logo
আপডেট : ২৯ মার্চ, ২০২২ ১২:৪০
যানজটে নাকাল সিলেটের জনজীবন
কামরুল ইসলাম মাহি, সিলেট

যানজটে নাকাল সিলেটের জনজীবন

সিলেট নগরীতে যানজটে আটকা যানবাহন

সিলেট নগরজুড়ে সড়কে কোনোভাবেই যেন শৃঙ্খলা আনা যাচ্ছে না। রাস্তা প্রশস্তকরণ, ট্রাফিক পুলিশের কঠোর অভিযান আর রিকশা-ভ্যান বন্ধ করেও ফেরানো যাচ্ছে না সড়কের শৃঙ্খলা। বরং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সড়কে বাড়ছে যানজট।

এতে যেমন রয়েছে ভোগান্তি; অন্যদিকে নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান কর্মঘণ্টা। অধিকাংশ সময়ই যানজটে স্থবির হচ্ছে জনজীবন।

গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ৯টা। সিলেট মহানগরের আম্বরখানা এলাকায় রিকশায় বসে আছেন স্কুলশিক্ষক সুহেল আহমদ। গন্তব্য বন্দরবাজার। যেখানে স্বাভাবিক সময়ে ১০ থেকে ১২ মিনিটে তার গন্তব্যে পৌঁছানোর কথা, সেখানেই রিকশার প্যাডেল এক শ’ গজ যেতে না যেতেই আটকা পড়েছেন যানজটে।

প্রায় ১৫ মিনিটি পরে যানজট স্বাভাবিক হওয়ার পর ফের এক কিলো যেতেই চৌহাট্টা পয়েন্টে ট্রাফিক জ্যাম। এই পয়েন্টে ১০ মিনিটি যানজট ঠেলে জিন্দাবাজারেও একই চিত্র। সেখানেও ৭-৮ মিনিট আটকা ছিলেন তিনি। অবশেষে ৪০ মিনিটের মাথায় নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছান এই স্কুলশিক্ষক।

একই দিন দুপুর ১২টায় নগরের নবাব রোড (ওসমানী মেডিক্যাল হাসপাতাল এলাকা) থেকে নয়াসড়ক মাউন্ড এডোরা হাসপাতালে যেতে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় উঠেছেন জাহেদ আহমদ নামে এক তরুণ। কিন্তু রিকাবীবাজার এলাকায় ১৫ মিনিটি আটকা রয়েছেন যানজটে। অথচ ১০ মিনিটেই তার গন্তব্যে পৌঁছানোর কথা।

তিনি জানালেন, খুব তাড়া, হাসপাতালে এক আত্মীয়কে রক্ত দিতে বের হয়েছি। কিন্তু যানজটে সঠিক সময়ে পৌঁছাতে পারব কিনা বুঝতে পারছি না।

রোববার সকাল ৯টা থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত নগরের দক্ষিণ সুরমা, জেল রোড, লামাবাজার, দরগাগেট, মিরাবাজার, নাইওরপুল, শিবগঞ্জ, সোবহানীঘাট, কুমারপাড়া, তালতলা এলাকাও যানজট ছিল চোখে পড়ার মতো। কিছু কিছু জায়গায় প্রধান সড়ক ছাড়িয়ে যানজটের প্রভাব পড়ে পাশের এলাকার সংযোগ সড়কে।

দক্ষিণ সুরমা ডিগ্রি কলেজ এলাকার ব্যবসায়ী মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘চন্ডিপুর চত্বর থেকে রিকশায় করে এক ঘণ্টায় বন্দরবাজার এলাকায় পৌঁছাতে হয়। অথচ এ দূরত্ব ২৫ মিনিটের মধ্যে পৌঁছানোর কথা। দুর্ভোগের চূড়ান্ত সীমা পার করছি। এখন তো রাত ৯টার পরেও জ্যাম থাকে। এত জ্যাম দুই-চার বছর আগেও আমাদের সিলেট শহরে ছিল না।’

নগর বিশেজ্ঞরা বলছেন, ৭৯ বর্গমাইল আয়তনের (বর্ধিত অংশসহ) এই শহরে প্রায় ১২ লাখ মানুষের বসবাস। কিন্তু সেই তুলনায় বাড়ছে না সড়ক।

অন্যদিকে বহুতল বাণিজ্যিক ভবন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিজস্ব পার্কিং ব্যবস্থা না থাকা, গাড়ির অবৈধ স্ট্যান্ড এবং ফুটপাতসহ রাস্তার অধিকাংশ হকারদের দখলে চলে যাওয়া। বিভিন্ন স্থানে ওয়ানওয়ে রোড হওয়া সত্ত্বেও বিপণিবিতান, শপিংমল, ক্লিনিক-হাসপাতালগুলোর পর্যাপ্ত পার্কিং না থাকায় যানবাহনের দীর্ঘলাইন লেগেই থাকে। নগরের অনেক পয়েন্টে পর্যাপ্ত ট্রাফিক সদস্য না থাকার কারণেও যানজট হচ্ছে।

যানজট নিরসনে পরিকল্পিত নগরব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে জানিয়ে সংগঠক ও সমাজকর্মী আবিদ কাওসার ভোরের আকাশকে বলেন, ‘যানজট সিলেটবাসীর জন্য মারাত্মক সমস্যা। একমুখী সড়কে উভয় দিক থেকে যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায়। এক্ষেত্রে আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ দরকার। কিছু রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় থেকে নেতাকর্মীরা বিভিন্ন সড়কে ও পয়েন্টে অবৈধ স্ট্যান্ড, পার্কিংসহ হকার বসিয়েছেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘যানজট সমস্যা নিরসনে দক্ষ ট্রাফিক পুলিশেরও অভাব রয়েছে। আইনের ধারাগুলো বাস্তবায়ন হলে শুধু যানজট নয়, নগরীর অনেক সমস্যাই সমাধান হবে।’

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার এবিএম আশরাফ উল্লাহ তাহের ভোরের আকাশকে বলেন, ‘বিভিন্ন এলাকায় উন্নয়ন কাজ চলছে, তাই ইদানীং একটু যানজট থাকে। তবে আমাদের ট্রাফিক বিভাগ নিয়মিত মাঠে কাজ করছে।’

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান বলেন, ‘নগরের অনেক জায়গায় আমাদের উন্নয়ন কাজ চলমান। এ জন্য অনেক জায়গায় আগের তুলনায় বেশি যানজট। আমাদের চলমান উন্নয়ন কাজ পুরোপুরি শেষ হলে যানজটের সমস্যা আর থাকবে না।’