logo
আপডেট : ২৯ মার্চ, ২০২২ ১১:৫০
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ
শান্তি আলোচনার সময় রুশ ধনকুবের আব্রামোভিচকে বিষপ্রয়োগের সন্দেহ
অনলাইন ডেস্ক

শান্তি আলোচনার সময় রুশ ধনকুবের আব্রামোভিচকে বিষপ্রয়োগের সন্দেহ

রুশ ধনকুবের রোমান আব্রামোভিচ। ফাইল ছবি

ইউক্রেন-বেলারুশ সীমান্তে এ মাসের শুরুতে এক শান্তি আলোচনায় অংশ নেওয়ার সময় রুশ ধনকুবের রোমান আব্রামোভিচকে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছিল বলে তার ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো সন্দেহ করছে। ফুটবল ক্লাব চেলসি এফসির মালিক কয়েকদিন চোখে ব্যথা ও অস্বস্তি এবং শরীরের চামড়া উঠে যাওয়ার মতো উপসর্গ নিয়ে ভুগেছেন। তিনি এখন সেরে উঠেছেন। ইউক্রেনের দুইজন শান্তি আলোচকও আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, রাশিয়ার কট্টরপন্থী যারা শান্তি আলোচনাকে বানচাল করতে চান তারা সন্দেহজনক এই বিষপ্রয়োগের ঘটনা ঘটিয়েছেন। অভিযোগ ওঠার পর একজন মার্কিন কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছিলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ধারণা করা হচ্ছে, আক্রান্ত ব্যক্তিদের শারীরিক উপসর্গগুলো 'পরিবেশগত' কারণে হয়েছে, বিষপ্রয়োগের কারণে নয়। পরে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট অফিসের একজন কর্মকর্তা জোভকাভা বিবিসিকে বলেছিলেন, তিনি যদিও আব্রামোভিচের সাথে কথা বলেননি, কিন্তু ইউক্রেনের আলোচক দলের সদস্যরা সবাই সুস্থ আছেন। অন্য আরেকজন এই অভিযোগকে 'মিথ্যা' বলে দাবি করেছিলেনে।

কিন্তু বিবিসির নিরাপত্তা সংবাদদাতা ফ্র্যাঙ্ক গার্ডনার বলেছেন, এই যুদ্ধে কোনো পক্ষ বিশেষ করে রাশিয়া রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করে থাকতে পারে- এমন সন্দেহকে যুক্তরাষ্ট্র ধামাচাপা দিতে চাইবে। তার কারণ, সেটি হলে যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার একটি বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়, যা তারা একেবারেই করতে চায় না।

'চোখ ফুটো হয়ে যাবার মতো ব্যথা'

ওয়ালস্ট্রিট জার্নালের উদ্ধৃত সূত্রে জানা যাচ্ছে, ৩ মার্চ ওই ঘটনার পর আব্রামোভিচ এবং ইউক্রেনের শান্তি আলোচক দলের সদস্য দেশটির পার্লামেন্টারিয়ান রুস্তেম উমেরভের অবস্থার উন্নতি হয়েছে। আব্রামোভিচের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র বিবিসিকে বলেছেন, তিনি সুস্থ হয়ে উঠেছেন এবং যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে শান্তি আলোচনায় অংশ নেওয়া চালিয়ে যাচ্ছেন।

এই ঘটনার ফলে ইউক্রেন এবং রাশিয়ার মধ্য আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আব্রামোভিচের ভূমিকা সামনে এসেছে। আলোচনায় তার অবস্থান ঠিক কী সেটি পরিষ্কার নয়। কিন্তু রাশিয়ার এই অলিগার্কের একজন মুখপাত্র এর আগে বলেছিলেন, আলোচনায় তার প্রভাব 'সীমিত'।

রোববার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, আব্রামোভিচ তার দেশে রাশিয়ার হামলা সীমিত করতে তাকে সাহায্যের প্রস্তাব দিয়েছিলেন।

এ মাসের শুরুতে শান্তি আলোচনা আয়োজনের জন্য মস্কো এবং কিয়েভের মধ্যে কয়েকদফা আসা-যাওয়া করেছেন এই রুশ বিলিয়নিয়ার। সফরে তিনি জেলেনস্কির সাথে দেখা করেছিলেন। কিন্তু তিনি আক্রান্ত হননি এবং তার মুখপাত্র জানিয়েছেন ওই ঘটনা সম্পর্কে তিনি জানেন না।

অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা গ্রুপ বেলিংক্যাট বলছে, আব্রামোভিচ এবং কয়েকজন আলোচক যেসব উপসর্গে ভুগেছেন, তা 'রাসায়নিক অস্ত্রের বিষক্রিয়ার মতো'। বেলিংক্যাট বলছে, এসব উপসর্গের মধ্যে রয়েছে, 'চোখ ও ত্বকে জ্বালাপোড়া এবং চোখে তীক্ষ্ম ব্যথা'।

ওই ঘটনার ১০ দিন পর আব্রামোভিচকে প্রথম জনসমক্ষে দেখা যায় ১৪ মার্চ তেলআবিব এয়ারপোর্টে।

এ মাসের শুরুতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র এবং তেলআবিব আব্রামোভিচের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। যদিও ঘনিষ্ঠতার কথা বরাবর অস্বীকার করে এসেছেন আব্রামোভিচ।

তবে, আব্রামোভিচের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। তার বক্তব্য মস্কোর সাথে শান্তি আলোচনায় আব্রামোভিচ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবেন।

ক্রেমলিন বলেছে, শান্তি আলোচনার প্রাথমিক পর্যায়ে আব্রামোভিচ ভূমিকা রেখেছিলেন। কিন্তু এ প্রক্রিয়া এখন কেবল দুই দেশের আলোচকদের হাতেই রয়েছে।

তুরস্কের ইস্তানবুলে আজ দুই দেশের বৈঠকে বসার কথা রয়েছে। দুই সপ্তাহের বেশি সময় পর প্রথম দুই দেশের প্রতিনিধিরা মুখোমুখি বৈঠকে বসবেন।

রহস্যজনক বিষক্রিয়া

মার্চের ৩ তারিখে রোমান আব্রামোভিচ রাশিয়া এবং ইউক্রেনের শান্তি আলোচনায় যোগ দিতে ইউক্রেন-বেলারুশ সীমান্তে পৌঁছান। বিবিসির নিরাপত্তা সংবাদদাতা ফ্র্যাঙ্ক গার্ডনার বলেছেন, এর পর সেখানে যা ঘটেছে তা রীতিমত 'রহস্যজনক'।

অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা গ্রুপ বেলিংক্যাট বলছে, ৩ মার্চ রাতে আব্রামোভিচসহ তিনজন আলোচকের শরীরে নার্ভ এজেন্ট বিষক্রিয়ার উপসর্গ দেখা দেয়। তাদের সবার শরীরের ত্বকে জ্বালাপোড়া, চোখে জ্বলুনি ও অস্বস্তি এবং চোখের পেছনের অংশে ব্যাপক ও তীক্ষ্ম ব্যথা দেখা যায়, যা সারারাত ছিল। বৈঠকে কেউই পানি এবং চকোলেট ছাড়া অন্য কিছু খাননি।

ঘটনাটি বিশ্লেষণ করে রাসায়নিক অস্ত্র বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাদের বিশ্বাস এটি ইচ্ছাকৃতভাবে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের একটি উদাহরণ। কিন্তু সেটি কোন পক্ষ করেছে সে সম্পর্কে ধারণা দেননি তারা। কোনো পক্ষ দায় স্বীকারও করেনি।

অনেকেই ভাবছেন, রাশিয়ার সামরিক গোয়েন্দা সার্ভিস জিআরইউর কাজ এটি, যাদের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালে নভিচক সেইনসবরি বিষক্রিয়ায় জড়িত থাকার অভিযোগ এনেছিল ব্রিটেন।

রাশিয়ার তরফ থেকে এ নিয়ে এখনো কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি, এবং তারা কোনোভাবে এ ঘটনা ঘটিয়েছে তেমন প্রমাণও নেই। কিন্তু মনে হচ্ছে, কেউ হয়ত শান্তি আলোচকদের কাছে একটি সতর্কবার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। হয়ত বলার চেষ্টা করেছে, এটা প্রাণঘাতী ছিল না, এটা কেবলই হুঁশিয়ারি।

তবে মার্কিন কর্মকর্তার 'পরিবেশগত' প্রভাব বলে যে মন্তব্য তাকে অযথার্থ বলে মন্তব্য করেছেন রাসায়নিক অস্ত্র বিশেষজ্ঞ হামিশ ডি ব্রেটন-গর্ডন।

সূত্র: বিবিসি বাংলা