মাদ্রাসার শিক্ষক হিসেবে চাকরি শুরু করেন। এখন ছয় বছর ধরে শ্যামপুর ইউসি উচ্চ বিদ্যলয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
জীবনের শেষ অধ্যয়ে এসেও কোনোদিন ভাত খাননি তিনি। কোনো অনুষ্ঠানে গেলেও তিনি আগে জানিয়ে দেন ভাত খাবেন না। তার জন্য রুটি তৈরি করে রাখতে হবে।
আনারুল ইসলাম বলেন, ১৯৬৫ সালে একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে আমার জন্ম হয়। লেখাপড়া শেষ করে কর্মজীবন শুরু করেছি। কিন্তু জন্মের পরে কোনোদিন ভাত খায়নি। ছোটবেলায় স্বজনরা ভাত সামনে দিলেও খেতে মন চায়নি। তার পর থেকে আর ভাত খাওয়া হয়নি।
‘এখন আমার বয়স প্রায় ৫৭ বছর। আমার তিন বেলার খাবারের পছন্দের তালিকায় রয়েছে রুটি, মাংস, আলু ভাজি, মিষ্টি, পরোটা। এখনো আমার সামনে কেউ ভাত খেলে আমি তার থেকে দূর দিয়ে চলে যাই।’
শ্যামপুর ইউসি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র মামুন বলেন, ‘আমি এই স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে পড়ালেখা শুরু করি। তখন থেকেই জানি আনারুল স্যার ভাত খান না। এখন দশম শ্রেণিতে পড়ছি, কোনোদিন স্যারকে ভাত থেকে দেখিনি। সারাবছর রুটি খেয়ে থাকেন তিনি। তাই স্যারকে সবাই রুটি স্যার বলে চেনে।’
আনারুল ইসলামের বড় ভাই হাবিবুর রহমান বলেন, আনারুলকে আদর-স্নেহ আর ভালোবাসা মাখানো শাসনের মধ্য দিয়ে বড় করেছি। লেখাপড়া করে এখন শিক্ষকতা করছে।
‘ছোট থেকেই ভাত খায় না আনারুল। ছোটবেলায় তার সামনে ভাতের থালা দিলে রাগ করত। একদিন মুখে ভাত দেওয়ায় অচেতন হয়ে পড়ে। কিছুক্ষণ পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। সেই থেকে আমরা তাকে অন্য খাবার খাইয়ে বড় করেছি’, বলেন হাবিবুর রহমান।
শ্যামপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম বলেন, ‘আমি অনেক আগে থেকেই আনারুলকে চিনি। সে জন্মের পরে কোনোদিন ভাত খায়নি। অন্য খাবার খেয়ে সে জীবনযাপন করে। তবে সে রুটি বেশি পছন্দ করে। তাই তিন বেলা রুটি খায়।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. এসএম মাহমুদুর রশিদ বলেন, যদিও আমাদের দেশের মানুষ বেশি ভাত খায়; তবে একটা মানুষ ভাত না খেয়েও অন্য খাবার বেঁচে থাকতে পারে। এটা কোনো সমস্যা নয়। হয়তো ছোট থেকে আনারুলের পরিবার তাকে সেভাবে ভাত খাওয়ার জন্য চাপ দেয়নি।’